ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার দক্ষিণাঞ্চল পাগলা থানার নিগুয়ারী ইউনিয়নের তললী গ্রামে নদীর বালু উত্তোলন নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে মেহেদি হাসান রাকিব নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন তার চাচা জিয়া ও একই গ্রামের মো. সাবিদ।

গতকাল সোমবার রাতে নিগুয়ারী ইউনিয়নের পল্টন মোড়ে এই ঘটনা ঘটে। নিহত যুবক রাকিব তললী নামাপাড়া গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, স্থানীয় ইয়াসিন খানের সঙ্গে নিহত মেহেদি হাসান রাকিবের নদীর বালু উত্তোলন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। গত সোমবার সন্ধ্যায় উভয় পক্ষের লোকজন পাতলাসী বাজারে একসঙ্গে ইফতার করে নিগুয়ারী পল্টন মোড়ে আসার সময় রাকিবের সঙ্গে ইয়াসিনের কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এর জেরে রাত ১০টার দিকে ইয়াসিন ও তার লোকজন পল্টন মোড়ে রাকিবের ওপর হামলা করে। এ সময় সংঘর্ষ শুরু হলে ইয়াসিন ও তার লোকজন রাকিবকে ধরে নিগুয়ারী পল্টন মোড়ে ইয়াসিনের অফিসে নিয়ে মারধর করে। পরে রাকিবকে অফিসের পেছনে নিয়ে পিটিয়ে, কুপিয়ে এবং ইট দিয়ে মাথা থেঁতলিয়ে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান রাকিব। এ ঘটনায় সাবিদ (২৪) নামে একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। রাকিবের চাচা জিয়াকে পিস্তল দিয়ে মাথায় আঘাত করলে সেও আহত হন। তাকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়। গুলিবিদ্ধ সাবিদকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে।

নিহত রাকিবের বাবা মজিবুর রহমান বলেন, ইয়াসিন ক্ষমতা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। 

নাম না বলার শর্তে তিনি জানান, স্থানীয় নেতার ছত্রছায়ায় ইয়াসিন খান এই ইউনিয়নের মাছের খামার, ইটভাটা, বালুর ব্যবসা সব কিছু দখলে নিয়ে চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। রাকিব এসব অপকর্মে বাধা দিতো বলেই পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে।

নিহত রাকিবের চাচাতো ভাই মোমেন বলেন, ‘বালু উত্তোলনের উদ্বোধনের কথা বলে আমার ভাই রাকিবকে নিয়ে তারা পাতলাশী বাজারে ইফতার করে। পরে রাস্তায় আসার সময় রাকিবের সঙ্গে তর্কাতর্কি ও মারামারি করে। এরপর পল্টন মোড়ে পিটিয়ে, ইট দিয়ে তার মাথা থেঁতলিয়ে মেরে ফেলে। এমনভাবে রাকিবকে মারা হয়েছে, তাকে আর চিনার কোনো উপায় নাই।’

পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ফেরদৌস আলম জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ময়মনস হ ন হত

এছাড়াও পড়ুন:

সংস্কার ও নির্বাচন উভয়টি প্রয়োজন: তারেক রহমান

‘সংস্কার ও নির্বাচন উভয়টি প্রয়োজন’-এমন দলীয় ভাবনার কথা তুলে ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান-আপনারা একটু সতর্ক থাকবেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি অংশ সংস্কার এবং নির্বাচনকে দাঁড় করিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরিকল্পিতভাবে বিরোধ উসকে দিতে চায়। গণতন্ত্রকামী জনগণের মনে এই ধরনের বিশ্বাস জন্ম দিতে শুরু করেছে।”

বৃহস্পতিবার (১ মে) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন। লন্ডন থেকে সমাবেশে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন তিনি।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার প্রস্তাবনা প্রণয়নের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “কোনো রাজনৈতিক দলের আপত্তি নেই। তবে পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ এবং নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত করুন। সুনির্দিষ্টভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা করুন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মপরিকল্পনায় পথনকশা, গণতন্ত্রকামী জনগণের সামনে সুস্পষ্ট থাকলে জনগণের সন্দেহ, সংশয় কেটে যাবে।”

আরো পড়ুন:

বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আর গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র একই: গয়েশ্বর

লড়াইয়ের মাধ্যমে অধিকার আদায় করে নিতে হবে: নজরুল ইসলাম

তারেক রহমান বলেন, “ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে জনগণের পক্ষে, জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্যই বিএনপিসহ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিঃশর্ত সমর্থন দিচ্ছে। তবে গণতন্ত্রকামী জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি অনির্দিষ্টকালের জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখা যৌক্তিক নয়।”

পলাতক স্বৈরাচার যাতে আর মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ না পায়, এজন্য জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট কিংবা স্বৈরাচার হওয়ার মন্ত্র দেশের সংবিধান কিংবা দেশের আইনে লেখা থাকে না। বরং সংবিধান ও আইন না মানার কারণে ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়। একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যখন থেকে নিজেকে কিংবা নিজেদের একমাত্র অনিবার্য অপরিহার্য মনে করে… জনগণের ওপর একক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে শুরু করে; তখন থেকেই ফ্যাসিবাদের যাত্রা শুরু হয়।”

“এই কারণে বলতে চাই, কোনো ব্যক্তি অথবা গোষ্ঠীর মনে বিনা ভোটে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত সুপ্ত ভাবনা মনের আকাঙ্ক্ষা যেন রাষ্ট্র ও সরকারকে ফ্যাসিবাদের প্রতি প্রলুব্ধ করতে না পারে, সেজন্যই জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, নির্বাচিত জাতীয় সংসদ এবং জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করা দরকার।”

“গণবিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদ অথবা স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর বিশেষ পরিস্থিতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা অন্তর্বর্তীকালীন যে সরকার গঠিত হয়, তা অবৈধ না হলেও জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নয় এবং বিকল্প হতে পারে না”, বলেও সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে এবং শ্রমিক দলের প্রচার-প্রকাশনা সম্পাদক মঞ্জরুল ইসলাম মঞ্জুর সঞ্চালনায় এই সমাবেশে শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির শ্রম বিষয়ক সহ-সম্পাদক হুমায়ুন কবীর খান, ফিরোজ-উজ-জামান মোল্লা মামুন, শ্রমিক দলের সালাহউদ্দিন সরকার, আবুল কালাম আজাদ, মেহেদি আলী খান, আবুল খায়ের খাজা, মোস্তাফিজুল করীম, সুমন ভুঁইয়া, প্রয়াত শ্রমিক নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান বক্তব্য রাখেন।

বিএনপির নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইয়েদুল আলম বাবুল, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানি, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন বক্তব্য রাখেন।

ঢাকা/আসাদ/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ