বটিয়াঘাটা সেতুর নিচে এক সময় শোলমারী নদীর প্রশস্ততা ছিল প্রায় ৫০০ ফুট। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ থেকে ২০ ফুটে। তাও আবার ভাটার সময় পানিই থাকে না। জোয়ারের সময় পানি আসে, তখনও হেঁটে যাওয়া যায় এপার থেকে ওপারে। সেতুর পাশের পশ্চিম দিকে তিন কিলোমিটার দূরে জোয়ারের সময়ও পানি থাকে না। 
শুধু শোলমারী নদীই নয়, পলি পড়ে নাব্য হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে খুলনার ১২ নদী। একেবারেই ভরাট হয়ে গেছে ডুমুরিয়ার হামকুড়া। ভাটার সময় হেঁটে পার হওয়া যায় ডুমুরিয়ার ভদ্রা ও আপার সালতা নদী। সংকুচিত হয়ে গেছে তেরখাদার চিত্রা, পাইকগাছার শিবসা নদীর একাংশ, রূপসার আঠারোবেকী, কয়রার কপোতাক্ষ, শাকবাড়িয়া, কয়রা, নগরীর ময়ূর ও ডুমুরিয়ার হরি নদী। বর্ষায় এসব নদী দিয়ে ঠিকমতো নিষ্কাশিত হতে পারে না আশপাশের এলাকার পানি।

এ বাস্তবতায় আজ শুক্রবার নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘আমাদের নদী, আমাদের ভবিষ্যৎ’।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, খুলনায় নদী আছে ৫৮টি। এর মধ্যে অস্তিত্ব সংকটে পড়া ১২ নদীর দৈর্ঘ্য ৩৬৯ কিলোমিটার। এক সময়ের খরস্রোতা শোলমারী নদীর অল্প কিছু অংশে জোয়ারের সময় কিছুটা পানি থাকলেও বাকি অংশ পরিণত হয় সরু খালে। নদীর ১৩ কিলোমিটার জুড়েই এ হাল। স্থানীয় কিছু লোক নদী থেকে মাটি কেটে নিচ্ছে। কেউ কেউ আবার নদীর জমিতে মাটি ভরাট করে দখলের পাঁয়তারা করছে।

পলি পড়ে পুরোপুরি ভরাট হয়ে গেছে ডুমুরিয়ার ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ হামকুড়া নদী। নদীর বুকে বেশির ভাগ এলাকায় এখন চলছে চাষাবাদ। এ উপজেলার ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ ভদ্রা ও ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ আপার সালতা নদী ২০১৫ সালের দিকে পুরো ভরাট হয়ে যায়। ২০১৯ সালে ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ভদ্রা ও আপার সালতা নদী খনন করা হয়। তবে ভদ্রা নদীর বুকে থাকা একাধিক বাঁধ তখন অপসারণ করা হয়নি। খননের দুই বছর পরই আবার ভরাট হয়ে যায়। নদীর বুকে কেউ চাষাবাদ করছে, কেউ কিছু অংশ দখল করে ঘরবাড়ি গড়ে তুলেছে। 
ডুমুরিয়ার ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ হরি নদীও অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। জোয়ারের সময় এটিকে প্রশস্ত নদী মনে হলেও, ভাটার সময় পরিণত হয় খালে। নদীর চর দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা।
পলি পড়ে গভীরতা ও প্রশস্ততা কমেছে ৫৪ কিলোমিটার দীর্ঘ রূপসার আঠারোবেকী ও ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ তেরখাদার চিত্রা নদীর। এ দুটি নদী এর আগে খনন করা হলেও তাতে তেমন 
সুফল মেলেনি। চিত্রা নদী দিয়ে ঠিকমতো পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় ভুতিয়ার বিলে বছরজুড়েই রয়েছে জলাবদ্ধতা।
পাইকগাছা থানার সামনে ভাটার সময় গিয়ে দেখা যায়, শিবসা নদীর বুকে পানি নেই। নদীর দুই তীরে বেশ কিছু ট্রলার ও বার্জ-কার্গো বেঁধে রাখা হয়েছে। পূর্ণ জোয়ার হলে তখন নদীতে এগুলো চলাচল করবে। ৮৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীটির অন্তত ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার জুড়েই এ অবস্থা। 

একই হাল ৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ কয়রার কপোতাক্ষ, ৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ শাকবাড়িয়া ও ৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ কয়রা নদীর। পলি পড়ে এ তিন নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। এর 
ফলে অমাবস্যা-পূর্ণিমা ও নিম্নচাপের সময় উঁচু জোয়ার হলে নদীর পানি তীর ছাপিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করে। 
নগরীসংলগ্ন ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ ময়ূর নদীর অবস্থাও বেহাল। নগরীর অসংখ্য ড্রেনের নোংরা পানি ও ময়লা-আবর্জনা গিয়ে পড়ে এ নদীতে। এ ছাড়া গল্লামারী বাজারের সব ময়লা-আবর্জনাও নদীতে ফেলা হয়। পানি দূষিত হয়ে কালো হয়ে গেছে, প্রতিনিয়ত ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। ২০১৫ সালে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এ নদী খনন করা হলেও মেলেনি সুফল। 
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মো.

বাবুল হাওলাদার বলেন, কয়েকটি নদী খনন করা হলেও কাজ হয় নিম্নমানের। এ ছাড়া খননের পর ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। ফলে তা তেমন কাজে আসেনি। তিনি বলেন, নদীগুলো একেবারে মরে গেলে তখন বিল ডাকাতিয়া, ভুতিয়ার বিলসহ কৃষি জমিতে স্থায়ী জলাবদ্ধতার আশঙ্কা রয়েছে। 
পানি উন্নয়ন বোর্ডের খুলনা অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার সাহা বলেন, শোলমারী ও আপার সালতা নদী খননে একটি প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া নদী রক্ষায় একটি স্টাডি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। এ প্রকল্পের অধীনে একটি পরামর্শক সংস্থা শিগগির মাঠ পর্যায়ে জরিপ শুরু করবে। জরিপ শেষে তারা যে সুপারিশ দেবে, সে অনুযায়ী অন্যান্য নদী খনন করা হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নদ জ য় র র সময় ভ ট র সময় নদ র ব ক

এছাড়াও পড়ুন:

গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বহিষ্কৃত নেতা গ্রেপ্তার

সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে চাঁদা নেওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম ওরফে অপুকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে জানে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।

আরও পড়ুনচাঁদাবাজির অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতাসহ আটক ৫২৬ জুলাই ২০২৫

মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় জানে আলম জড়িত।

গত ১৭ জুলাই গুলশানে আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে নিজেদের ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় দেন আবদুর রাজ্জাক বিন সোলাইমান ওরফে রিয়াদসহ কয়েকজন। তাঁরা শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। সিদ্দিক আবু জাফর ১০ লাখ টাকা চাঁদা দেন। গত শনিবার রাতে চাঁদার বাকি টাকা আনতে যান তাঁরা। ঘটনাস্থল থেকে রাজ্জাকসহ পাঁচজন পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। বাকি চারজন হলেন ইব্রাহিম হোসেন ওরফে মুন্না, সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব ও অপ্রাপ্তবয়স্ক একজন। ঘটনাটিতে গুলশান থানায় মামলা করেছেন সিদ্দিক আবু জাফর। মামলার এজাহারে গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজনের বাইরে অপু নামের একজনসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার হওয়া প্রাপ্তবয়স্ক চার আসামিকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। আর প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় আরেকজনকে টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন আদালত।

আরও পড়ুনপ্রথমে পুলিশ নিয়ে বাসায়, পরে হুমকি দিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা নেন বৈষম্যবিরোধী নেতারা ২৮ জুলাই ২০২৫

রাজ্জাক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। চাঁদাবাজির ঘটনায় জানে আলম ও আবদুর রাজ্জাক উভয়কে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে।

পুলিশ জানায়, শাম্মী আহমেদের বাসা থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা নেওয়ার পর রাজ্জাকসহ কয়েকজন তা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেন। নিজের ভাগের পাঁচ লাখ টাকা রাজ্জাক তাঁর বাড্ডার ভাড়া বাসায় (মেস বাসা) রাখেন। এর মধ্যে ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা গতকাল বৃহস্পতিবার উদ্ধার করে পুলিশ।

আরও পড়ুনচাঁদাবাজির ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৩ জন ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ২ জন বহিষ্কার২৬ জুলাই ২০২৫

এর আগে গত বুধবার ডিএমপির এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাজ্জাকের একটি ভাড়া বাসা থেকে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার ৪টি চেক উদ্ধার করা হয়েছে। এটি বাসাটি পশ্চিম রাজাবাজার এলাকায় অবস্থিত বলে গতকাল জানায় গুলশান থানা–পুলিশ।

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, এই সোয়া দুই কোটি টাকার চেক নেওয়া হয় রংপুর-৬ আসনের (পীরগঞ্জ) আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ‘ট্রেড জোন’ থেকে।

আরও পড়ুনসমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি: আবদুর রাজ্জাকসহ চারজন সাত দিনের রিমান্ডে২৭ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ