২২ ছক্কা ৫০ চারে মোস্তাকিমের ৪০০ রান, এমন অতিমানবীয় ব্যাটিংয়ের রহস্য কী
Published: 18th, March 2025 GMT
১৭০ বল, ২২টি ছক্কা, ৫০টি চারে ৪০৪ রান! স্কোর দেখে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটি সত্যিই করেছেন ক্যাম্ব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের মোস্তাকিম হায়দার। প্রতিপক্ষ সেন্ট গ্রেগরি স্কুলের বিপক্ষে মোস্তাকিমের এই ইনিংস আলোড়ন তুলে।
প্রাইম ব্যাঙ্ক স্কুল ক্রিকেটে মঙ্গলবার মুখোমুখি হয় ক্যামব্রিয়ান-গ্রেগরি। টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে ৩ উইকেটে ৭৭০ রান করে ক্যামব্রিয়ান। তাড়া করতে নেমে ৩২ রানে অলআউট হয় গ্রেগরি। ক্যামব্রিয়ান ৭৩৮ রানের বিশাল জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে।
মোস্তাকিমের ৪০৪ রানের পাশাপাশি ২৫৬ রান করেছেন সাদ পারভেজ। ৭১ রানে দুই উইকেটের পতনের পর মোস্তাকিম-সাদের জুটি শুরু হয়। দুজনে ইনিংসের শেষ পর্যন্ত খেলে যোগ করেন ৬৯৯ রান! ১২৪ বলে ৩২টি চার ও ১৩টি ছক্কায় ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংসটি সাজান সাদ।
ওপেনিংয়ে নামা মোস্তাকিম বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন ৭২টি। কিভাবে সম্ভব এটি? বিকেলে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সংবাদকর্মীর এমন কৌতুহুলি প্রশ্নে হেসে ওঠেন মোস্তাকিম। যেন তার জন্য ডাল-ভাত। পরে জানালেন রহস্যও।
“অনুশীলনে সবসময় আক্রমণাত্মক ব্যাটিংই করা হয়। আমার কোচ বলেন, যা-ই মারবে জোর দিয়ে মারবে। মন্থর ক্রিকেট খেলা যাবে না। ক্রিকেট তো আধুনিক হয়ে গেছে। ওভাবেই তাল মিলিয়ে চেষ্টা করছি।”
শুরুতে কিছুক্ষণ ব্যাটিংয়ের পর মোস্তাকিম বুঝে গেছেন আজ তার দিন, “নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস ছিল আজকে একটা কিছু করার। ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করছিলাম ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক সংযোগ করার। পরে দেখলাম যে ভালো লাগছে, তখন মনে হচ্ছিল যে পারব।”
মোস্তাকিমের আইডল সাকিব আল হাসান। অবসরে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট দেখতে তার ভালো লাগে। সেখান থেকেই পেয়েছেন পাওয়ার হিটিংয়ের নেশা। ক্রিকেট দেখা নিয়ে এই খুদে ক্রিকেটার বলেন, “ক্যারিবিয়ানদের টুর্নামেন্টগুলো দেখতে ভালো লাগে। সেখানে পাওয়ার হিটিং বেশি হয়। ওগুলো দেখতে ভালো লাগে। পছন্দের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান।”
ঢাকা/রিয়াদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।
সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।
জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।
জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।
জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।