জাপার ইফতার অনুষ্ঠানে সন্ত্রাসী হামলার পর অন্তর্বর্তী সরকারের ‘বিদায়’ চাইলেন জি এম কাদের
Published: 19th, March 2025 GMT
রাজধানীর কাফরুলে জাতীয় পার্টির (জাপা) ইফতার অনুষ্ঠানে সন্ত্রাসী হামলার পর দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এক ভিডিও বক্তব্যে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের বিদায় চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা মনে করি, বাংলাদেশ একটা সমূহ বিপদের দিকে, ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। যত তাড়াতাড়ি এখান থেকে উদ্ধার করা যায় ততই ভালো। তার প্রধান ও জরুরি কাজ হলো এই সরকার সরে নতুন করে সরকার আসা।’
জি এম কাদের বলেন, বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এমন একটা পর্যায়ে গেছে, যেটা বর্ণনার অতীত। কারও জানমালের নিশ্চয়তা নেই। মানুষের অসহায়ত্ব দেখে দুঃখ করা ছাড়া কিছু করার নেই। একমাত্র আল্লাহর ওপর ভরসা করে এখানকার মানুষ বেঁচে আছে। তিনি বলেন, সরকারের প্রধান দায়িত্বই ছিল মানুষের নিরাপত্তা বিধান করা। সেখানে তারা ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে, পুলিশকে সম্পূর্ণ অকার্যকর করে ফেলা হয়েছে। পুলিশকে কার্যকর করার ব্যবস্থা না করে এখন দেশটাকে আগুনের মুখে ফেলে দিচ্ছে। কেউ এখানে নিরাপদ না।
অন্তর্বর্তী সরকারের কথা উল্লেখ করে জাপার চেয়ারম্যান বলেন, ‘ওনারা যখন পারছেন না তখন ওনাদের ছেড়ে দিয়ে যাওয়া উচিত। যদি অন্য কেউ পারে, ভালো করে, তাহলে দেশের মানুষ রক্ষা পাবে। ওনারা যত তাড়াতাড়ি চলে যান, দেশ ও জাতির জন্য ততই মঙ্গল।’
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনার কথা উল্লেখ করে এগুলোর জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে দোষারোপ করেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, ‘ওনারা দেশকে বিভক্ত করছেন, দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন, একে অপরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিচ্ছেন। হিংসা, প্রতিহিংসাই এখন রাজনৈতিক চর্চা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটা শ্রেণির মানুষকে—যারা একটু উগ্রপন্থী এবং যারা ইসলামিস্ট উগ্রপন্থী এবং যারা রক্ষণশীল, তাদের এক করেছেন। বাকি সব উদারপন্থী মানুষকে তারা ফ্যাসিবাদের দোসর এবং ফ্যাসিবাদী হিসেবে চিহ্নিত করে রাজনীতি থেকে বের করে দিচ্ছেন।’
‘নির্বাচনের নামে প্রহসন হবে’আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে জি এম কাদের বলেন, ‘এই সরকার যে নির্বাচন নির্বাচন করছে, আমি মনে করি, এটা সম্পূর্ণভাবে একটা অকার্যকর সরকার। কোনোখানে তাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে নির্বাচনের নামে একটা প্রহসন হবে। তাদের তেমন সক্ষমতা নেই। একইভাবে বলতে হয়, তাদের সেরকম কোনো নিরপেক্ষতাও নেই। তারা অলরেডি আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করছে। আমাদের মিছিল-মিটিং করতে দিচ্ছে না। ইফতার পার্টি পর্যন্ত করতে দিচ্ছে না। সবখানে আমাদের বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। সেখানে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে কতটুকু সুফল পাব?’
অন্তর্বর্তী সরকার তাদের নিজস্ব কিছু মানুষ এবং দলকে বিভিন্নভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করছে বলে অভিযোগ করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘সরকারে না থাকার পরও তারা সরকারের সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, রাজনীতি করে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সঠিক নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। আমরা সে জন্যই মনে করি, এই সরকারের চলে যাওয়া উচিত। ওনারা দেশ চালাতে পারছেন না, ওনারা সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারবেন না।’
সংস্কার প্রসঙ্গে জি এম কাদের বলেন, সংস্কারের নামে ওনারা যে গান তুলেছেন, মনে হচ্ছে ওনারা সবাই বেশি করে ক্ষমতায় থেকে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধ করা, নিজেদের দলকে শক্তিশালী করা—এটাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। আইনশৃঙ্খলার অবনতিটাকে এক্সকিউজ (অজুহাত) হিসেবে দেখিয়ে ওনারা ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘যাঁরা সংস্কারের কাজে আছেন, তাঁরা অত্যন্ত জ্ঞানীগুণী মানুষ, লেখাপড়া ভালো—সবই আমি বিশ্বাস করি। কিন্তু একটা কথা বলতেই হবে। ওনাদের বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে কোনো রকম ধারণা নেই। বাংলাদেশে রাষ্ট্র কীভাবে পরিচালিত হয়, রাজনীতি কীভাবে পরিচালিত হয়, সে সম্পর্কে বাস্তব কোনো অভিজ্ঞতা নেই। ফলে তাঁরা যে প্রস্তাব দেবেন, সেটা বাস্তবসম্মত হবে না।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এম ক দ র সরক র র র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের হামলায় ২০ ইসরায়েলি নিহত
ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চারদিন ধরে চলছে। এসব হামলায় উভয় দেশের মধ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইসরায়েলের জাতীয় পরিষেবা জানিয়েছে, আজ সোমবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত শুক্রবার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা ২০ জনে পৌঁছুল। আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
অন্যদিকে আল-জাজিরা বলছে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত ইরানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডমের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়া, তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
রোববার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।