পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোয় ইউক্রেনকে সদস্য করা হবে না এবং যেকোনো শান্তি আলোচনায় কিয়েভ নিরপেক্ষ ভূমিকায় থাকবে—এমন নিশ্চয়তা চায় মস্কো। রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার গ্রুশকো এ কথা বলেছেন।

ইউক্রেনের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তি প্রসঙ্গে রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশটির সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা চাই, লৌহদৃঢ় নিরাপত্তা নিশ্চয়তা এই চুক্তির অংশ হোক।’

এই নিশ্চয়তার একটি অংশ হতে পারে ইউক্রেনের নিরপেক্ষ অবস্থান। ন্যাটো জোটের দেশগুলোর পক্ষ থেকে কিয়েভের সদস্য হওয়ার চেষ্টা প্রত্যাখ্যান করতে হবে, এমনটাই মন্তব্য করেন রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী।

আগামী দিনগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন টেলিফোনে কথা বলতে পারেন। ইউক্রেনে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধের রাশ টানতে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে কথা বলবেন দুই নেতা। এর আগে রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশটির এমন চাহিদার কথা জানান।

রাশিয়াকে ৩০ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন।

আরও পড়ুনরাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি নিয়ে শিগগির কথা বলবেন ট্রাম্প-পুতিন৮ ঘণ্টা আগে

অন্যদিকে পুতিন বলেছেন, তিনিও যুদ্ধবিরতির পক্ষে, তবে শান্তির পথে বেশকিছু কঠিন শর্ত যুক্ত করতে চায় তাঁর দেশ।

এ বিষয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অভিযোগ, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ‘ধ্বংস করতে’ চাইছেন পুতিন।

মস্কোয় গত বৃহস্পতিবার পুতিনের সঙ্গে দেখা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। সিএনএনকে স্টিভ উইটকফ বলেন, ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে টেলিফোনে কথা হতে পারে। সম্ভবত এ সপ্তাহেই সেটা হবে।

নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় গেলে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে উদ্যোগ নেবেন তিনি। নতুন প্রশাসনের ‘প্রথম দিনেই’ এটা হতে পারে।

ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার এক মাসের কম সময়ের মধ্যে পুতিনের সঙ্গে ৯০ মিনিট কথা বলেছেন। যুদ্ধ বন্ধে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরুর বিষয়ে কথা বলেন তাঁরা।

আরও পড়ুনইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পুতিনের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে: ট্রাম্প১৫ মার্চ ২০২৫

রুশবাহিনী ইউক্রেনের যেসব ভূমি দখলে রেখেছে, সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সেই বিষয়টি কীভাবে সামাল দেওয়া হবে, এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেছেন স্টিভ উইটকফ। বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূমি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে রাশিয়া।

আরও পড়ুনরাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: কীভাবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হতে পারে১৪ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন য দ ধ ইউক র ন র

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামে বছর শেষে বাড়ছে ডেঙ্গু, কমেছে চিকুনগুনিয়া

চট্টগ্রামে বছরের শেষে এসে আবারও বাড়ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম দুই দিনেই ৮৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা একটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪১ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গত বছরও এই সময়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েছিল। এদিকে বছরের শেষ দিকে এসে চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ কমেছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল শূন্য।

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া—দুটিই মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। দুটিই এডিস মশার কামড়ে হয়। এডিসের বংশ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে বৃষ্টি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, নভেম্বরের শুরুতে লঘুচাপের কারণে বৃষ্টি হতে পারে। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

চট্টগ্রামে বছরের শুরু থেকে গতকাল বেলা একটা পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৯২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে গত অক্টোবর মাসে। পুরো জেলায় ওই মাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯৯০ জন। এর আগের মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৩৫। চলতি নভেম্বর মাসে এ সংখ্যা নির্ভর করছে বৃষ্টির ওপর। কারণ, শীত শুরু হলে এডিসের বংশবৃদ্ধির আশঙ্কা কম। তবে বৃষ্টি হলে সেটি বাড়তে পারে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।

এদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত কমেছে। গতকাল পর্যন্ত জেলায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬৬৯। তবে চিকুনগুনিয়ায় মাসভিত্তিক তথ্য দেয়নি সিভিল সার্জন কার্যালয়। যদিও প্রতিদিনের আক্রান্তের হিসাব দেয় তারা। প্রাথমিক হিসাবে, গত সেপ্টেম্বর মাসে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭০৪। গত অক্টোবর মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১২১ জন। এ মাসে কেবল একজন।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।

এদিকে গত বছরের তুলনায় এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের উপসর্গগুলোও কিছুটা ভিন্ন বলে জানা গেছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৪১ জন রোগী জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ জন ভর্তি হয়েছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) এবং ১২ জন ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।এ এস এম লুৎফুল কবির, মেডিসিন বিভাগের প্রধান, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা গেছে। তবে এ বছর যাঁরা আসছেন, তাঁদের মধ্যে শক সিনড্রোম বেশি। পাশাপাশি ডায়রিয়ার উপসর্গও আছে। শক সিনড্রোম হলে রোগীর রক্তচাপ বোঝা যায় না। এই দুটি উপসর্গ গুরুতর। কারণ, সময়মতো ফ্লুইড (তরল খাবার) না পেলে রোগীর অবস্থা আরও গুরুতর হতে পারে।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান এ এস এম লুৎফুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।’

চলতি বছর এপ্রিল থেকে মোটামুটি বৃষ্টি হচ্ছে। জুনে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হলেও পরের মাসগুলোয় স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়। আর থেমে থেমে বৃষ্টির সঙ্গে গরম কিন্তু কমেনি। এই বৃষ্টি ও উচ্চ তাপমাত্রা চলতি বছর ডেঙ্গুর বিস্তারে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন কীটতত্ত্ববিদেরা। তবে সংক্রমণ কমাতে সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

নগরের ২৫টি এলাকাকে ডেঙ্গু ও ২৫টি এলাকাকে চিকুনগুনিয়ার জন্য হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এর মধ্যে বন্দর, ইপিজেড, হালিশহর, কোতোয়ালি, বায়েজিদ, পাহাড়তলী, কাট্টলী, খুলশী, ডবলমুরিং, লালখান বাজার, আগ্রাবাদ, চান্দগাঁও, দেওয়ানহাট, আন্দরকিল্লা, মুরাদপুর, সদরঘাট—এসব এলাকায় ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এসব এলাকায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সরফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিশেষ দল করা হয়েছে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার জন্য। নিয়ম করে এলাকা ভাগ করে রুটিন অনুযায়ী ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।’

চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত বৃষ্টি হওয়ার ২৮ দিন পর্যন্ত মশার প্রকোপ থাকে বলে ধারণা করা হয়। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এ মাসে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এতে ডেঙ্গু বাড়তে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ