দুবার বিয়ের অনুষ্ঠান করেও মেয়েকে বাঁচাতে পারলেন না বাবা
Published: 16th, March 2025 GMT
রাজমিস্ত্রি আবদুল আলিম দেখেশুনে ভালো ঘরে মেয়ে বিয়ে দিয়েছিলেন। প্রথমবার বিয়ের আয়োজন নিয়ে অসন্তোষ ছিল মেয়ের শ্বশুরবাড়ির। তাই দ্বিতীয়বার ২০০ অতিথি দাওয়াত করে অনুষ্ঠান করেন তিনি। কিন্তু এরপরও আদরের মেয়েকে বাঁচাতে পারলেন না তিনি। বিয়ের মাত্র তিন মাসের মাথায় লাশ হয়ে ফিরে এল তাঁর বুকের ধন মারজান আক্তার (১৮)।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে ১২ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গতকাল শনিবার রাতে মারজান মারা যান। অভিযোগ উঠেছে, স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি নির্যাতন করে মারজানকে হত্যা করেছেন। এ ঘটনায় শনিবার রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে গৃহবধূর শ্বশুর মো.
মারজানের বাবা আবদুল আলিমের বাড়ি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার কাজীরহাট আলমপুর এলাকায়। স্বামী অভিযুক্ত ছায়েদুর রহমান (২৭) এখনো পলাতক রয়েছেন। তাঁদের বাড়ি ফেনী সদর উপজেলার হাজীরবাজার দক্ষিণ গোবিন্দপুর গ্রামে।
পুলিশ জানায়, গত বছরের ৮ ডিসেম্বর মারজাহান আক্তারের সঙ্গে পারিবারিকভাবে ছায়েদুর রহমানের বিয়ে হয়। বিয়ের আয়োজন মনমতো না হওয়ায় পুনরায় অনুষ্ঠান করার জন্য শ্বশুর মো. সাহাব উদ্দিন ও শাশুড়ি বিবি হাজেরা মারজাহানের পরিবারকে চাপ দিতে থাকেন। এ জন্য মারজান আক্তার নিয়মিত নির্যাতনের শিকার হতেন। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে পুনরায় ২০০ জন বরযাত্রী নিয়ে আরও একটি অনুষ্ঠান করেন মারজাহানের বাবা। পরবর্তী সময়ে মেয়ের শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে তিন লাখ টাকা, আসবাবপত্র ও ৫ ভরি স্বর্ণালংকার দাবি করা হয়।
মারজাহানের রাজমিস্ত্রি বাবার পক্ষে এত টাকার জিনিস দেওয়া অসম্ভব ছিল। যৌতুক না দেওয়ায় আবারও নির্যাতন শুরু হয় মারজানের ওপর। একপর্যায়ে ৪ মার্চ দুপুরে মারজাহানের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছেঁকা দিলে তিনি গুরুতর আহত হয়ে জ্ঞান হারান। এই দিন দুপুরে তাঁকে ফেনীর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ১২ দিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গতকাল শনিবার রাতে মারজাহানের মৃত্যু হয়।
মারজাহানের মা ফরিদা আক্তার বলেন, ‘মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে দুই দফা বিয়ের অনুষ্ঠান করা হয়। এরপর চাহিদামতো যৌতুক না পেয়ে আমার মেয়েকে পাশবিক নির্যাতন করে হত্যা করেছে। আমি সকল হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
মারজাহানের বাবা আবদুল আলিম বলেন, এ ঘটনায় মারজানের স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ির নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয়ের আরও তিন থেকে চারজনের বিরুদ্ধে ফেনী মডেল থানায় মামলা করা হয়েছে।
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সামছুজ্জামান বলেন, এর আগে মারজাহানকে নির্যাতনের ঘটনায় ১২ মার্চ তাঁর বাবা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে থানায় একটি মামলা করেছেন। যেহেতু মারজাহান মারা গেছেন, সেহেতু মামলাটি হত্যা মামলার রূপান্তরিত হবে। মামলার এজাহারের ২ নম্বর আসামি নিহত গৃহবধূর শ্বশুর মো. সাহাব উদ্দিনকে রোববার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি