নেত্রকোনায় ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে কিশোর ও তার বাবা গ্রেপ্তার
Published: 21st, March 2025 GMT
নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় স্কুলছাত্রীকে (১২) যৌন নিপীড়নের অভিযোগে প্রতিবেশী কিশোর (১৬) ও তার বাবাকে (৪৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে গতকাল দুপুরে ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেন আজ শুক্রবার দুপুরে জানান, গ্রেপ্তার বাবা-ছেলেকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মামলার এজাহার ও কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মেয়েটি বাড়ির পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। আগে থেকেই সেখানে ওত পেতে ছিল ওই কিশোর। ওই স্কুলছাত্রী এলে তাকে জড়িয়ে ধরে শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেয়। এ সময় ওই কিশোরের এক বন্ধু বিষয়টি মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করে। পরে স্থানীয় কয়েকজন এগিয়ে গেলে তারা দৌড়ে পালায়। পরে মেয়েটি কান্নাকাটি করে বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের জানায়। পরে ওই কিশোরের বাড়িতে গিয়ে তার বাবার কাছে এ ঘটনার বিচার চাইলে উল্টো ওই মেয়েটির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেন। এ ঘটনার পর গ্রামের লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে ওই কিশোরের বাড়িতে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নেন। এ সময় পুলিশ লোকজনদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। পরে মেয়েটির বাবা ওই দিন দুপুরে মামলা করেন। মামলায় ওই কিশোর ও তার বাবাকে আসামি করা হয়। পুলিশ বিকেলে অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করে।
মেয়েটির বাবা বলেন, ‘আমার মেয়েকে ওই বখাটে শ্লীলতাহানি করেছে। বিচার চাইতে গেলে তার বাবা উল্টো ভয়ভীতি দেখানোসহ হুমকি দেয়। এ ঘটনার মামলা হয়েছে। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেছে। আমি তাদের আইনের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
এ ব্যাপারে ওসি মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেন বলেন, খবর পয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। মামলার দুই আসামিকে আজ দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ওই ক শ র
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।