সিপিবির কার্যালয়ের সামনে সতর্ক অবস্থানে পুলিশ, বিকেলে শোকমিছিল
Published: 15th, March 2025 GMT
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রবাসী লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্যের রাজধানীর পুরানা পল্টনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কার্যালয় ঘেরাওয়ের হুমকির প্রতিবাদে সেখানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
শনিবার সকাল থেকেই কার্যালয়ের আশপাশে সমবেত হন দলটির নেতাকর্মীরা। অনেকেই কার্যালয়ের ভেতরেই অবস্থান নেন।
যেকোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সকাল থেকেই কার্যালয়টির সামনে সতর্ক অবস্থান নিতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকশ সদস্যকে। রয়েছে সেনাবাহিনীর টহল।
নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতির মধ্যেই সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে সিপিবি কার্যালয়ের সামনে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। মাগুরায় আট বছর বয়সী শিশু ধর্ষণের প্রতিবাদ এবং অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে এটি ছিল দলটির পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ।
কালো পতাকা উত্তোলন করেন সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম।
ধর্ষণের শিকার মাগুরার শিশুটির মৃত্যুর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, শিশু ধর্ষণের পর মৃত্যুর এই লজ্জা বাংলাদেশ বুকে ধারণ করতে পারছে না। আমাদের দেশে মূল্যবোধের যে অবক্ষয় হয়েছে, সেটি কল্পনাতীত। তনু হত্যাকাণ্ড নিয়ে আমরাই গোটা দেশে জাগরণ সৃষ্টি করেছিলাম, যদিও ওই ঘটনার বিচার এখনও হয়নি। ফেনীতে নুসরাতকে হত্যা করা হয়েছিল, তার জন্যও আমরা পদযাত্রা করে সোনাগাজীতে গিয়েছিলাম।
তিনি বলেন, মাগুরায় শিশুটির ওপর যে বর্বর নির্যাতন করা হয়েছে, সেটি আমাদের গোটা জাতির ওপর কালিমা লেপন করেছে। আজকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এত অবনতি হয়েছে সরকার এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। একটার পর একটা ঘটনা ঘটছে। তাই আমরা মনে করি নারীদের প্রতি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, প্রোপাগান্ডা বিভিন্ন মাধ্যমে, পর্যায়ে দেওয়া হচ্ছে, সেটি আইন করে নিষিদ্ধ করতে হবে।
সিপিবি সভাপতি বলেন, মাগুরায় শিশু ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই এবং দেশের প্রতিটি ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, এই সমাজে এবং পুরুষতান্ত্রিক লালসার শিকার মাগুরার শিশুটির যে মর্মান্তিক মৃত্যু, সেজন্য আমরা দেশব্যাপী শোকদিবসের কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। কর্মসূচি অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে কালো পতাকা উত্তোলন কর্মসূচি হবে। এরপর পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বিকেলে আমাদের শোকমিছিল বের করব।
এর আগে সকাল থেকে সিপিবি নেতাকর্মীরা দলীয় পতাকা হাতে তাদের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। তাদের আশঙ্কা ছিল, সেখানে হামলা হতে পারে। অনেকেই সারারাত সেখানে অবস্থান করেছেন, যাতে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়।
অন্যদিকে বাম ঘরানার প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।
তারা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলমের পদত্যাগ দাবি করেন এবং মাগুরায় ধর্ষণসহ দেশের সব নারী নির্যাতন, হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতার ঘটনায় বিচার চান। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জনগণের, বিশেষত মেয়ে ও নারীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে তাদের অভিযোগ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অবস থ ন র স মন র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।