নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠকের পদ পাওয়ার পর থেকেই সারজিস আলমের ছবিসংবলিত পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে পঞ্চগড়। এসব পোস্টারে এনসিপি ও সারজিসের পক্ষ ঈদ শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। এবার নিজ জেলা পঞ্চগড়ে ব্যান্ড পার্টি বাজিয়ে শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে বিরাট শোডাউন করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক থেকে রাজনৈতিক নেতা বনে যাওয়া সারজিস। এনসিপিতে কমিটির পদ পাওয়ার পর এই প্রথম আজ সোমবার নিজ জেলা পঞ্চগড়ে গেলেন তিনি। 

নেতা হিসেবে পঞ্চগড়বাসীর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতেই বিলাসবহুল সব গাড়ি নিয়ে সারজিসের এই শোডাউনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। পুরোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের কথা বলে নেতা হওয়া সারজিস নিজেই তাঁর কথার বরখেলাপ করছেন কিনা উঠেছে প্রশ্ন। 

বিগত সময়ে কোনো রাজনৈতিক নেতা তাঁর এলাকায় গেলে বিরাট শোডাউন করতে দেখা যেত নেতাকর্মীকে। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা তো এলাকায় গেলে নানা স্তুতি দিয়ে ভরা লেখা তোরণে তোরণে ভরে যেত পথঘাট। আওয়ামী লীগের পতনের পর বিএনপি নেতাদেরও বিভিন্ন এলাকায় নানাভাবে শোডাউন করতে দেখা গেছে; যা নিয়ে অভ্যুত্থানে জড়িত ছাত্রনেতা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও সমালোচনা করেছেন। শেষ পর্যন্ত বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে নেতাকর্মীকে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলে গাড়ি, মোটরসাইকেল শোডাউন বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়। দলটির অনেক নেতাই এ নির্দেশনা না মানায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয় দলটি। তারপরও বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকে নির্দেশনা মানতে দেখা যায়নি। কিন্তু নবগঠিত এনসিপির এক নবীন নেতাও যে এভাবে শোডাউন করবেন তা পঞ্চগড়ের অনেকে কল্পনা করতে পারেননি। 

গতকাল সোমবার দুপুরে বিলাসবহুল গাড়ির বিশাল বহর নিয়ে নীলফামারী হয়ে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ আসেন সারজিস। পরে বোদা হয়ে তেঁতুলিয়ায় পৃথক সভা করেন। এ দিন চার উপজেলায় চারটি পথসভায় বক্তব্যের কথা ছিল সারজিসের। সময়ের অভাবে পঞ্চগড় শহরের পথসভা বাতিল করে আটোয়ারী পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।

দেবীগঞ্জ ও বোদায় পথসভায় বক্তব্যে সারজিস বলেন, ‘আগামীর বাংলাদেশে কেউ আর দলের নাম ও মার্কা দেখে ভোট দেবে না। এতদিন সাধারণ মানুষকে নেতারা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করেছেন। ভোটের আগের দিন যান আর কিছু টাকা ধরিয়ে দেন। ভোটের পরে যে কোনো কাজের জন্য গেলে, আগে টাকার জন্য হাত পেতে থাকেন। নতুন বাংলাদেশে এগুলো হতে দেওয়া যাবে না।’ 

স্থানীয়দের উদ্দেশে সারজিস বলেন, ‘আমরা ভুল করলে শুধরে দেবেন। কোনো দলের অন্ধ ভক্ত হবেন না। অন্ধ ভক্ত হলে আপনার মূল্য কেউ দেবে না। আমরা আপনাদের কাছে মার্কা নিয়ে যাব, যদি আপনাদের কথা রাখতে পারি তাহলে আমাদের ভোট দেবেন। পঞ্চগড় আমার জন্মভূমি তাই আপনাদের কাছে আমার আলাদা দাবি আছে।’

বিকেলে তেঁতুলিয়ায় পথসভা শেষে তাঁর নিজ এলাকা আটোয়ারী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দেন সারজিস। ইফতার শেষে তিনি বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। 

এর আগে সকালে নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নেমে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন সারজিস। দেশের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ প্রত্যাশিত নয় বরং তারা দেশের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা ও দায়িত্ব পালন করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সারজিস দাবি করেন, সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে তাদের (এনসিপি) মধ্যে কোনো মতানৈক্য নেই। এ সময় তিনি ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ বা অন্য যে কোনো নামে আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার গল্প যাতে কেউ না শোনায় এ আহ্বান জানান। গুজবকে ব্যাধি উল্লেখ করে তরুণ এ নেতা বলেন, গুজববিরোধী সেল তৈরির জন্য সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি জনগণকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এনস প র জন ত ক এনস প আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি থাকতে হবে: নাহিদ 

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “জুলাই সনদ হতে হবে, জুলাই সনদের ভিত্তিতেই নির্বাচন হবে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি থাকতে হবে। নির্বাচিত যে সরকার আসুক এই সদন বাস্তবায়নে বাধ্যবাধকতা থাকবে।”  

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যায় গাজীপুরের রাজবাড়ি সড়কে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’র সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। 

নাহিদ ইসলাম বলেন, “৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র হতেই হবে। এর বিকল্প আমরা দেখতে চাই না। সরকার সনদের খসড়া প্রকাশ করেছে। জুলাই সনদ শুধু সংস্কার হলে হবে না, এটি কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, সে বিষয়ে ঐক্যমত হতে হবে।” 

আরো পড়ুন:

ভাসানীরা না থাকলে শেখ মুজিব কখনো তৈরি হতেন না: নাহিদ

গণঅভ্যুত্থান না হলে নির্বাচনের স্বপ্নই দেখতে পারতেন না: নাহিদ

তিনি বলেন, “আমরা আশা করছি, ৫ আগস্টের আগেই অন্তবর্তীকালীন সরকার এবং সব রাজনৈতিক দল জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে পারবেন। আমরা সবাই মিলে আকাঙ্ক্ষিত গণঅভ্যুত্থানের একবছর উদযাপন করতে পারব।” 

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, কেন্দ্রীয় সংগঠক আব্দুল্লাহ আল মুহিম, মো. মহসিন উদ্দিন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গাজীপুরের সাবেক আহ্বায়ক নাবিল আল ওয়ালিদ।

এনসিপির পথসভাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সকাল থেকে গাজীপুরের বিভিন্ন মোড়ে ও সমাবেশস্থলে বিপুল সংখ্যক  আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য উপস্থিত ছিলেন। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রাতে সন্দেহভাজনদের তল্লাশি করা হয়। রাজবাড়ীর সড়কে বন্ধ থাকে সব ধরনের যান চলাচল। 

এর আগে, এনপিপির কেন্দ্রীয় নেতরা টাঙ্গাইলের পথসভা শেষে গাজীপুরে কালিয়াকৈরে উপজেলা হয়ে শ্রীপুর উপজেলার মাওনা যান। সেখানে বিকেলে পথসভা শেষে গাজীপুর শহরের রাজবাড়িতে আসেন তারা।

ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভবিষ্যতে কেউ স্বৈরাচার হলে পরিণতি শেখ হাসিনার মতো হবে: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
  • শেখ হাসিনাকে ১০ বার ফাঁসিতে ঝোলালেও তাঁর অপরাধ কমবে না: নাহিদ ইসলাম
  • ৩ আগস্ট নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার ঘোষণা
  • জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি থাকতে হবে: নাহিদ
  • জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি থাকতে হবে: নাহিদ