সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে ১০ নম্বর সাইট এলাকায় সরকারি প্রায় ১৫০ একর জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে। দুই বছর আগে অভিযান চালিয়ে তাঁর দখলে থাকা জমি উদ্ধার করেছিল স্থানীয় প্রশাসন। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে গত ৫ আগস্ট বিকেলে তিনি আবার সেই জমি দখলে নেন।

সাহাব উদ্দিন উপজেলা বিএনপির সভাপতির পাশাপাশি জেলা বিএনপির সহসভাপতিও। তাঁর দখলে থাকা জমি তিনি পাথর ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দিয়েছেন। তবে সাহাব উদ্দিন সরকারি জমি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

স্থানীয় লোকজন জানান, দেশের সবচেয়ে বড় পাথর কোয়ারি ভোলাগঞ্জে। কোয়ারির পাশে সরকারের অন্তত ২৭৫ একর উন্মুক্ত জায়গা আছে। ২০০১ সালের দিকে এসব জায়গার দখল নেন স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন। এর মধ্যে সাহাব উদ্দিনের দখলে চলে যায় অর্ধেকের বেশি জমি। পাশে কোয়ারি থাকায় দখলকারীরা জায়গাগুলো পাথর ভাঙার মেশিনের মালিকদের কাছে ভাড়া দেন।

স্থানে স্থানে পাথর ভাঙার মেশিনে অনবরত পাথর ভাঙার কাজ চলছে। ছড়িয়ে পড়া পাথরের গুঁড়োতে চারপাশ ধূসর হয়ে গেছে। মেশিনের মালিকেরা পাথর ভাঙার পাশাপাশি পাথর স্তূপ করে রাখছেন।

স্থানীয় প্রশাসন জানায়, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ভোলাগঞ্জে ১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি স্থলবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু করে তৎকালীন সরকার। পাশাপাশি পর্যটনের উন্নয়নে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে আরেকটি প্রকল্প হাতে নেয়। এ অবস্থায় দুই বছর আগে সরকারি জমি থেকে দখলদারদের উচ্ছেদে অভিযান চালায় স্থানীয় প্রশাসন। তবে ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে আবার সেই জায়গা দখল করা হয়।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সরেজমিন দেখা যায়, ১০ নম্বর সাইট এলাকায় যত দূর চোখ যায় উন্মুক্ত প্রান্তর। স্থানে স্থানে পাথর ভাঙার মেশিনে অনবরত পাথর ভাঙার কাজ চলছে। ছড়িয়ে পড়া পাথরের গুঁড়োতে চারপাশ ধূসর হয়ে গেছে। মেশিনের মালিকেরা পাথর ভাঙার পাশাপাশি পাথর স্তূপ করে রাখছেন।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি জায়গা থেকে দখলকারদের উচ্ছেদে শিগগিরই অভিযান চালানো হবে। জায়গাটি নিয়ে মামলা ছিল। রায় সরকারের পক্ষে গেছে। দ্রুত রায় পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দখল-উচ্ছেদ-দখল

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পশ্চিমে ১১২ একর ও পূর্বে প্রায় ১৫০ একর খাসজমি আছে। এসব জমির বেশির ভাগই অবৈধভাবে ভোগ দখল করে আসছিলেন বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিন। তবে সরকার সেখানে স্থলবন্দর নির্মাণ ও পর্যটনের উন্নয়নের উদ্যোগ নিলে ২০২৩ সালে জায়গা দখলমুক্ত করে প্রশাসন। এরপর পশ্চিম অংশে স্থলবন্দর নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ৫২ দশমিক ৩০ একর জমি ইজারা নেয় বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। গত বছরের জুন মাসে স্থলবন্দরের নির্মাণকাজ শুরু করে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চলতি বছরের জুলাই মাসে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরুর কথা রয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, স্থলবন্দর নির্মাণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যখন জমি ইজারা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে, তখন সাহাব উদ্দিনের ব্যবস্থাপক হিসেবে পরিচিত নির্মল কুমার সিংহ ও তাঁর ভাই উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন করেন। পরে আদালত সরকারের পক্ষে রায় দিলে জায়গাটি প্রায় ৮ কোটি টাকায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে স্থলবন্দর নির্মাণে ইজারা দেওয়া হয়।

সরকারি জায়গা থেকে দখলকারদের উচ্ছেদে শিগগিরই অভিযান চালানো হবে। জায়গাটি নিয়ে মামলা ছিল। রায় সরকারের পক্ষে গেছে। দ্রুত রায় পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ

অন্যদিকে সিলেট-ভোলাগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পূর্ব অংশে ধলাই নদের পাড় পর্যন্ত প্রায় ১৫০ একর সরকারি খাসজমিতে স্থানীয় পর্যটনশিল্পের বিকাশে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে উন্নয়নকাজ শুরু করে। এ জন্য এসব জায়গা থেকে পাথর ভাঙার মেশিন অপসারণ করে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ ও মাটি ভরাটের কাজ করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ৫ আগস্ট বিকেলে সাহাব উদ্দিনের লোকজন পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে আবার ওই জমির দখল নেন। তখন তাঁর অনুসারীরা স্থলবন্দর নির্মাণে নিয়োজিত ঠিকাদারদের জিনিসপত্র ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেন। ওই মহলটি পর্যটনের উন্নয়নে নির্মিত সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ফেলে। পরে নির্মাণাধীন স্থলবন্দরের ৫২ দশমিক ৩০ একর জমি ছাড়া উভয় পাশের প্রায় ২০০ একর জমির দখল নেন সাহাব উদ্দিনসহ স্থানীয় কয়েকজন।

তবে সাহাব উদ্দিন দাবি করেন, একটি পক্ষ তাঁকে ঘায়েল করতে পেছনে লেগেছে। পক্ষটি ক্রমাগত মিথ্যাচার করছে। তিনি কোনো জমি দখল করে পাথর ব্যবসায়ীদের ভাড়া দেননি। পর্যটনকেন্দ্রিক উন্নয়নকাজ শুরুর আগে সেখানে তিন বিঘা জায়গায় তিনি পাথর রাখতেন। তবে যখন (২০২৩ সাল) সেখানে পর্যটনের উন্নয়নে কাজ শুরু হয়, তখন তিনিসহ অন্যদের প্রশাসন উচ্ছেদ করে। আর নির্মল কুমার সিংহ তাঁর ব্যবস্থাপক নন।

সাহাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, প্রশাসন উচ্ছেদ করার পর তিনি আর সেখানে পাথর রাখেননি। ৫ আগস্টের পর তিনি বা তাঁর লোকজনের ওই জমি দখলের অভিযোগ একেবারেই মিথ্যা। তাঁকে বিতর্কিত করতেই একটা মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যাচার করছে।

অভিযোগ আছে, সরকারি জমির দখল টিকিয়ে নিজের সাম্রাজ্য ঠিক রাখতে সাহাব উদ্দিন শুরু থেকেই স্থলবন্দর নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছেন। স্থলবন্দর নির্মিত হলে এলসির মাধ্যমে ভারত থেকে আনা কয়লা, চুনাপাথর ও পাথরে কর ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না—এটাও বিরোধিতার অন্যতম কারণ।

সাম্রাজ্য টেকাতে বন্দর নির্মাণে বিরোধিতা

স্থানীয় লোকজন জানান, ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দরের জন্য পশ্চিম অংশে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জায়গা অধিগ্রহণ করার পর অতিরিক্ত প্রায় ৫৮ একর জায়গা উন্মুক্ত হিসেবে আছে। পাশাপাশি পূর্ব অংশে পর্যটনের উন্নয়নে ব্যবহৃত ১৫০ একর জমি ৫ আগস্টের পর বেদখল হয়ে যায়। এর মধ্যে সাহাব উদ্দিনের দখলেই সিংহভাগ জায়গা আছে বলে স্থানীয়ভাবে প্রচার আছে।

অভিযোগ আছে, সরকারি জমির দখল টিকিয়ে নিজের সাম্রাজ্য ঠিক রাখতে সাহাব উদ্দিন শুরু থেকেই স্থলবন্দর নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছেন। স্থলবন্দর নির্মিত হলে এলসির মাধ্যমে ভারত থেকে আনা কয়লা, চুনাপাথর ও পাথরে কর ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না—এটাও বিরোধিতার অন্যতম কারণ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৯ জানুয়ারি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব বরাবর একটি লিখিত আবেদন করে নির্মাণাধীন স্থলবন্দর স্থাপনের কার্যক্রম বন্ধ রাখার অনুরোধ করেন সাহাব উদ্দিন। এ ছাড়া গত ২২ ফেব্রুয়ারি তাঁর নেতৃত্বে ভোলাগঞ্জ চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপের ব্যানারে সিলেটে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সাহাব উদ্দিন ওই গ্রুপের সভাপতি। সংবাদ সম্মেলনে ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর নির্মাণের বিরোধিতা করা হয়।

তাঁর (সাহাব উদ্দিন) বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। সুস্পষ্টভাবে সত্যতা পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী

এদিকে ৫ আগস্ট–পরবর্তী পরিস্থিতিতে জায়গাটি দেখতে যান বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান। গত ২৬ ডিসেম্বর তিনি একটি প্রতিবেদনও প্রস্তুত করেন। কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি লিখেছেন, ‘৫ আগস্ট ও তৎপরবর্তী সময়ে স্থানীয় এক ব্যক্তির নেতৃত্বে সব স্থাপনা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ওই দিন ওই ব্যক্তির নেতৃত্বে ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর নির্মাণে রাখা ঠিকাদারের সব যন্ত্রপাতিতে আগুন দেওয়া হয় এবং রক্ষিত মালামাল লুট করা হয়। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সেখানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বন্দরের উন্নয়নকাজ চলমান রাখা হয়েছে।’

প্রতিবেদনে অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম উল্লেখ না করলেও ওই ব্যক্তি উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিন বলে স্থলবন্দরের উন্নয়নকাজের সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্র প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে। এ বিষয়ে সাহাব উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ অংশে অপ্রয়োজনীয় সত্ত্বেও স্থলবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। এটিসহ যৌক্তিক কিছু কারণেই স্থলবন্দর নির্মাণের বিরোধিতা তাঁরা করছেন। তবে উন্নয়নকাজে তাঁরা বাধা দিচ্ছেন না। স্থলবন্দর নির্মাণের কাজ চলছে। লুটপাট কিংবা জায়গা দখল—কোনো কাজেই তাঁর সম্পৃক্ততা নেই।

জানতে চাইলে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁর (সাহাব উদ্দিন) বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। সুস্পষ্টভাবে সত্যতা পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক র ব যবস য় সরক র ব যবস থ সরক র র ৫ আগস ট দখল ক ল কজন একর জ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে

দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। আজ বুধবার দেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান ১২ দশমিক ৫০ ডলার কেজিতে এই ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৫২৫ টাকা।

অথচ এদিন যশোর শহরের মাছের আড়তে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় পাইকারি বেচা–কেনা হয়েছে। খুচরা বাজারে সেই ইলিশ কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে; অর্থাৎ দেশের খুচরা বাজারের দামের চেয়ে কম দামে ইলিশ ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।

দেশের চেয়ে কম দামে ইলিশ মাছ রপ্তানি কীভাবে সম্ভব হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রপ্তানিকারকদের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট জুয়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রপ্তানিকারকেরা ইলিশের জাহাজ থেকে সরাসরি মাছ কেনেন।‌ ছোট–বড় মিলিয়ে যখন কেনেন, তখন একটু কম দামে তাঁরা কিনতে পারেন। এ কারণে তাঁদের পুষিয়ে যায়। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।’

যশোর শহরের বড় বাজারের মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ মাছের সরবরাহ কম। যে কারণে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। খুচরা ইলিশ বিক্রেতা লিয়াকত আলী বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশ মাছের দাম বাড়তি। বাজারে সরবরাহ কম। যে কারণে এ বছর ইলিশ মাছের দাম কমার সম্ভাবনা আর দেখছি না।’

যশোর বড় বাজার মৎস্যজীবী আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ পিয়ার মোহাম্মদ জানান, আজ যশোরের বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কেনাবেচা হয়েছে। আর কেজি আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকার ওপরে বেচাকেনা হয়েছে। ভারতের রপ্তানির কারণে স্থানীয় বাজারে এখন ইলিশ মাছ সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, যে কারণে দাম বেশি। অথচ গত বছর এই সময়ে কেজি আকারের ইলিশ মাছের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে সেই ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকার ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আজ থেকে ইলিশ মাছ রপ্তানি শুরু হলো। গত বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি ছিল ২ হাজার ৪২০ টন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৫৩২ টন। এবারও অনুমোদনকৃত ইলিশ রপ্তানির কোটা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ৫ অক্টোবরের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।

জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ফিশারিজ কোয়ারেন্টিন সজীব সাহা বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ইলিশ রপ্তানির প্রথম চালানে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১২ দশমিক ৫০ ডলার মূল্যে ৩৭ দশমিক ৪৬০ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি করা ইলিশের একটি বাক্স খুলে দেখা গেছে, ৩৮টি ইলিশ মাছের ওজন ২১ কেজি; অর্থাৎ প্রতিটি ইলিশের ওজন ছিল ৫৫০ গ্রাম। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছও রপ্তানি হয়েছে। ৫৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম আকারের মধ্যে ইলিশ মাছ রপ্তানি হচ্ছে।

পদ্মার রুপালি ইলিশ স্বাদ আর গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় দুই বাংলায় এ মাছ বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে দুর্গাপূজায় অতিথি আপ্যায়নে খাবারের প্রধান তালিকায় ইলিশ রাখেন কলকাতার বাঙালিরা। আগে ইলিশ সাধারণ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় উন্মুক্ত থাকলেও উৎপাদন সংকট দেখিয়ে ২০১২ সালে দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কেবল দুর্গাপূজা উপলক্ষে আবারও ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেয় সরকার।

আরও পড়ুনদুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি: মৎস্য উপদেষ্টা২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
  • আখাউড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ