ঈদে নৌপথে নাশকতা রোধে ডজনখানেক সুপারিশ
Published: 20th, March 2025 GMT
ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে নৌপথে পুলিশ কাজ করছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি কুসুম দেওয়ান।
তিনি বলেন, “টার্মিনালসহ দূরপাল্লার লঞ্চে বিশেষ করে রাতে যাতে নাশকতা না হয়, সে জন্য নৌপুলিশ কাজ করছে। এতে সেনাবাহিনীও সহযোগিতা করছে।”
বুধবার নৌপুলিশ সদরদপ্তর আয়োজিত আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নৌপথে আইনশৃঙ্খলা ও নৌ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সভার শুরুতেই নৌ পুলিশের পক্ষ থেকে নৌপথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, পরিবেশ দূষণরোধ, টিকিট কালোবাজারি এবং চাঁদাবাজি প্রতিরোধে করণীয় উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উপস্থিত প্রতিনিধি ও অনলাইনে সংযুক্ত নৌপুলিশের ১১টি অঞ্চলের পুলিশ সুপারদের সঙ্গে আলোচনা হয়।
সভায় বক্তারা নির্বিঘ্নে ও নিরাপদ নৌপথ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। ঈদে নৌপথ ব্যবহারকারী ঘরমুখো মানুষের যাত্রা সহজ ও নিরাপদ করতে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নৌপুলিশ কাজ করছে বলে জানান।
নৌপথের নিরাপত্তায় যে সুপারিশগুলো করা হয়েছে, তা হচ্ছে :
লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা থেকে বিরত থাকা, ছোট ও ত্রুটিপূর্ণ লঞ্চে যাত্রী পরিবহনে বিরত থাকা, লঞ্চে যাত্রী সংখ্যার আনুপাতিক হারে লাইফ জ্যাকেট, বয়া প্রভৃতির ব্যবস্থা রাখা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে নৌযান চালানো, চাঁদাবাজি, চুরিসহ যেকোনো হয়রানি বন্ধে বিশেষ নজরদারি বৃদ্ধি, নির্ধারিত মূল্যে ভাড়া আদায়ে তদারকি, টার্মিনাল ছাড়া নদীর যেকোনো জায়গায় অন্য কোনো ছোট নৌযান থেকে যাত্রী উঠানো বা নামানো বন্ধ নিশ্চিতসহ সব নৌযানে পর্যাপ্ত ফায়ার ফাইটিং এবং সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা রাখার বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
ঢাকা/হাসান/টিপু
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।