ভরাট করা হয়েছে ৫০ শতক জমি নির্মাণ করা হবে গোডাউন, অফিস
Published: 21st, March 2025 GMT
রাজশাহীর চারঘাটে মাছের জন্য ইজারা নেওয়া রেলের জলাশয়ে গোডাউন ও অফিস নির্মাণের পাঁয়তারা চলছে। এরই মধ্যে কালভার্টের মুখ বন্ধ করে ওই জলাশয়ের অর্ধেক ভরাট করেছেন হুমায়ুন কবির নামে এক ব্যবসায়ী। স্থানীয়রা অভিযোগ জানালেও ভরাট বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।
হুমায়ুন কবিরের দাবি, কালভার্টের মুখ দিয়ে পানি চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হবে। তা ছাড়া পুরো জায়গাটি ভরাট করা হবে না। অনেক টাকা খরচ করে রেল কর্তৃপক্ষ থেকে নিজ নামে বাণিজ্যিক লাইসেন্স নিয়েছেন। তবে এ-সংক্রান্ত কাগজ দেখতে চাইলে তিনি রাজি হননি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক শাহসুফী নুর মোহাম্মদ বলেন, রেলের জমি সাবলিজ কিংবা জমির শ্রেণির পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। জলাশয় ভরাটের অনুমোদন দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
১৯২৯ সালে নন্দনগাছী স্টেশনটি স্থাপিত হয়। জনবল সংকটের কারণে স্টেশনটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় ২০১৫ সালে। বর্তমানে এই স্টেশনে লোকাল ট্রেন থামলেও কোনো জনবল নেই। এ সুযোগে প্রভাবশালীরা ইচ্ছেমতো রেলওয়ের জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করছে। তাদেরই একজন হুমায়ুন কবির। তাঁর লোকজন রেললাইন ঘেঁষে রেলের জলাশয়ের পশ্চিম অংশ ভরাট করছে। সেখানে পোলট্রির গোডাউন করা হবে। এ কাজ করার আগে রেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেননি ওই পোলট্রি ব্যবসায়ী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ১৯৯০ সালে রেলের এক একর জলাশয় লিজ নেন সওবান আলী ও পলাশ আলী নামে দুই ভাই। সম্প্রতি তাদের কাছ থেকে ৫০ শতক জায়গা সাবলিজ নেন হুমায়ুন কবির। যদিও রেলের জমি সাবলিজ দেওয়ার বিধান নেই। হুমায়ুন জমিটি রেলের কাছ থেকে নিজে লিজ নিয়েছেন বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগের ফিল্ড কানুনগো শরিফুল ইসলাম বলেন, হুমায়ুন কবির নিজের নামে লিজ চাইলেও তাঁকে দেওয়া হয়নি। সেই জমি পলাশ আলীর নামেই লিজ রয়েছে। তাঁকে (হুমায়ুনকে) জলাশয় ভরাটের কাজ বন্ধ করতে বলা হয়েছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
নন্দনগাছী বাজারের ব্যবসায়ী মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, বর্ষাকালে নন্দনগাছী বাজারের সব পানি রেলওয়ের জলাশয় হয়ে কালভার্ট দিয়ে পার্শ্ববর্তী বিলে নেমে যায়। জলাশয় ভরাট করায় পানি নামতে পারবে না। এতে বাজারে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। রেল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানালে তারা পরিদর্শন করে চলে যায়। আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি।
শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, এমনিতে বর্ষায় কয়েক মাসজুড়ে নন্দনগাছী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ জলাবদ্ধ থাকে। এরপর আবার একের পর এক জলাশয় দখল হয়ে যাচ্ছে। জলাশয় ভরাট বন্ধ না করলে ভোগান্তি আরও বাড়বে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) উপজেলা আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০ দিন ধরে প্রভাবশালীরা দাঁড়িয়ে থেকে রেলের জলাশয় ভরাট করছে। রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে এমনটি হচ্ছে। এজন্য বারবার অভিযোগ দিলেও কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এতে জলাবদ্ধতার পাশাপাশি রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ারও শঙ্কা রয়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ভরাট কাজের শুরুতেই স্থানীয়রা অভিযোগ জানালে ফিড ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবিরকে নিষেধ করা হয়েছে। সে ভরাট কাজ বন্ধ করেনি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র লওয় র ব যবস থ ব যবস য় ম বল ন ভর ট ক
এছাড়াও পড়ুন:
নগরের হাসপাতালটিতে রোগীরা কেন থাকতে চান না
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিভাগের শয্যাসংখ্যা ৫২। তবে গত সোমবার হাসপাতালের এই ওয়ার্ডে সাতটি শয্যা খালি দেখা গেছে। একই চিত্র সার্জারি ওয়ার্ডেরও। নগরের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেখানে রোগীর চাপ থাকে শয্যার দেড় গুণ, সেখানে জেনারেল হাসপাতালে এই সংখ্যা অর্ধেক। বছরে সাড়ে তিন লাখের মতো রোগী এখানে সেবা নিলেও তাঁদের মাত্র আড়াই শতাংশ ভর্তি হন এখানে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত চার বছরের গড় হিসাব অনুযায়ী চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন ২৩ থেকে ২৫ জন নতুন রোগী ভর্তি হন। প্রতি মাসে শয্যা অনুপাতে আবাসিক রোগী ভর্তি গড়ে ৪৭ শতাংশ; অর্থাৎ মোট শয্যার অর্ধেকের বেশি ফাঁকা থাকে। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে এই হার আরও কম; ৩৭ শতাংশ।
রোগীদের সঙ্গে কথা বলে এই হাসপাতালে ভর্তি না হওয়ার কারণ জানা গেছে। সেগুলো হলো হাসপাতালের অবস্থান, নিরাপত্তাঝুঁকি, রাতের বেলায় ওষুধ না পাওয়া এবং পর্যাপ্ত যাতায়াতব্যবস্থা না থাকা। হাসপাতালটিতে জনবলেরও ঘাটতিও রয়েছে। ফলে যেকোনো সময় নার্সদের পাওয়া যায় না। এ ছাড়া ভবনগুলোর বিভিন্ন অংশ জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। ফলে রোগীরা এখানে থাকতে চান না।
ভবন সংস্কারের বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগের আওতায়। এ বিষয়ে তাদের বলা হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য ৩০ জন আনসারের কথা বলা হয়েছে। এটির প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। শয্যা বাড়ানোর আগে জনবল বাড়ানো প্রয়োজন। মোহাম্মদ একরাম হোসেন, ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালচট্টগ্রাম নগরে সরকারি দুই হাসপাতালের মধ্যে একটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অন্যটি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা ২ হাজার ২০০ হলেও প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার রোগী থাকেন। অন্যদিকে জেনারেল হাসপাতালে ২৫০ শয্যার বিপরীতে ১২০ থেকে ১৪০ জন রোগী থাকেন।
রোগী ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাঁরা চিকিৎসা নেন, তার অধিকাংশই আশপাশের এলাকার। দূরের রোগীরা এখানে আসতে চান না। কারণ, পাহাড়ের ওপর হাসপাতালটির অবস্থান। এখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেই। রাতে পাহাড়ের পথ ধরে মাদকসেবীরা হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের পাশে অবস্থান করে। ছিনতাই ও নিরাপত্তাঝুঁকির কারণেই রোগীরা অন্যত্র চলে যান।
চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালটিতে করোনা রোগীদের জন্য ২৫টি শয্যা সংরক্ষিত আছে। এসব শয্যায় অন্য কোনো রোগী ভর্তি করা হয় না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের মূল ভবন দুটির বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা খসে গেছে। ফাটল ধরেছে কিছু স্থানে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন গুটিকয় নার্স। প্রসূতি বিভাগে নার্সের উপস্থিতি বেশি। সার্জারি বিভাগের পুরুষ ব্লকের অন্তত ৫টি বেড খালি। শিশু ওয়ার্ডের অবস্থাও একই। রোগী বেশি মেডিসিন বিভাগে।
হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জামেরও সংকট রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমআরআই মেশিন বর্তমানে নষ্ট। ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিনও প্রায়ই অচল থাকে। এ ছাড়া নিয়মিত বিভিন্ন পরীক্ষার জন্যও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা। তবে এসবের মধ্য দিয়েই চলছে রোগীর সেবা। মূলত বাজেট বরাদ্দ না থাকায় যন্ত্রপাতি কেনায় অর্থ ব্যয় সম্ভব হচ্ছে না।চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের অবস্থান নগরের আন্দরকিল্লা এলাকার রংমহল পাহাড়ের ওপর। এর পেছনের দিকে কাটা পাহাড় লেন। আগে এ সড়ক দিয়েই হাসপাতালে ঢুকতে হতো। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সন্ধ্যা হলেই বন্ধ এ পাহাড়ি পথ ধরে বহিরাগত লোকজন হাসপাতালে ঢোকে। নিরাপত্তা না থাকায় মাদকসেবীরাও পাহাড়ে ওঠে।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ একরাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ভবন সংস্কারের বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগের আওতায়। এ বিষয়ে তাদের জানানো হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য ৩০ জন আনসারের কথা বলা হয়েছে। এটির প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। শয্যা বাড়ানোর আগে জনবল বাড়ানো প্রয়োজন।
শুরুতে এটি কেবল একটি ডিসপেনসারি হিসেবে যাত্রা শুরু করে। তবে ১৯০১ সালে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হিসেবে এর কার্যক্রম শুরু হয়। সে সময় জেলা সদর হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত এই হাসপাতাল ১৯৮৬ সালে ৮০ শয্যা এবং পরে ১৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে জনবল থেকে যায় ১০০ শয্যার। সেই পুরোনো জনবল কাঠামোতেই সর্বশেষ ২০১২ সালে হাসপাতালটিতে ২৫০ শয্যার সেবা শুরু হয়। তবে এখনো জনবল সে–ই অর্ধেক।
হাসপাতাল–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শয্যা ২৫০টি হলেও এখানে চিকিৎসক ও নার্স আছেন প্রয়োজনের তুলনায় তিন ভাগের এক ভাগ। আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ও কনসালট্যান্ট মিলিয়ে ৪০ থেকে ৪২ জন চিকিৎসক আছেন। অথচ ২৫০ শয্যার হাসপাতালের জনবলকাঠামো অনুযায়ী ৬৫ থেকে ৬৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা। পদ সৃষ্টি না হওয়ায় নতুন করে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তবে চিকিৎসকদের মতে, যে সংখ্যক রোগী এখানে আসেন, এর জন্য ১০০ জনের বেশি চিকিৎসক প্রয়োজন। নেই পর্যাপ্ত নার্স ও মিডওয়াইফও।
এ ছাড়া হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জামেরও সংকট রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমআরআই মেশিন বর্তমানে নষ্ট। ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিনও প্রায় সময় অচল থাকে। এ ছাড়া নিয়মিত বিভিন্ন পরীক্ষার জন্যও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা। তবে এসবের মধ্য দিয়েই চলছে রোগীর সেবা। মূলত বাজেট বরাদ্দ না থাকায় যন্ত্রপাতি কেনায় অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে সংকট সত্ত্বেও বহির্বিভাগের সেবার মান নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন রোগীরা। তবে বিভিন্ন সময় এসে টিকা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন কয়েকজন রোগী। এ বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে সেবা নিয়েছেন ২ লাখ ৭০ হাজার ৮৭২ জন রোগী। জরুরি সেবা নিয়েছেন প্রায় ৩৮ হাজার রোগী।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আশিক আমান প্রথম আলোকে বলেন, জনবল স্বল্পতাসহ বিভিন্ন কারণে রোগীদের পুরোপুরি সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যে সংখ্যক চিকিৎসক থাকার কথা, তার তিন ভাগের এক ভাগ দিয়ে সেবা চলছে। চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো হলে পুরোপুরি সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
হাসপাতালে বিভিন্ন চাহিদা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেনারেল হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ও বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক সেখ ফজলে রাব্বি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শয্যা বাড়লেও সেখানে পদ বাড়ানো হয়নি। নিরাপত্তার জন্য তাঁদের ৩০ জন আনসার অনুমোদন করা হয়েছে। বাকি বিষয়গুলো মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে।