এই ‘ব্রাজিল’ নিয়ে কী করবে ব্রাজিল
Published: 21st, March 2025 GMT
৭০ হাজার দর্শকে পরিপূর্ণ ব্রাসিলিয়ার মানে গারিঞ্চা স্টেডিয়াম তখন খানিকটা বেদনাহত। আরও একটি ব্যর্থ লড়াই দেখে ভাঙা মন নিয়ে বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় দর্শকেরা। সবাই ততক্ষণে ভেবেও নিয়েছেন, এ ম্যাচ শেষে ব্রাজিলের নিম্নগামী ফুটবল আরেকটু নিম্নগামী হবে। অপেক্ষা ছিল শুধু শেষ বাঁশি বাজার। কিন্তু এমন মন খারাপের আয়োজন যেন পছন্দ হলো না ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের।
ব্রাজিলের প্রথম গোলে পেনাল্টি আদায়ের নেপথ্য নায়ক জ্বলে উঠলেন শেষ মুহূর্তে। বক্সের বেশ বাইরে থেকে বুলেট গতিতে নিলেন শট। বল জালে জড়াতেই সব বদলে গেল ভোজবাজির মতো। ১-১ গোলের সমতায় শেষ হতে যাওয়া ম্যাচটি শেষ হলো ব্রাজিলের ২-১ গোলের জয়ে।
এটুকু বর্ণনায় অবশ্য পুরো ম্যাচের চিত্র স্পষ্ট বোঝা যায় না। বাস্তবতা হচ্ছে, ম্যাচের প্রথম কয়েক মিনিট ও শেষ কয়েক মিনিট বাদ দিলে এই ব্রাজিল দল নিয়ে আশাবাদী হওয়ার মতো রসদ আছে সামান্যই। হ্যাঁ, ব্যক্তিগত ঝলকের কিছু মুহূর্ত হয়তো কুড়িয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখার ভিত নেই।
ব্রাজিলের এমন স্বপ্নহীন ফুটবলের শুরুটা অবশ্য আজকে নয়। কাতার বিশ্বকাপের পর থেকেই অদ্ভুত এক দুর্বিপাকের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে ব্রাজিলের ফুটবল। এর মধ্যে নানাভাবে নিজেদের চাঙা করার চেষ্টা করছে তারা। যদিও তেমন কোনো ইতিবাচক ফল এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। ব্রাজিলের সেই ধারাবাহিক নখদন্তহীন ফুটবলে আজকের ম্যাচটি স্রেফ বাড়তি সংযোজন।
আরও পড়ুন৭ বদলি নামিয়ে ব্রাজিল কি ফিফার নিয়ম ভেঙেছে৮ ঘণ্টা আগেআজ কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের শুরুটা বেশ ভালোভাবেই করেছিল ব্রাজিল। প্রথম মিনিট থেকেই ওয়ান টাচ পাসে মুগ্ধতাও ছড়ান ভিনিসিয়ুস-রাফিনিয়ারা। সঙ্গে গতিময়তাও ছিল চোখে পড়ার। অনেক দিন পর তাৎক্ষিণভাবে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোও ছিল বেশ ইতিবাচক। কলম্বিয়ান রক্ষণে বেশ জায়গা বের করে নিজেদের খেলাটা বানানোর চেষ্টা করেছে দরিভাল জুনিয়রের দল।
সেই ধারাতেই ৪ মিনিটের মাথায় কলম্বিয়ান বক্সে ঢুকে ফাউলের শিকার হয়ে পেনাল্টি আদায় করে নেন ভিনিসিয়ুস। স্পট কিকে গোল করেন রাফিনিয়া। এ গোলের পর আরও কয়েক মিনিট ব্রাজিলের ফুটবলে নান্দনিতকার ছাপ ছিল। মনে হচ্ছিল, অনেক দিন পর বুঝি ‘জিঙ্গা’র ছন্দে ডানা মেলতে যাচ্ছে ব্রাজিলের ফুটবল। কিন্তু কিসের কী! ধীরে ধীরে ম্যাচ যত গড়িয়েছে, বেরিয়ে পড়েছে ব্রাজিলিয়ান ফুটবল-ঐতিহ্যের কঙ্কালসার দেহ।
ভিনির গোলই শেষ পর্যন্ত বাঁচিয়েছে ব্রাজিলকে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামে বছর শেষে বাড়ছে ডেঙ্গু, কমেছে চিকুনগুনিয়া
চট্টগ্রামে বছরের শেষে এসে আবারও বাড়ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম দুই দিনেই ৮৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা একটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪১ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গত বছরও এই সময়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েছিল। এদিকে বছরের শেষ দিকে এসে চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ কমেছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল শূন্য।
ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া—দুটিই মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। দুটিই এডিস মশার কামড়ে হয়। এডিসের বংশ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে বৃষ্টি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, নভেম্বরের শুরুতে লঘুচাপের কারণে বৃষ্টি হতে পারে। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
চট্টগ্রামে বছরের শুরু থেকে গতকাল বেলা একটা পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৯২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে গত অক্টোবর মাসে। পুরো জেলায় ওই মাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯৯০ জন। এর আগের মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৩৫। চলতি নভেম্বর মাসে এ সংখ্যা নির্ভর করছে বৃষ্টির ওপর। কারণ, শীত শুরু হলে এডিসের বংশবৃদ্ধির আশঙ্কা কম। তবে বৃষ্টি হলে সেটি বাড়তে পারে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।এদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত কমেছে। গতকাল পর্যন্ত জেলায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬৬৯। তবে চিকুনগুনিয়ায় মাসভিত্তিক তথ্য দেয়নি সিভিল সার্জন কার্যালয়। যদিও প্রতিদিনের আক্রান্তের হিসাব দেয় তারা। প্রাথমিক হিসাবে, গত সেপ্টেম্বর মাসে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭০৪। গত অক্টোবর মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১২১ জন। এ মাসে কেবল একজন।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।
এদিকে গত বছরের তুলনায় এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের উপসর্গগুলোও কিছুটা ভিন্ন বলে জানা গেছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৪১ জন রোগী জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ জন ভর্তি হয়েছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) এবং ১২ জন ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।এ এস এম লুৎফুল কবির, মেডিসিন বিভাগের প্রধান, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালচিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা গেছে। তবে এ বছর যাঁরা আসছেন, তাঁদের মধ্যে শক সিনড্রোম বেশি। পাশাপাশি ডায়রিয়ার উপসর্গও আছে। শক সিনড্রোম হলে রোগীর রক্তচাপ বোঝা যায় না। এই দুটি উপসর্গ গুরুতর। কারণ, সময়মতো ফ্লুইড (তরল খাবার) না পেলে রোগীর অবস্থা আরও গুরুতর হতে পারে।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান এ এস এম লুৎফুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।’
চলতি বছর এপ্রিল থেকে মোটামুটি বৃষ্টি হচ্ছে। জুনে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হলেও পরের মাসগুলোয় স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়। আর থেমে থেমে বৃষ্টির সঙ্গে গরম কিন্তু কমেনি। এই বৃষ্টি ও উচ্চ তাপমাত্রা চলতি বছর ডেঙ্গুর বিস্তারে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন কীটতত্ত্ববিদেরা। তবে সংক্রমণ কমাতে সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
নগরের ২৫টি এলাকাকে ডেঙ্গু ও ২৫টি এলাকাকে চিকুনগুনিয়ার জন্য হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এর মধ্যে বন্দর, ইপিজেড, হালিশহর, কোতোয়ালি, বায়েজিদ, পাহাড়তলী, কাট্টলী, খুলশী, ডবলমুরিং, লালখান বাজার, আগ্রাবাদ, চান্দগাঁও, দেওয়ানহাট, আন্দরকিল্লা, মুরাদপুর, সদরঘাট—এসব এলাকায় ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এসব এলাকায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।
সিটি করপোরেশনের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সরফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিশেষ দল করা হয়েছে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার জন্য। নিয়ম করে এলাকা ভাগ করে রুটিন অনুযায়ী ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।’
চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত বৃষ্টি হওয়ার ২৮ দিন পর্যন্ত মশার প্রকোপ থাকে বলে ধারণা করা হয়। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এ মাসে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এতে ডেঙ্গু বাড়তে পারে।