প্রতিবছরের মত এবারও হবিগঞ্জের গরীব অসহায় মানুষের মাঝে ইফতারসামগ্রী বিতরণ শুরু করেছে দেশের অন্যতম রপ্তানিকারক শিল্পপ্রতিষ্ঠান সায়হাম গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়সলের উদ্যোগে মাধবপুর-চুনারুঘাট উপজেলার ২০ হাজার পরিবারের মাঝে এসব খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।

আজ রোববার সকালে সায়হাম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মো.

ঈশতিয়াক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. শাহজাহান খাদ্যসামগ্রী বিতরণের উদ্বোধন করেন। পরে তারা মাধবপুর উপজেলার ধর্মঘর, চৌমুহনী, বহরা ইউনিয়নে ইফতারসামগ্রী বিতরণ করেন।

জানা গেছে, হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা ও চুনারুঘাট উপজেলার  ১০টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভার গরীব অসহায় মানুষের মাঝে ইফতারসামগ্রী বিতরণ করা হবে।

মাধবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শামসুল ইসলাম কামাল বলেন, হবিগঞ্জের দুই উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভার অসহায়, অস্বচ্ছল লোকজন রয়েছেন। তাদের ইফতারসামগ্রীর অভাব রয়েছে। টাকার অভাবে এসব এলাকার মানুষ ভালোভাবে খাবার কিনতে পারেন না। তাদের কথা চিন্তা করে সায়হাম গ্রুপের চেয়ারম্যান হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মো. ফয়সলের উদ্যোগে এসব ইফতারসামগ্রী বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিটি গ্রামের গরীব অসহায় মানুষের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী, সবার ঘরে ঘরে ইফতারসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

সায়হাম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ঈশতিয়াক বলেন, শুরুর পর থেকেই চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. ফয়সলের অনুপ্রেরণায় প্রতিষ্ঠানটি আর্তমানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। ঈদ, পূজা, দুর্যোগ দুর্বিপাকে যে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সায়হাম গ্রুপ সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি এলাকার মসজিদ, মন্দির, চিকিৎসা, এতিমখানাসহ দলমত নির্বিশেষে সব কল্যাণমুখী কাজ করে যাচ্ছে। আজীবন আমরা মানুষের পাশে থেকে সেবা করে যেতে চাই।

শিল্পগ্রুপটির পরিচালক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. শাহজাহান বলেন, সায়হামের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, এলাকাবাসীর উন্নয়ন। এই মহৎ বাসনা থেকে সায়হাম যেকোনো পরিস্থিতিতে মানুষের কল্যাণ ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের প্রয়াস সবসময় অব্যাহত থাকবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল র ম ধবপ র

এছাড়াও পড়ুন:

জামিন দেওয়াকে কেন্দ্র করে আদালতে হাতাহাতি, স্টেনোগ্রাফার আহত

লক্ষ্মীপুরে আদালতে একটি জামিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে একজন বিচারকের আদালত বর্জন করেছে আইনজীবীরা। এ সময় আইনজীবীদের সাথে আদালতের কর্মচারীদের হাতাহাতি ও এজলাসে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এতে আহত হন ওই এজলাসের স্টেনোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান। 

রবিবার (১৫ জুন) দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আদালত বর্জন করায় ভোগান্তিতে পড়েন বিচারপ্রার্থীরা। 

জানা গেছে, রায়পুর প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আহম্মেদ কাউসার উদ্দিন জামান (৩৫) এর বিরুদ্ধে গত ৬ জুন সদর থানায় চুরির মামলা দায়ের করেন তারই প্রতিবেশি জেলা জজ আদালতের আইনজীবী আবু তৈয়ব। মামলায় আরও দুইজনকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় আসামি কাউসার ও রুবেল গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন। এরপর গত ১০ জুন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক এম সাইফুল ইসলাম তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। এ নিয়ে তাৎক্ষণিক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দসহ আইনজীবীরা। 

মামলায় অভিযোগ আনা হয়, বাদী এবং আসামিদের মধ্যে পূর্ব বিরোধ রয়েছে। ৫ জুন দিবাগত গভীর রাতে আসামিরা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বাদীর ভবনের সামনে থাকা একটি লোহার গেট কেটে নিয়ে এবং গেটের পিলার ভেঙে একটি পিক-আপ গাড়িতে করে রায়পুরের দিকে নিয়ে যায়। রায়পুর বাসাবাড়ি এলাকায় গেলে পিকআপ গাড়িটি টহল পুলিশ আটক করে। পরে গাড়িটি জব্দ ও চালক রুবেলকে আটক করে পুলিশ। মামলায় বাদী আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

আদালত সূত্র জানায়, গত ৯ জুন আসামিদের জামিন প্রার্থণা করা হয়। এতে আসামিপক্ষ উল্লেখ করেন, মামলার বাদি আইনজীবী হওয়ায় আদালতে তাদের পক্ষে কোন আইনজীবী জামিন শুনানিতে অংশ নিতে ইচ্ছুক নয়। আসামিরা তাদের পক্ষে আইনজীবী না পেয়ে জামিন শুনানির জন্য লক্ষ্মীপুর লিগ্যাল এইড অফিসে আইনি সহায়তা চান। সেখান থেকে দুইজন আইনজীবীকে শুনানি করতে বলা হলেও তারা অন্য আইজীবীদের দ্বারা হেনস্তার ভয়ে জামিন শুনানিতে অংশ নেননি। অন্যদিকে বাদী পক্ষের আইনজীবী আসামিদের বিরুদ্ধে জামিনের বিরোধিতা করেন। 

আদালত সূত্র আরও জানায়, আসামিরা ৯ জুন জামিনের জন্য আবেদন করলে পরদিন ১০ জুন নথি প্রাপ্ত সাপেক্ষে জামিন শুনানির জন্য রাখা হয় এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। 

বিষয়টি নিয়ে আদালতের পর্যালোচনায় উঠে আসে, ঈদুল আজহার বন্ধে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এবং গ্রেপ্তারের পর থেকে আসামিরা জামিনের শুনানির সুযোগ পাননি। চারদিন তাদের হাজতবাস হয়েছে। ৬ জুন আসামি গ্রেপ্তার হলেও বাদী একজন আইনজীবী হওয়ায় আসামিরা জামিন শুনানির জন্য কোন আইনজীবী পাননি এবং লিগ্যাল এইড অফিসের আইনজীবীরাও শুনানিতে অংশ নিতে অনীহার বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ায় ১৪ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটিতে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় জামিন অযোগ্য ধারায় গুরুতর অভিযোগ না থাকায় উভয় পক্ষের শুনানি অন্তে উভয় দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হলো। 

আদালত আসামিদের রিমান্ড না মঞ্জুর করে চারদিনের হাজতবাস ও ঈদ বিবেচনা করে আসামি কাউসার ও রুবেলকে ১০০ টাকা বন্ডে একজন গণ্যমান্য ব্যক্তির জিম্মায় জামিন মঞ্জুর করেন। তাদের জামিন হওয়ায় পর থেকেই আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করে। এ ঘটনায় তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে বিচারকের অপসারণের দাবি জানান।

ঈদের বন্ধ শেষে রবিবার (১৫ জুন) আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়। আইনজীবী সমিতি বৈঠক করে ওই আদালতের বিচারক এম সাইফুল ইসলামের আদালতের বর্জনের ঘোষণা দেন। এদিন সকাল থেকে ওই বিচারকের কক্ষে বিচারপ্রার্থীরা এসে উপস্থিত হয়। 

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বিচারপ্রার্থী জানান, আদালতের বিচারক এজলাসে বসা ছিলেন। এ সময় ৭-৮ জন আইনজীবী কক্ষে ঢুকে আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন। এতে হট্টগোল দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিচারক আদালত কর্মচারীদের দরজা বন্ধ করে দিতে বলেন। এ সময় আইনজীবী ও কর্মচারীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আহত হন এজলাসের স্টেনোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান। এতে বিচারকার্য সম্পন্ন না করেই এজলাস থেকে নেমে যান বিচারক। 

আহত আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘‘আইনজীবীরা হট্টগোল করায় বিচারকের নির্দেশে আমি দরজা বন্ধ করতে গেলে আমার ওপর আইনজীবীরা হামলা করে। এতে আমার বাম চোখের পাশে রক্তাক্ত জখম হয়।’’  

উপস্থিত আইনজীবীদের মধ্যে অ্যাডভোকেট আশিকুর রহমান জানান, কয়েকজন আইনজীবী এজলাসে গিয়ে আদালত বর্জনের বিষয়টি জানিয়ে দিতে গিয়েছেন। আদালত কর্মচারীরা উল্টো তাদের ওপর হামলা করেছে। এতে তিনি নিজেও আহত হন।

ঢাকা/লিটন/টিপু 

সম্পর্কিত নিবন্ধ