দেশের কোথাও শেখ পরিবারের নামফলক থাকতে পারবে না: অলি আহমদ
Published: 24th, March 2025 GMT
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেছেন, দেশের কোথাও শেখ পরিবারের নামফলক থাকার সুযোগ নেই, কারণ তারা দেশদ্রোহী। আওয়ামী লীগ রাজনীতি করার অধিকারও হারিয়েছে।
অলি আহমদ আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ও শেখ পরিবার যে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল। তারা গণহত্যাকারী দল। দ্রুত তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে।
আজ সোমবার দুপুরে এলডিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
অন্তর্বর্তী সরকার সুপরামর্শ গ্রহণ করছে না, এমন অভিযোগ করে অলি আহমদ বলেন, ‘অতীতে আমরা ১২৭টি প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা জানি না, প্রধান উপদেষ্টা এগুলো দেখেছিলেন কি না, না দেখলে দেখার অনুরোধ করব। আমাদের পরামর্শ এলডিপি কিংবা কোনো রাজনৈতিক দলের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য নয়; বরং এটা জনগণের ভালোর জন্য।’
অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে এলডিপির শীর্ষ নেতা বলেন, সরকার গঠনের আট মাস পরে এখনো টাকায় মুজিবের ছবি কেন? মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানের কোনো অবদান নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দেশে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করে তাঁদের অনৈতিক সুবিধাগুলো অনতিবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানান অলি আহমদ। তাঁরা জনগণের করের টাকায় অবৈধ সুবিধা কেন নেবেন, এমন প্রশ্ন তুলে তিনি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ করার দাবি জানান।
আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার ‘পালিত খুনি বাহিনীর’ কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে উল্লেখ করে অলি আহমদ বলেন, ‘অভিযুক্ত ডিসি ওসিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাঁদের শাস্তি হচ্ছে না কেন?’ তিনি মনে করেন, গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিতে হবে।
দেশের ইতিহাসে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান পৃথক অস্তিত্ব বহন করে উল্লেখ করে এলডিপির সভাপতি বলেন, একাত্তর ও চব্বিশ দুটো এক জিনিস এক নয়। অনেকে দুটি প্রেক্ষাপটকে একীভূত করে বিবেচনা করছেন। কিন্তু এটা পাগলামির শামিল। দুই ইতিহাসের কোনোটিকে হেয়প্রতিপন্ন করার সুযোগ নেই।
দেশ গড়তে প্রবীণদের ভূমিকা উল্লেখ করে অলি আহমদ বলেন, নবীনদের মেধা ও যোগ্যতার সঙ্গে প্রবীণদের অভিজ্ঞতাকে মূল্যায়ন করতে হবে। স্বপ্নের দেশ গড়তে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই।
সংবাদ সম্মেলনে সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যবহৃত গাড়ির তালিকা তৈরি, বিচার বিভাগের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ, রাস্তার ওপর বসানো হাটবাজার উচ্ছেদ, দুর্নীতি বন্ধে অনলাইনে টেন্ডার আয়োজন, মানুষকে উন্নত সেবা দিতে বিশেষায়িত একাধিক হাসপাতাল স্থাপন এবং দেশের উন্নয়নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান অলি আহমদ।
সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেয় এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য নেয়ামূল বশির, আওরঙ্গজেব বেলাল, কে কিউ সাকলায়েন ও অধ্যাপক ওমর ফারুক। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন এলডিপির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।
সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।
পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।
বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।
এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।
আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)