রাজশাহীর চারঘাটে মাছের জন্য ইজারা নেওয়া রেলের জলাশয়ে গোডাউন ও অফিস নির্মাণের পাঁয়তারা চলছে। এরই মধ্যে কালভার্টের মুখ বন্ধ করে ওই জলাশয়ের অর্ধেক ভরাট করেছেন হুমায়ুন কবির নামে এক ব্যবসায়ী। স্থানীয়রা অভিযোগ জানালেও ভরাট বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। 
হুমায়ুন কবিরের দাবি, কালভার্টের মুখ দিয়ে পানি চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হবে। তা ছাড়া পুরো জায়গাটি ভরাট করা হবে না। অনেক টাকা খরচ করে রেল কর্তৃপক্ষ থেকে নিজ নামে বাণিজ্যিক লাইসেন্স নিয়েছেন। তবে এ-সংক্রান্ত কাগজ দেখতে চাইলে তিনি রাজি হননি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক শাহসুফী নুর মোহাম্মদ বলেন, রেলের জমি সাবলিজ কিংবা জমির শ্রেণির পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই।  জলাশয় ভরাটের অনুমোদন দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। 
১৯২৯ সালে নন্দনগাছী স্টেশনটি স্থাপিত হয়। জনবল সংকটের কারণে স্টেশনটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় ২০১৫ সালে। বর্তমানে এই স্টেশনে লোকাল ট্রেন থামলেও কোনো জনবল নেই। এ সুযোগে প্রভাবশালীরা ইচ্ছেমতো রেলওয়ের জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করছে। তাদেরই একজন হুমায়ুন কবির। তাঁর লোকজন রেললাইন ঘেঁষে রেলের জলাশয়ের পশ্চিম অংশ ভরাট করছে। সেখানে পোলট্রির গোডাউন করা হবে। এ কাজ করার আগে রেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেননি ওই পোলট্রি ব্যবসায়ী। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ১৯৯০ সালে রেলের এক একর জলাশয় লিজ নেন সওবান আলী ও পলাশ আলী নামে দুই ভাই।  সম্প্রতি তাদের কাছ থেকে ৫০ শতক জায়গা সাবলিজ নেন হুমায়ুন কবির। যদিও রেলের জমি সাবলিজ দেওয়ার বিধান নেই।  হুমায়ুন জমিটি রেলের কাছ থেকে নিজে লিজ নিয়েছেন বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগের ফিল্ড কানুনগো শরিফুল ইসলাম বলেন, হুমায়ুন কবির নিজের নামে লিজ চাইলেও তাঁকে দেওয়া হয়নি। সেই জমি পলাশ আলীর নামেই লিজ রয়েছে। তাঁকে (হুমায়ুনকে) জলাশয় ভরাটের কাজ বন্ধ করতে বলা হয়েছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
নন্দনগাছী বাজারের ব্যবসায়ী মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, বর্ষাকালে নন্দনগাছী বাজারের সব পানি রেলওয়ের জলাশয় হয়ে কালভার্ট দিয়ে পার্শ্ববর্তী বিলে নেমে যায়। জলাশয় ভরাট করায় পানি নামতে পারবে না। এতে বাজারে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। রেল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানালে তারা পরিদর্শন করে চলে যায়। আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি। 
শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, এমনিতে বর্ষায় কয়েক মাসজুড়ে নন্দনগাছী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ জলাবদ্ধ থাকে। এরপর আবার একের পর এক জলাশয় দখল হয়ে যাচ্ছে। জলাশয় ভরাট বন্ধ না করলে ভোগান্তি আরও বাড়বে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) উপজেলা আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০ দিন ধরে প্রভাবশালীরা দাঁড়িয়ে থেকে রেলের জলাশয় ভরাট করছে। রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে এমনটি হচ্ছে। এজন্য বারবার অভিযোগ দিলেও কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এতে জলাবদ্ধতার পাশাপাশি রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ারও শঙ্কা রয়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ভরাট কাজের শুরুতেই স্থানীয়রা অভিযোগ জানালে ফিড ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবিরকে নিষেধ করা হয়েছে। সে ভরাট কাজ বন্ধ করেনি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র লওয় র ব যবস থ ব যবস য় ম বল ন ভর ট ক

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যয় বাড়ল ১৪৪ কোটি টাকা

‘খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ’ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয় ২০১১ সালে। ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। এর পর আটবার প্রকল্পের সময় বেড়েছে, দুই দফা সংশোধনের পর ব্যয় বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। এ অবস্থায় প্রকল্পটি শেষ হওয়া নিয়ে হতাশা দেখা দেয়। 
আশার কথা, নতুন জেলা কারাগারের কাজ শেষ হয়েছে। গত ২৫ মে গণপূর্ত বিভাগের কাছ থেকে নতুন কারাগারটি বুঝে নেওয়ার কথা ছিল কারা কর্তৃপক্ষের। কিছু কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় হস্তান্তর হয়নি। চলতি জুন মাসে যে কোনো সময় নতুন কারাগার হস্তান্তরের কথা রয়েছে। জনবল পদায়ন হলেই নতুন কারাগারে বন্দি স্থানান্তর শুরু হবে।
১৯১২ সালে নগরীর ভৈরব নদীতীরে নির্মাণ করা হয় খুলনার প্রথম কারাগার। সেখানে বন্দি ধারণক্ষমতা ৬৭৮ জনের। রয়েছেন ১ হাজার ৪শর বেশি বন্দি। ১১৩ বছরের পুরোনো জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হয় তাদের। এসব বিবেচনায় নিয়েই নতুন কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
খুলনার সিটি (রূপসা সেতু) বাইপাস সড়কের জয় বাংলা মোড়ের অদূরে প্রায় ৩০ একর জমির ওপর নতুন কারাগার নির্মাণ হচ্ছে। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী নতুন কারাগারে ৪ হাজার বন্দি থাকতে পারবেন। প্রকল্পের আওতায় আপাতত ২ হাজার বন্দি রাখার অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। পরে প্রয়োজন পড়লে পৃথক প্রকল্প নিয়ে অন্য অবকাঠামো নির্মাণ হবে।
নতুন কারাগার হবে সংশোধনাগার
কারাগার ঘুরে দেখা গেছে, ভেতরে সাজানো-গোছানো অভিজাত আবাসিক এলাকার মতো পরিবেশ। রং দেওয়া নতুন ভবন, পথের ধারে 
ফুল, দামি পার্কিং টাইলস দেওয়া ফুটপাত ধরে হাঁটলে এটি কারাগারই মনে হয় না। নতুন এ কারাগার নির্মাণ হচ্ছে সংশোধনাগার হিসেবে। এখানে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের পৃথক স্থানে রাখা হবে। কিশোর ও কিশোরী বন্দিদের জন্য রয়েছে পৃথক ব্যারাক। নারীদের জন্য পৃথক হাসপাতাল, মোটিভেশন সেন্টার ও ওয়ার্কশেড আছে। একইভাবে বন্দিদের জন্য ৫০ শয্যার হাসপাতাল থাকবে। 
আরও থাকবে কারারক্ষীদের সন্তানদের জন্য স্কুল, বিশাল লাইব্রেরি, ডাইনিং রুম, আধুনিক স্যালুন ও লন্ড্রি। কারাগারে শিশুসন্তানসহ নারী বন্দিদের জন্য থাকবে পৃথক ওয়ার্ড ও ডে-কেয়ার সেন্টার। এ ওয়ার্ডটিতে সাধারণ নারী বন্দি থাকতে পারবেন না। সেখানে শিশুদের জন্য লেখাপড়া, খেলাধুলা, বিনোদন ও সংস্কৃতি চর্চার ব্যবস্থা থাকবে। কারাগারে পুরুষ ও নারী বন্দিদের হস্তশিল্পের কাজের জন্য আলাদা আলাদা ওয়ার্কশেড, বিনোদন কেন্দ্র ও নামাজের ঘর রয়েছে। মোট ৫২টি স্থাপনা রয়েছে এ কারাগারে। 
গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাশিদুল ইসলাম জানান, বন্দিদের প্রতিটি ব্যারাকের চারপাশে পৃথক সীমানাপ্রাচীর রয়েছে। এক শ্রেণির বন্দিদের অন্য শ্রেণির বন্দিদের সঙ্গে মেশার 
সুযোগ নেই। কারাগারের ভেতরে শুধু সীমানাপ্রাচীরই রয়েছে প্রায় ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের। ভেতরে ড্রেন, ফুটপাত, নিজস্ব পয়োবর্জ্য শোধন কেন্দ্র, ওয়াকওয়ে, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা, দুটি পুকুর ও সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সবকিছুর কাজ শেষ।
সময় বেড়েছে আটবার, ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ
২০১১ সালের অনুমোদিত খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১৪৪ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ৬ জুন প্রকল্পটি প্রথম দফা সংশোধন করা হয়। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৫১ কোটি টাকা। নতুন লক্ষ্য নেওয়া হয় ২০১৯ সালের ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার। এর পর পাঁচ দফায় পাঁচ বছর সময় বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু কাজ আর শেষ হয়নি। ২০২৩ সালের মে মাসে দ্বিতীয় দফায় প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছে। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮৮ কোটি টাকায়।
হস্তান্তর ও চালু কবে
খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, নতুন কারাগারের সব কাজ শেষ। কয়েকটি স্থাপনায় রঙের শেষ প্রলেপসহ টুকটাক কাজ বাকি রয়েছে। আগে করলে এসব নষ্ট হয়ে যাবে। এ কারণে হস্তান্তর তারিখ নির্ধারণ হলেই এসব কাজ করা হবে। 
খুলনার জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান বলেন, কিছু কাজ বাকি ছিল, সেগুলো শেষ করতে বলা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে চলতি জুন মাসেই আমরা কারাগার বুঝে নেব। তিনি আরও বলেন, কারাগার পরিচালনার জন্য ৬০০ জনবলের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পুরোনো কারাগারে প্রায় ২০০ জনবল রয়েছে। স্থাপনা বুঝে নেওয়ার পর কারাগার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্যয় বাড়ল ১৪৪ কোটি টাকা