নাটোরে বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষে আহত ৫
Published: 14th, March 2025 GMT
নাটোরের গুরুদাসপুরে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে ৫ জন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) রাতে উপজেলার নাজিরপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা নাটোর ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আহতরা হলেন-নাজিরপুর ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক সালেহ আহমেদ বিপুল (৪০), বিএনপি কর্মী হারুন (৩৬) ও জামাল হোসেন (৪৫) এবং জামায়াত কর্মী সোহাগ আহমেদ (৩০) ও কামাল হোসেন (৩২)।
এ ঘটনায় জামায়াত কর্মী সোহাগের বাবা বাদী হয়ে গুরুদাসপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। যুবদল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, তারা হামলার ভয়ে চিকিৎসাও নিতে পারছেন না।
আরো পড়ুন:
জামায়াতের ইফতার মাহফিলে বিএনপির বাধা, মামলা
গাজীপুরে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা বহিষ্কার
গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
নাজিরপুর ইউনিয়ন জামায়াতের আমির হামিদুর রহমান সবুজ বলেন, “নাজিরপুর ইউনিয়ন জামায়াতের ইফতার মাহফিল উপলক্ষ্যে গণসংযোগ করছিলেন জামায়াতকর্মী চিকিৎসক আব্দুর রহিম, সোহাগ আহমেদ ও কামাল হোসেন। এ সময় নাজিরপুর ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক সালেহ আহমেদ বিপুলের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। বিষয়টি সমাধান করা হলেও কিছু সময় পরে বিপুল তার জনবল নিয়ে সোহাগ ও কামালের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এরপরেই দুপক্ষের সংঘর্ষ শুরু হয়। জামায়াতের দুই কর্মী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।”
নাজিরপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক সালেহ আহমেদ বিপুল বলেন, “নাজিরপুর বাজারে আমার বিপুল খেলাঘর নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আমি রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসা করি। জামায়াতের নেতাকর্মীরা যেটা দাবি করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।”
সালেহ আহমেদ বিপুল বলেন, “আমার প্রতিবেশী চিকিৎসক আব্দুর রহিম আমার দোকানের কর্মচারীকে প্রায় সময় মারধর করে। আমি সেই বিষয়ে আব্দুর রহিমের সঙ্গে কথা বলছিলাম। হঠাৎ করেই আমার শার্টের কলার চেপে ধরে মারধর করতে থাকে। ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলে স্থানীয় লোকজন এসে বিষয়টি সমাধান করে দেয়। কিন্তু আব্দুর রহিম তার আক্রোশ মেটানোর জন্য জামায়াতের নেতাকর্মীদের মোবাইল ফোনে ইফতার পার্টির গণসংযোগে বাধা দেওয়ার মিথ্যা কথা বলে ডেকে আনে। তারা প্রায় ২৫০-৩০০ লোক হাতে ধারালো অস্ত্র নিয়ে এসে আমার এবং আমার সঙ্গে থাকা আরও দুই বিএনপি কর্মীর ওপর হামলা চালায়। ঘটনাস্থলেই আমরা ৩ জন রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে বিএনপির অন্যান্য নেতাকর্মীরা আমাদের উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যায়।”
নাটোর/আরিফুল/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ স ল হ আহম দ ব প ল ন ত কর ম ব এনপ য বদল
এছাড়াও পড়ুন:
পাল্টা শুল্কের কারণে ক্রয়াদেশ কম
তৃতীয় দফা আনুষ্ঠানিক আলোচনা চলমান থাকা অবস্থায় আজ শুক্রবার থেকে বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের আরোপ করা ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর হচ্ছে। বাড়তি শুল্কহার শেষ পর্যন্ত কত শতাংশে স্থির হয় সেটি ফয়সালা না হওয়ায় মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান আগামী মৌসুমে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ ২০ শতাংশ পর্যন্ত কম দিচ্ছে। আবার কিছু ক্রেতা প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত ক্রয়াদেশ না দিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
পাল্টা শুল্ক কার্যকরের সময় চলে এলেও তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা আগের মতো উদ্বিগ্ন নন। কারণ, দুই-তিন দিন ধরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও মার্কিন বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকে যে ইঙ্গিত পাচ্ছেন তাতে বাংলাদেশের পাল্টা শুল্ক ভিয়েতনামের কাছাকাছি চলে আসতে পারে। এ ছাড়া প্রতিযোগী দেশ ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, বর্তমানে বসন্ত ও গ্রীষ্মের ক্রয়াদেশ আসার মৌসুম। তবে পাল্টা শুল্কের কারণে পণ্যের দাম বাড়বে। তাতে তৈরি পোশাকের বিক্রি কমবে। সেটি অনুমান করে মার্কিন বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিশ্রুতির চেয়ে ১০-২০ শতাংশ কম ক্রয়াদেশ দিচ্ছে। অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত ক্রয়াদেশ দিতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করার কথা জানিয়েছে। শেষ পর্যন্ত পাল্টা শুল্ক ভিয়েতনাম, ভারত, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার কাছাকাছি নামিয়ে আনা গেলে বাংলাদেশের ভালো সম্ভাবনা তৈরি হবে। তার কারণ চীন থেকে ব্যাপক হারে ক্রয়াদেশ সরবে।
নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘পাল্টা শুল্ক নিয়ে আমরা খুব বেশি ভয় পাচ্ছি না এখন। তবে বাড়তি শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যের চাহিদা কমবে। তাতে স্বাভাবিকভাবেই ক্রয়াদেশও কিছুটা কমতে পারে। বাড়তি শুল্ক কার্যকর ও শুল্কহার নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলে আগামী ৩-৪ মাস হয়তো ক্রয়াদেশ কম থাকতে পারে। শেষ পর্যন্ত পাল্টা শুল্ক ভিয়েতনামের কাছাকাছি নামিয়ে আনতে পারলে ক্রয়াদেশ বাড়বে।’
যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে, সেসব দেশের ওপর গত ২ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক বা রেসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ আরোপ করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্বের ৫৭টি দেশের ওপর বিভিন্ন হারে বাড়তি পাল্টা শুল্ক বসানো হয়। তখন বাংলাদেশের পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক ছিল ৩৭ শতাংশ। তিন মাসের জন্য এ সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প ৮ জুলাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের জন্য পাল্টা শুল্ক হবে ৩৫ শতাংশ, যা কার্যকর হবে ১ আগস্ট থেকে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা বর্তমানে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে পণ্য রপ্তানি করেন। নতুন হার কার্যকর হলে তা ৫০ শতাংশে দাঁড়াবে।
যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা পাল্টা শুল্কহার কমাতে তৃতীয় দফার আলোচনা করতে বর্তমানে ওয়াশিংটনে রয়েছে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল। এই দলটি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) কর্মকর্তাদের সঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনের আলোচনা শেষ করেছে। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
দেশের তৈরি পোশাক খাতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী ইভিন্স গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। তাদের মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির ২৫ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র।
জানতে চাইলে ইভিন্স গ্রুপের পরিচালক শাহ রাঈদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্রয়াদেশ আসার গতি বর্তমানে কিছুটা ধীর। পাল্টা শুল্ক শেষ পর্যন্ত কত দাঁড়ায় তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। তবে বাড়তি এই শুল্ক শেষ পর্যন্ত মার্কিন ক্রেতাদের দিতে হবে। ফলে বাড়তি শুল্ক কার্যকর হলে দেশটিতে বেসিক বা নিত্য ব্যবহার্য তৈরি পোশাকের বিক্রি কমবে। আমরা এসব সস্তা পোশাকই বেশি রপ্তানি করি। ফলে আমাদের রপ্তানি কমতে পারে।’
দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। ১৯৮৪ সালে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি গত অর্থবছরে রপ্তানি করে ৩০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। তার একটি বড় অংশই যায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে।
স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শোভন ইসলাম বলেন, ‘মার্কিন বড় ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক সোর্সিং অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রতিশ্রুত ক্রয়াদেশ ১০-২০ শতাংশ কমিয়ে দিচ্ছে। এপ্রিলে আমরা যেসব ক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে ৫ শতাংশের মতো মূল্যছাড় দিয়েছিলাম, সেটি বসন্ত ও গ্রীষ্ম মৌসুম পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে অনুরোধ করছে।’
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একক শীর্ষ বড় বাজার। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ৮৬৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ১৮ শতাংশের কিছু বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যের ৮৫ শতাংশের বেশি তৈরি পোশাক। এ ছাড়া মাথার টুপি বা ক্যাপ, চামড়ার জুতা, হোম টেক্সটাইল, পরচুলা ইত্যাদি বেশি রপ্তানি হয়।
জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুল্ক নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় বর্তমানে ক্রয়াদেশ কিছুটা কম। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশের পণ্যে শুল্ক কত দাঁড়াচ্ছে তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। এ ছাড়া আমাদের পাল্টা শুল্ক কমবে বলে আমরা আশাবাদী।’