প্রশাসনের সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের বিপক্ষে মত দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। সেই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের যুক্তি তুলে ধরেছেন তিনি। তাঁর মতে, প্রশাসনের স্বচ্ছতা যাছাইয়ে ধাপে ধাপে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে।

আজ বুধবার সন্ধ্যায় কুমিল্লা শহরতলির শাসনগাছা বাস টার্মিনালে এক গণ–ইফতার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথাগুলো বলেন হাসনাত আবদুল্লাহ।

ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে ২৪-এর শহীদ ও আহত গাজিদের স্মরণে গণ–ইফতার ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এনসিপির কুমিল্লার জেলা শাখা। হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন গত যে তিনটা নির্বাচন হয়েছে, ওই তিনটা নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। ভোট দিয়েছে প্রশাসন, নির্বাচন পরিচালনা করেছে প্রশাসন। একটা ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন করার কোনো ধরনের দক্ষতা আওয়ামী প্রশাসনের নেই। এই প্রশাসনের সংস্কার না করা পর্যন্ত নির্বাচন হবে না। প্রশাসন যতক্ষণ পর্যন্ত একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে না পারে, আমরা আশ্বস্ত হতে পারছি না। এ জন্য আমরা চাই, স্থানীয় সরকার যে নির্বাচনগুলো রয়েছে, এই নির্বাচনগুলোর মধ্য দিয়ে প্রশাসনের স্বচ্ছতার পরীক্ষা হয়ে যাক।’

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা ছাত্র-নাগরিক রাস্তার মধ্যে তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে যে আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশ থেকে উৎখাত করেছি, আজকে সেই আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে ফায়দা নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের জন্য চেষ্টা করছে। আমরা আপনাদের সতর্ক করে দিতে চাই, এই ছাত্র–নাগরিকের হারানোর কিছুই নেই। এক খাপে দুই তলোয়ার যেভাবে থাকতে পারে না, ঠিক একইভাবে ৫ আগস্ট–পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ এবং এনসিপি থাকতে পারে না।’

আওয়ামী লীগের বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘৫ আগস্ট গণভবন এবং বঙ্গভবনের যে পরিণতি হয়েছে, যাঁরা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে চাইবে, তাঁদের পরিণতি এবং তাঁদের ফলাফল একই রকম হবে। আমাদের লড়াই অব্যাহত আছে। আমাদের লড়াই চলবে। আওয়ামী লীগকে যাঁরা পুনর্বাসন করতে চাইবে, যে রাজনৈতিক দলেরই হোক না কেন তাকে আমরা প্রতিহত করব।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানিয়ে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘আপনারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আয়োজন করুন। প্রয়োজনে ধাপে ধাপে যতগুলো উপজেলা রয়েছে সেগুলো নির্বাচনের আয়োজন করুন। আপনারা এই প্রশাসনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করুন।’ চাঁদাবাজদের হুঁশিয়ারি করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি, মাঠ দখল, পুকুর দখল, বাজার দখল শুরু হয়েছে। এই দখলবাজদের হাত গুঁড়িয়ে দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন। কোথাও চাঁদাবাজদের ঠাঁই হবে না।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব রিফাত রশিদের সভাপতিত্বে গণ–ইফতার মাহফিলে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লার আহ্বায়ক সাকিব হোসাইন, মহানগরের আহ্বায়ক আবু রায়হান, সদস্যসচিব রাশেদুল হাসানসহ আরও অনেকে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এনস প আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

৮ বছরেও শুরু হয়নি কুবির ২ বিভাগের কার্যক্রম

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) দীর্ঘ ৮ বছর আগে অনুমোদন পাওয়া দুটি বিভাগ এখনো চালু হয়নি। অনুমোদন সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ, অবকাঠামোগত প্রস্তুতি এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের ধীরগতির কারণে বিভাগ দুটি কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধীনে ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ চালুর অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকেই বিভাগ দুটি চালু হওয়ার কথা থাকলেও, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত ও শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে নতুন অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের পরে বিভাগ দুটি চালুর পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে নতুন ভবন নির্মাণ হয়নি।

আরো পড়ুন:

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় কুবি প্রক্টরের জরুরি নির্দেশনা 

সিএনজি চালকের বিরুদ্ধে কুবি শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ

এছাড়া, তৎকালীন অর্গানোগ্রামে ৩১টি বিভাগের মধ্যে এই দুইটি বিভাগ অন্তর্ভুক্ত ছিল না, যা পরবর্তীতে চালু করা নিয়ে জটিলতা তৈরি করে।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে বৈঠক করে এই বিষয়ে পুনরায় আলোচনা করে। ইউজিসি নির্দেশনা অনুযায়ী, নতুন অর্গানোগ্রামে বিভাগের অন্তর্ভুক্তি ও নতুন বিভাগের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

সে অনুযায়ি ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কুবির ৮৯তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে পূর্বের ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ এর পরিবর্তে ‘লজিস্টিক্স ও মার্চেন্ডাইজিং বিভাগ’ এবং ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’-এর পরিবর্তে ‘পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ নামে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়। এছাড়াও অর্গানোগ্রামে নতুন আরও ১৮টি বিভাগের নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

তৎকালীন বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রস্তাবক রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান বলেন, “২০১৭ সালে অনুমোদন থাকলেও জায়গা সংকটের কারণে বিভাগ চালু করা সম্ভব হয়নি। পরে প্রশাসন পাল্টালেও কেউ উদ্যোগ নেয়নি।”

এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “অর্গানোগ্রামে অন্তর্ভুক্তি মানে এখনই চালু হবে না। অনুমোদন থাকলেও তৎকালীন সময়ে চালু করা সম্ভব হয়নি। এখন ইউজিসি নির্দেশনায় নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “তৎকালীন প্রশাসন বলতে পারবে কেন বিভাগ চালু হয়নি। আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা মাধ্যমে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী ২ বছরের মধ্যে আশা করি বিভাগ চালু করা সম্ভব হবে, তখন নতুন ক্যাম্পাসও প্রস্তুত থাকবে।”

ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ