আদালতের আদেশ অমান্য করে সিদ্ধিরগঞ্জে জমি দখল ও চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে শায়লা বেগম নামে এক যুব মহিলা লীগ নেত্রী ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী অ্যাডভোকেট মো. শাহ আলম মানিক বাদী হয়ে শনিবার নয় জনের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। 

অভিযুক্তরা হলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৬নং ওয়ার্ড যুব মহিলালীগ নেত্রী শায়লা বেগম (৩৭), আবুল (৬০), বাবুল (৫০), জুলহাস (৪২), দুলাল (৪০), সেলিম (৩৭), রনি (৩০), রাব্বি (২৫) ও অনিক (২৭)। 

অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল মৌজায় ১৫.

৩৪ শতাংশ সম্পত্তি ক্রয়সূত্রে মালিক তিনি। অভিযুক্তরা এই সম্পত্তি নিজেদের দাবি করে জোরপূর্বক দখলে নেয়।

শাহ আলম মানিকের ওই জমিতে থাকা ফলজ গাছ কেটে অভিযুক্তরা টিনশেডের ঘর নির্মানের চেষ্টা করলে তিনি বাঁধা প্রদান করেন। তিনি বাঁধা দিলে তাকে প্রাণ নাশ এবং লাশ গুমের হুমকি প্রদান করা হয়।

শাহ আলম মানিক বলেন, অভিযুক্তরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। ২০২০ সালে আওয়ামী লীগের প্রভাব দেখিয়ে তারা আমার জমি দখল করে নেয়। আমি থানায় অভিযোগ দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। তখন অভিযুক্তরা পুলিশের উপর হামলা করে।

এ ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়। গত ২১ মার্চ অভিযুক্তরা পুনরায় ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করলে আমি আদালত কর্তৃক আমার পক্ষে রায়ের কপি নিয়ে গেলে তারা আদালতের আদেশ মানবে না বলে আমার সাথে মারমুখী আচরণ করে। এসময় অভিযুক্তরা আমার নিকট ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। 

এদিকে অভিযুক্তদের রাব্বি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমরাও থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। আমরা কোনো আইন অমান্য করিনি।

এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সালেকুজ্জামান বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। এ বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে। 

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি শাহিনূর আলম বলেন, এ ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
 

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ স দ ধ রগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

সাংবাদিক পরিচয়ে গেস্ট হাউসের কক্ষে কক্ষে তল্লাশি, দম্পতির কাছে বিয়ের প্রমাণ দাবি

চট্টগ্রামে একটি গেস্ট হাউসে সাংবাদিক পরিচয়ে ক্যামেরা নিয়ে তল্লাশি চালানোর ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে হান্নান রহিম তালুকদার নামের একটি ফেসবুক আইডিতে এটি আপলোড হয়। ১৫ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের এই ভিডিও আপলোডের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেটি ছড়িয়ে পড়ে। গেস্ট হাউসে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে কক্ষে কক্ষে অতিথিদের নাম-পরিচয়, জিজ্ঞাসাবাদ করা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, সাংবাদিক পরিচয়ে এভাবে কক্ষে কক্ষে গিয়ে তল্লাশি চালাতে পারেন কি না কেউ? পুলিশও বলছে, এ ধরনের অভিযান চালানোর এখতিয়ার সাংবাদিকের নেই। তারা আইনগত ব্যবস্থা নেবে।

হান্নান রহিম তালুকদার নিজের ফেসবুক আইডিতে পরিচয় দিয়েছেন, দৈনিক চট্টগ্রাম সংবাদের সম্পাদক ও সিএসটিভি২৪–এর চেয়ারম্যান। ফেসবুকের দেওয়া বিভিন্ন ছবি-ব্যানারে নিজেকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য বলে উল্লেখ করেছেন। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রেসক্লাবের সদস্য নন তিনি। এ ছাড়া ফেসবুকে বিভিন্ন সময়ে নগর ও জেলার বিএনপির নেতাদের সঙ্গে ছবি, ভিডিও আপলোড করেছেন তিনি। নিজেকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্যসচিব পদপ্রার্থী উল্লেখ করে পোস্টার ও ব্যানার ছবি পোস্ট করেছেন।

ভিডিওতে দেখা যায়, সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে নগরের বহদ্দারহাটে একটি গেস্ট হাউসের প্রধান ফটকের দরজা খোলা হয়। গেস্ট হাউসের অভ্যর্থনাকক্ষে গিয়ে কক্ষে অতিথি কারা কারা আছেন, জানতে চান ওই ব্যক্তি। একপর্যায়ে ক্যামেরা নিয়ে বিভিন্ন কক্ষে গিয়ে সেখানে থাকা অতিথিদের বের করে আনা হয়। তাঁদের কাছে পরিচয় জানতে চাওয়া হয়। কেন, কার সঙ্গে এসেছেন—এসব প্রশ্নও করা হয়।

একজন অতিথি স্ত্রীকে চিকিৎসক দেখানোর জন্য এসেছেন বলে জানান। তাঁর কাছে স্ত্রীর নাম এবং স্ত্রীর কাছে শ্বশুরের নাম জানতে চাওয়া হয়। তাঁরা এসব উত্তর ঠিকঠাক দেওয়ার পরও আবার প্রশ্ন করা হয়, আপনারা যে স্বামী-স্ত্রী, তা কি নিশ্চিত? সেখান থেকে আবার হোটেলের অভ্যর্থনাকক্ষে গিয়ে রেজিস্টার খাতা যাচাই করেন তিনি। এরপর একটি কক্ষে নিয়ে যেতে বলেন হোটেলের কর্মচারীদের। ওই কক্ষের সামনে গিয়ে কড়া নাড়ার পর দরজা খোলা হয়। একজন তরুণ বেরিয়ে এলে কক্ষে আর কে আছেন, জানতে চাওয়া হয় তাঁর কাছে। এ সময় এক তরুণীকে দেখা যায়। তাঁদের পরিচয়পত্র দেখতে চান তিনি। দুজনকে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁরা দুজন বিবাহিত বলে জানান। কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি বলেন, তাঁদের বিয়ে হয়নি। সঠিক তথ্য নিয়ে তিনি এখানে এসেছেন।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সবুর শুভ প্রথম আলোকে বলেন, ‘হান্নান রহিম তালুকদার নামের ওই ব্যক্তি চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য নন। আমাদের সদস্য হলে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে পারতাম। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত এসব অপসাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। একজন সাংবাদিক অভিযানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে প্রতিবেদন তৈরির জন্য যেতে পারেন, কিন্তু নিজে কখনো অভিযান চালাতে পারেন না।’

সবুর শুভ আরও বলেন, নাগরিকের জান, মাল, সম্মান রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কোনো অবস্থাতেই একজন সাংবাদিক গেস্ট হাউসে গিয়ে কক্ষে কক্ষে তল্লাশি চালাতে পারেন না। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে প্রকাশ্যে ভিডিও করে আবার এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অপরাধী হয়েছেন। অবশ্যই এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত পুলিশের।

জানতে চাইলে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব উদ্দিন আজ রাতে প্রথম আলোকে বলেন, গেস্ট হাউসে এভাবে কক্ষে কক্ষে গিয়ে তল্লাশি চালাতে পারেন না কোনো সাংবাদিক। কোনো গেস্ট হাউস কিংবা হোটেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। ইতিমধ্যে এলাকাবাসীর সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। নিরীহ কাউকে হয়রানি করা হয়নি, সমাজের জন্য যারা ক্ষতিকর, ক্ষতি করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

একজন অতিথি স্ত্রীকে চিকিৎসক দেখানোর জন্য এসেছেন বলে জানান। তাঁর কাছে স্ত্রীর নাম এবং স্ত্রীর কাছে শ্বশুরের নাম জানতে চাওয়া হয়। তাঁরা এসব উত্তর ঠিকঠাক দেওয়ার পরও আবার প্রশ্ন করা হয়, আপনারা যে স্বামী-স্ত্রী, তা কি নিশ্চিত? সেখান থেকে আবার হোটেলের অভ্যর্থনাকক্ষে গিয়ে রেজিস্টার খাতা যাচাই করেন তিনি। এরপর একটি কক্ষে নিয়ে যেতে বলেন হোটেলের কর্মচারীদের। ওই কক্ষের সামনে গিয়ে কড়া নাড়ার পর দরজা খোলা হয়। একজন তরুণ বেরিয়ে এলে কক্ষে আর কে আছেন, জানতে চাওয়া হয় তাঁর কাছে। এ সময় এক তরুণীকে দেখা যায়। তাঁদের পরিচয়পত্র দেখতে চান তিনি। দুজনকে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁরা দুজন বিবাহিত বলে জানান। কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি বলেন, তাঁদের বিয়ে হয়নি। সঠিক তথ্য নিয়ে তিনি এখানে এসেছেন।

এক প্রশ্নের উত্তরে ওসি আফতাব উদ্দিন বলেন, ভিডিওটি দেখার পর পুলিশ গেস্ট হাউস কর্তৃপক্ষের জন্য যোগাযোগ করেছে। তাদের মামলা দিতে বলেছে। কিন্তু তারা মামলা দিতে আসছে না। তারা না এলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।

জানতে চাইলে হান্নান রহিম তালুকদার আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিন প্রতিবেদন করেছি। এলাকাবাসী মানববন্ধন করবে গেস্ট হাউসটির বিরুদ্ধে।’ একজন সাংবাদিক কক্ষে কক্ষে গিয়ে তল্লাশি চালাতে পারেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আর রাজী প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনোভাবেই সাংবাদিক এ ধরনের কাজ করতে পারে না। এটি খুবই ভয়ংকর কাজ। এমনকি হোটেল কর্তৃপক্ষও এভাবে ভিডিও ধারণ করতে পারে না। অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত ভিডিও ধারণ, জেরা করা একই সঙ্গে পেনাল কোডের ৪৪২ ও ৪৪৮–এর লঙ্ঘন। ভুক্তভোগী ব্যক্তি মানহানি ও হয়রানির মামলাও করতে পারেন। আইসিটি বা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টেরও লঙ্ঘন ঘটেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের আচরণবিধিতেও বলা আছে, সাংবাদিককে আইন মানতে হবে। আইন মেনে কাজ করতে হবে। এসব কারণে এই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা হয়ে যেতে পারে।’

তাহলে সাংবাদিকেরা অনুসন্ধান কীভাবে করবেন, এ প্রশ্নের জবাবে শিক্ষক আর রাজী বলেন, ‘সাংবাদিক বিচারকও নন, আবার পুলিশও নন। এই সীমাবদ্ধতা নিয়েই সাংবাদিকতা করতে হয়। যদি কোনো সাংবাদিক মনে করেন কোথাও বেআইনি কাজ হচ্ছে, তাহলে দ্বিতীয় কোনো সোর্স থেকে তথ্য যাছাই করতে পারেন। আর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা রয়েছে—এমন কাউকে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন। অথবা যেতে বাধ্য করতে পারেন। অভিযানের নামে এ ধরনের আইন ও নীতি পরিপন্থী কাজ করার কোনো সুযোগ নেই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ