কয়েক বছর ধরে ঈদে বাড়ি যেতে হেলিকপ্টারের চাহিদা বেড়েছে। ঈদের সময় যাতায়াতের ধকল এড়াতে ও সময় বাঁচাতে অনেক ধনী পরিবার এখন হেলিকপ্টারযোগে যাতায়াত করে থাকে। ধনাঢ্য প্রবাসীরাও দেশে ফিরে হেলিকপ্টারে চড়ে বাড়ি যান। আবার অনেক রাজনৈতিক নেতা নিজ নিজ এলাকায় যেতে হেলিকপ্টার ব্যবহার করেন।

হেলিকপ্টারে চড়ে ঈদে বাড়ি যাওয়াদের সংখ্যা হাতে গোনা হলেও এ নিয়ে সবার মধ্যে বেশ আগ্রহ আছে। তাই হেলিকপ্টার পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও ঈদের সময় বাড়তি ব্যবসার দিকে নজর দেয়। এবারও ঈদ সামনে রেখে হেলিকপ্টারের বুকিং নিতে শুরু করেছে কয়েকটি কোম্পানি।

দেশের হেলিকপ্টার পরিষেবা প্রদানকারী কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, অন্য সময়ের মতো এবারের ঈদে দেশের সব জেলাতেই বর্তমানে হেলিকপ্টার সেবা দেওয়া হবে। সর্বোচ্চ দেড় ঘণ্টার মধ্যে রাজধানী ঢাকা থেকে দেশের অন্য যেকোনো প্রান্তে যাত্রী পৌঁছাতে পারে তারা। আসনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতি ঘণ্টার জন্য সর্বনিম্ন ৮৫ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ সোয়া দুই লাখ টাকায় হেলিকপ্টার ভাড়া নেওয়া যায়।

গত বছর ঈদুল ফিতরের সময় অনেকেই হেলিকপ্টারে করে ঢাকা থেকে গ্রামে গেছেন। এ বছরও বাড়তি চাহিদা থাকবে বলে প্রত্যাশা তাদের। তবে গত বছরের তুলনায় এবার হেলিকপ্টারের সংখ্যা কিছুটা কমেছে; বিপরীতে বেড়েছে ভাড়া।

ঈদের বুকিং

হেলিকপ্টার ব্যবসায় সম্পৃক্তদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সাধারণত ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ১৫ রোজার পর থেকে হেলিকপ্টারের বুকিং শুরু হয়। তবে বুকিংয়ের চাপ বাড়ে শেষ ১০ দিনে। ঈদের সময় বাড়িতে যেতে যেমন চাহিদা থাকে; আবার বাড়ি থেকে ফেরার জন্যও বুকিংয়ের বেশ চাহিদা থাকে।

মেঘনা এভিয়েশনের ব্যবস্থাপক মীর মোহাম্মদ ইফতেখারুল সাদেক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ঈদের যাতায়াতের জন্য বুকিং তুলনামূলক কম। ১৫-১৬ রোজার পর থেকে বুকিং বাড়বে বলে আশা করছি। এবার ঈদের দিন ছাড়া অন্য যেকোনো দিন আমাদের সেবা চালু থাকবে।’

দেশে ২০১৩ সাল থেকে হেলিকপ্টার পরিষেবা দিচ্ছে মেঘনা এভিয়েশন। এবারের ঈদে প্রতিষ্ঠানটি তাদের ছয়টি হেলিকপ্টার দিয়ে সেবা দেবে। কোম্পানিটি প্রতি মাসে ৭০-৮০টি ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে।

ইমপ্রেস এভিয়েশনের হেড অব গ্রাউন্ড অপারেশন মো.

ইমরান হোসেন বলেন, গত বছরের মতো এবারও ঈদে হেলিকপ্টারে যাতায়াতের চাহিদা রয়েছে। তবে এ বছর কয়েকটি কোম্পানির হেলিকপ্টারে পরিবহন কার্যক্রম বন্ধ বা সীমিত হয়েছে। এ কারণে কিছুটা সংকট থাকবে।

ভাড়া কত

সাধারণত হেলিকপ্টারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয় সিট বা আসনসংখ্যার পাশাপাশি প্রতি ঘণ্টার ভিত্তিতে। চার সিটের হেলিকপ্টারের ভাড়া এক ঘণ্টার জন্য ৮৫ হাজার টাকা। ছয় সিটের ভাড়া ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। আবার সাত সিটের ডাবল ইঞ্জিনের ভাড়া সর্বোচ্চ সোয়া দুই লাখ টাকা। যাত্রীরা সব মিলিয়ে ৪০-৫০ কেজি পর্যন্ত ওজনের মালামাল সঙ্গে নিতে পারেন। তবে ব্যাগ বা লাগেজের আকার ছোট হতে হয়।

কোম্পানিভেদে ভাড়ায় পার্থক্য রয়েছে। যেমন মেঘনা এভিয়েশনের চার সিটের সিঙ্গেল বা একক ইঞ্জিনের হেলিকপ্টারের প্রতি ঘণ্টার ভাড়া ৮৫ হাজার টাকা। আর ভূমিতে অপেক্ষমাণ ভাড়া ঘণ্টায় ৫ হাজার টাকা। মেঘনার ছয় সিটের বেল ৪০৭ হেলিকপ্টারের ভাড়া ঘণ্টায় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। আর ভূমিতে অপেক্ষমাণ ভাড়া ঘণ্টায় ৭ হাজার টাকা।

স্কয়ার এয়ারের সাতজন যাত্রী বহনের ক্ষমতাসম্পন্ন দুই ইঞ্জিনের হেলিকপ্টারের ভাড়া প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা। কোম্পানিটির চারজন যাত্রী বহনে সক্ষম ইঞ্জিনের হেলিকপ্টারের ভাড়া প্রতি ঘণ্টায় ৭৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া হেলিকপ্টারের প্রতি ঘণ্টায় ভূমিতে অপেক্ষমাণ মাশুল ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা।

এ ছাড়া কয়েকটি কোম্পানির রয়েছে জয়রাইড বা আকাশে আনন্দযাত্রা। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আকাশে ঘুরিয়ে আনা হয় এ অফারে। ঈদসহ নানা উৎসব পার্বণে এই জয়রাইড অফারের গ্রাহক বেড়ে যায়। যেমন ঢাকা থেকে গাজীপুর ও সোনারগাঁর মেঘনায় এ ধরনের দুটি অফার রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভাড়ার হিসাব অনেকটা একই। ন্যূনতম এক ঘণ্টা জয়রাইডের ভাড়া দিতে হবে।

অনেক সময় হেলিকপ্টার কোম্পানি ১৫-২০ মিনিটের জয়রাইড অফার দেয়। এ ধরনের অফারের প্রচারণা সাধারণত ঈদের ছুটির আগমুহূর্ত থেকে চালানো হয়। এবারও কয়েকটি হেলিকপ্টার কোম্পানি এমন পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে।

গতবারের চেয়ে ভাড়া কিছু বেশি

গত বছরের চেয়ে এ বছর ভাড়া কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। এ ভাড়া ১০-২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, হেলিকপ্টার ব্যবসা অতটা লাভজনক না। হ্যাঙ্গার (পার্কিং করার স্থান) ভাড়া অনেক বেশি। এ ছাড়া যাত্রীভাড়ার ৪৫ শতাংশই দিতে হয়ে শুল্ক-কর হিসেবে।

যারা সেবা দিচ্ছে

এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) তথ্য অনুসারে, দেশে ১৩টির মতো বেসরকারি কোম্পানি হেলিকপ্টার বাণিজ্যিকভাবে সেবা দিচ্ছে। তাদের ৩০টির মতো হেলিকপ্টার আছে। এসব কোম্পানির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইমপ্রেস এভিয়েশন, স্কয়ার এয়ার লিমিটেড, মেঘনা এভিয়েশন, বসুন্ধরা এয়ারলাইনস, সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইনস, বিআরবি এয়ার, বেক্সিমকো এয়ার, বিসিএল এভিয়েশন, আর অ্যান্ড আর এভিয়েশন, বাংলা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস প্রভৃতি। কোম্পানিগুলোর মধ্যে কয়েকটির কার্যক্রম আপাতত বন্ধ আছে।

দেশে এক ইঞ্জিন ও দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট—এই দুই ধরনের হেলিকপ্টার রয়েছে। এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট হেলিকপ্টারে সাধারণত চার বা ছয়টি আসন থাকে। আর দুই ইঞ্জিনের হেলিকপ্টারে সাতজন পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করা যায়। যাত্রীর আসনসংখ্যার ওপরে ভিত্তি করে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। কিছু কিছু কোম্পানি কিছু পরিষেবার আলাদাভাবে টাকা নেয়।

বুকিং দিতে যা লাগে

হেলিকপ্টারে ভ্রমণের অন্তত দুই দিন আগে যাত্রীদের বুকিং দিতে হয়। অবশ্য ঈদের সময় আরও আগে থেকেই বুকিং দেন যাত্রীরা। বুকিংয়ের সময় যাত্রীর প্রাথমিক তথ্য ও জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা পাসপোর্টের তথ্য প্রয়োজন হয়। যাত্রীর এসব তথ্য দিয়ে আবার বেবিচকের কাছ থেকে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি নিতে হয়। তবে জরুরি প্রয়োজন যেমন, মুমূর্ষু রোগীদের ক্ষেত্রে এক ঘণ্টার নোটিশে হেলিকপ্টার সার্ভিস নেওয়ার সুযোগও রয়েছে।

রাজধানী ঢাকায় হেলিকপ্টার ওঠানামা পরিচালিত হয় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে। তবে ঢাকা শহরের বাইরের যেকোনো সুবিধাজনক জায়গা থেকে হেলিকপ্টারে উড্ডয়ন-অবতরণ করা যায়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ২৫ হ জ র ট ক ঈদ র সময় স ধ রণত গত বছর পর চ ল র জন য ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির তথ্য

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত ভর্তি নীতিমালা ২০২৫-২৬ অনুযায়ী একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক শাখায় মোট ১ হাজার ৯০০ ছাত্রছাত্রী ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা—

বাংলা মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য:

১. বিজ্ঞান বিভাগ:

সাধারণ শিক্ষার্থীর জিপিএ ৫.০০, নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী জিপিএ ৪.৭২, বিজিবির শিক্ষার্থী জিপিএ ৪.৫০।

আসনসংখ্যা রয়েছে: ছাত্রী-প্রভাতি- ৪৪০টি, ছাত্র-দিবা- ৪৪০টি।

২. ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ:

সাধারণ শিক্ষার্থী জিপিএ ৪.০০, নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী জিপিএ ৩.৩৩, বিজিবির শিক্ষার্থী জিপিএ ৩.০০।

আসনসংখ্যা রয়েছে: ছাত্রী-প্রভাতি- ১৫০টি, ছাত্র-দিবা- ১৫০টি।

৩. মানবিক বিভাগ:

সাধারণ শিক্ষার্থী জিপিএ ৩.৭৮, নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী জিপিএ ৩.০০, বিজিবির শিক্ষার্থী জিপিএ ৩.০০।

আসনসংখ্যা রয়েছে: ছাত্রী-প্রভাতি- ৯০টি, ছাত্র-দিবা- ৯০টি।

আরও পড়ুননটর ডেম কলেজ: একাদশে ভর্তিতে যোগ্যতার শর্ত প্রকাশ, ও লেভেল শিক্ষার্থীদের আবেদন নয়, আসন ৩২৯০টি২৬ জুলাই ২০২৫ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য:

১. বিজ্ঞান বিভাগ:

সাধারণ শিক্ষার্থীর জিপিএ ৫.০০, নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী জিপিএ ৪.৭২, বিজিবির শিক্ষার্থী জিপিএ ৪.৫০।

আসনসংখ্যা রয়েছে: ছাত্রী-প্রভাতি- ২০০টি, ছাত্র-দিবা- ২০০টি।

২. ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ:

সাধারণ শিক্ষার্থী জিপিএ ৪.০০, নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী জিপিএ ৩.৩৩, বিজিবির শিক্ষার্থী জিপিএ ৩.০০।

আসনসংখ্যা রয়েছে: ছাত্রী-প্রভাতি- ৭০টি, ছাত্র-দিবা- ৭০টি।

আরও পড়ুনসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের ৩৪০০০ শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ২৯ জুলাই ২০২৫দরকারি তথ্য—

১. আবেদনের সময় থানা ‘লালবাগ’ নির্বাচন করতে হবে।

২. আবেদন করা যাবে: ১১ আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত।

৩. ভর্তি: ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত।

৪. ক্লাস শুরু হবে: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ থেকে।

৫. অনলাইনে আবেদনের পদ্ধতি: আবেদন ফি ২২০ টাকা জমা দেওয়ার পর আবেদনকারীকে নির্ধারিত ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করতে হবে ।

৬. বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীকে পছন্দক্রমের তালিকায় অত্র কলেজকে অবশ্য ১ নম্বরে রাখতে হবে।

৭. বিশেষ নির্দেশনা: ১০ আগস্টের আগে নিজ নিজ ইউনিট হতে বিজিবি সন্তানের প্রত্যয়নপত্র প্রতিষ্ঠানের ১০১ নম্বর কক্ষে বা প্রতিষ্ঠানের ই-মেইলে ([email protected]) পাঠাতে হবে। প্রত্যয়নপত্র প্রাপ্তি সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক SQ কোটা নিশ্চায়ন করা হবে। প্রত্যয়নপত্রে অবশ্যই শিক্ষা বোর্ডের নাম, এসএসসি রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও মোবাইল ফোন নম্বর উল্লেখ থাকতে হবে। নিশ্চায়ন ব্যতীত SQ কোটায় নির্বাচিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

*বিস্তারিত তথ্য জানতে ওয়েবসাইট:

আরও পড়ুনভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ: একাদশে ভর্তিতে যোগ্যতার শর্ত প্রকাশ, আসন ২৩৯০টি২৯ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির তথ্য
  • সংরক্ষিত নারী আসনসংখ্যা বৃদ্ধি ও সরাসরি নির্বাচনের দাবি মহিলা পরিষদের
  • একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরু, চট্টগ্রামে কোন কলেজে কত আসন