ভোরে মাঠে নামছে ব্রাজিল, সমর্থকদের পাশে চাইলেন ফুটবলাররা
Published: 20th, March 2025 GMT
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে চাপে থাকা ব্রাজিল দল আগামীকাল ভোরে মাঠে নামছে গুরুত্বপূর্ণ এক ম্যাচে। শুক্রবার (বাংলাদেশ সময়) সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে ব্রাসিলিয়ার গারিঞ্চা স্টেডিয়ামে কলম্বিয়ার মুখোমুখি হবে সেলেকাওরা।
ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, গ্যাব্রিয়েল, গিমারেস, রাফিনিয়ার মতো তারকারা ক্লাব ফুটবলে নিয়মিতই দুর্দান্ত পারফর্ম করছেন। তবে জাতীয় দলের জার্সিতে যেন কিছুতেই কাঙ্ক্ষিত ছন্দ পাচ্ছে না ব্রাজিল। লাতিন অঞ্চলের বাছাইপর্বে ১০ দলের মধ্যে বর্তমানে পাঁচে অবস্থান করছে তারা। ১২ ম্যাচে তাদের সংগ্রহ মাত্র ১৮ পয়েন্ট।
শেষ দুই ম্যাচে জয় না পাওয়ায় এবার ঘরের মাঠে ভাগ্য ফেরানোর লক্ষ্যে মরিয়া সেলেকাওরা। কলম্বিয়ার বিপক্ষে নিজেদের মাঠে এখনও পর্যন্ত অপরাজিত ব্রাজিল, ১৪ ম্যাচে একবারও হারেনি। তবে শেষ দুটি মুখোমুখি লড়াইয়ে জয় পায়নি তারা—একটিতে ২-১ গোলে হার এবং অন্যটি ১-১ ড্র। তাই এবার জয়ের বিকল্প নেই।
বড় এই ম্যাচ সামনে রেখে সমর্থকদের মাঠে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন ব্রাজিল দলের ফুটবলাররা। ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশন এক ভিডিও বার্তায় সমর্থকদের প্রতি সেই আহ্বান ছড়িয়ে দেয়।
লিভারপুলের গোলরক্ষক আলিসন বলেন, 'হ্যালো ব্রাসিলিয়ার মানুষ, আমি আলিসন বেকার। কলম্বিয়ার বিপক্ষে আমাদের বড় চ্যালেঞ্জের সামনে আপনাদের সমর্থন খুব দরকার। আসুন, গারিঞ্চায় একসঙ্গে জয় উদযাপন করি।'
নিউক্যাসল ইউনাইটেডের মিডফিল্ডার জোয়েলিন্তন বলেন, 'আমি জোয়েলিন্তন। বৃহস্পতিবার সবাইকে গারিঞ্চায় আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আপনারা থাকলে আমাদের খেলার আত্মবিশ্বাস আরও বাড়বে।'
দীর্ঘদিন পর দলে ফিরেছেন উলভারহ্যাম্পটনের ফরোয়ার্ড মাথেউস কুনিয়া। তিনি বলেন, 'আমরা নিজেদের সর্বোচ্চটা দিতে প্রস্তুত। গারিঞ্চায় দর্শকে ঠাসা গ্যালারি দেখার অপেক্ষায় আছি।' তবে ম্যাচের আগে চোট সমস্যা ভাবাচ্ছে ব্রাজিল শিবিরকে। নেইমার তো আগে থেকেই ছিটকে গেছেন, এবার দানিলো, মিলিতাও, ব্রিমার ও গোলরক্ষক এদেরসনও চোটের কারণে অনিশ্চিত।
অন্যদিকে, প্রতিপক্ষ কলম্বিয়া বেশ আত্মবিশ্বাসী। তাদের মূল ভরসা লুইস দিয়াজ, যিনি আগের ম্যাচে ব্রাজিলকে কাঁদিয়েছিলেন। সাথে রয়েছেন ড্যানিয়েল মুনোজ, লিমা, রদ্রিগেজ, দুরানদের মতো ফুটবলাররা। এই ম্যাচের পর ব্রাজিলের সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ—চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হবে তারা। তাই কলম্বিয়ার বিপক্ষে জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাস নিয়ে রওনা দিতে চায় সেলেকাও।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।