রাফিনিয়াকে চোখ রাঙিয়ে ফার্নান্দেজ বললেন, এই জয় বাংলাদেশের জন্যও
Published: 26th, March 2025 GMT
বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের অনেকেই গতকাল রাতে হয়তো ঠিকমতো ঘুমাতে পারেননি। ভোর ৬টায় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ। সেহরি খেয়ে মাঝে যে অল্প একটু সময়, তখন ঘুমিয়ে নেওয়ার সুযোগ খুব কম। তাই হয়তো জেগে ছিলেন অনেকেই। রাতজাগা চোখে আর্জেন্টিনার যেসব সমর্থকেরা ম্যাচটি দেখেছেন, তাঁদের ঘুম কামাই দেওয়া সার্থক। ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের এ ম্যাচে ব্রাজিলকে ৪-১ গোলে বিধ্বস্ত করেছে আর্জেন্টিনা। এ জয়ের পর আর্জেন্টিনার মিডফিল্ডার এনজো ফার্নান্দেজ ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের সমর্থকদের।
আরও পড়ুনকেমন খেলল আর্জেন্টিনা, কেমন ‘ছেলেখেলা’র শিকার হলো ব্রাজিল২ ঘণ্টা আগেমনুমেন্তাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এ ম্যাচে গোল করার পাশাপাশি একটি গোলও করিয়েছেন ফার্নান্দেজ। ৬৮ টাচের মধ্যে যেগুলো ড্রিবলিং করেছেন তাতে শতভাগ সফল। গোলের দুটো সুযোগ তৈরি করা ছাড়াও দুটি দারুণ পাসও দিয়েছেন চেলসি তারকা। সব মিলিয়ে গোটা ম্যাচেই দারুণ খেলেছেন ফার্নান্দেজ।
জয়ের পর ফার্নান্দেজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে বাংলাদেশের আর্জেন্টিনা সমর্থকদের প্রতি লেখা হয়, ‘অবিশ্বাস্য সমর্থন ও বার্তাগুলোর জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ। এই জয় আপনাদেরও।’
আর্জেন্টিনার প্রতি বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের ভালোবাসা সবার নজরে আসে ২০২২ বিশ্বকাপে। সেই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার খেলার সময় ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বড় পর্দায় হাজার হাজার মানুষের খেলা উপভোগ ও মেসি, দি মারিয়াদের সমর্থনে গলা ফাটানোর ব্যাপারটি বিশ্বকাপের শুরু থেকে আর্জেন্টিনার বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
বিশ্বকাপ জয়ের পর আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের এক্স হ্যান্ডলে বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানানো হয়, ‘ধন্যবাদ বাংলাদেশ। ধন্যবাদ কেরালা, ভারত ও পাকিস্তান। আপনাদের সমর্থন দুর্দান্ত ছিল।’ ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনিও। ২০২৩ ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপেও বাংলাদেশ দলকে শুভকামনা জানানো হয়েছিল আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) পক্ষ থেকে। তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে করা পোস্টে লেখা হয়েছিল, ‘আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩-এ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের যাত্রা শুরু করতে যাওয়ার আগে তাদের জন্য শুভকামনা রইল। চ্যাম্পিয়ন-সত্তাই তাদের জয়ের বন্দরে নিয়ে যাবে।’
আরও পড়ুনরাফিনিয়াকে ক্ষমা স্কালোনির, ব্রাজিল কোচের আত্মসমর্পণ৩ ঘণ্টা আগেফার্নান্দেজ নিজেও বাংলাদেশের ওপর নজর রাখেন। গত বছর জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়ে সহমর্মিতা প্রকাশ করেছিলেন ফার্নান্দেজ। বিশ্বকাপজয়ী এই তারকার ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজে লেখা হয়, ‘বাংলাদেশের আমার সব ভক্তকে বলছি, আমি তোমাদের কথা শুনছি, তোমাদের জন্য প্রার্থনা করছি।’
তখন তাঁর পেজ থেকে আরেকটি পোস্টে লেখা হয়, ‘বাংলাদেশে থাকা যেসব মানুষ ভোগান্তির মধ্যে আছেন, তাঁদের জন্য আমার প্রার্থনা ও সহমর্মিতা রইল।’
ব্রাজিলকে বিধ্বস্ত করার দিনে বাংলাদেশকে মনে করার পাশাপাশি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের তারকা রাফিনিয়াকেও এক হাত নিয়েছেন ফার্নান্দেজ। এই ম্যাচের আগে রাফিনিয়া আর্জেন্টিনাকে ‘গুঁড়িয়ে দেওয়া’র কথা বলেছিলেন। জয়ের পর এর জবাব হিসেবে ফার্নান্দেজের ফেসবুক পেজে করা পোস্টে লেখা হয়, ‘পরেরবার বিনয়ী থেকো রাফিনিয়া।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর জ ন ট ন র ব শ বক প জয় র পর ফ সব ক র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামে বছর শেষে বাড়ছে ডেঙ্গু, কমেছে চিকুনগুনিয়া
চট্টগ্রামে বছরের শেষে এসে আবারও বাড়ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম দুই দিনেই ৮৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা একটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪১ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গত বছরও এই সময়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েছিল। এদিকে বছরের শেষ দিকে এসে চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ কমেছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল শূন্য।
ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া—দুটিই মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। দুটিই এডিস মশার কামড়ে হয়। এডিসের বংশ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে বৃষ্টি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, নভেম্বরের শুরুতে লঘুচাপের কারণে বৃষ্টি হতে পারে। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
চট্টগ্রামে বছরের শুরু থেকে গতকাল বেলা একটা পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৯২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে গত অক্টোবর মাসে। পুরো জেলায় ওই মাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯৯০ জন। এর আগের মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৩৫। চলতি নভেম্বর মাসে এ সংখ্যা নির্ভর করছে বৃষ্টির ওপর। কারণ, শীত শুরু হলে এডিসের বংশবৃদ্ধির আশঙ্কা কম। তবে বৃষ্টি হলে সেটি বাড়তে পারে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।এদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত কমেছে। গতকাল পর্যন্ত জেলায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬৬৯। তবে চিকুনগুনিয়ায় মাসভিত্তিক তথ্য দেয়নি সিভিল সার্জন কার্যালয়। যদিও প্রতিদিনের আক্রান্তের হিসাব দেয় তারা। প্রাথমিক হিসাবে, গত সেপ্টেম্বর মাসে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭০৪। গত অক্টোবর মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১২১ জন। এ মাসে কেবল একজন।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।
এদিকে গত বছরের তুলনায় এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের উপসর্গগুলোও কিছুটা ভিন্ন বলে জানা গেছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৪১ জন রোগী জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ জন ভর্তি হয়েছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) এবং ১২ জন ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।এ এস এম লুৎফুল কবির, মেডিসিন বিভাগের প্রধান, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালচিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা গেছে। তবে এ বছর যাঁরা আসছেন, তাঁদের মধ্যে শক সিনড্রোম বেশি। পাশাপাশি ডায়রিয়ার উপসর্গও আছে। শক সিনড্রোম হলে রোগীর রক্তচাপ বোঝা যায় না। এই দুটি উপসর্গ গুরুতর। কারণ, সময়মতো ফ্লুইড (তরল খাবার) না পেলে রোগীর অবস্থা আরও গুরুতর হতে পারে।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান এ এস এম লুৎফুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।’
চলতি বছর এপ্রিল থেকে মোটামুটি বৃষ্টি হচ্ছে। জুনে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হলেও পরের মাসগুলোয় স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়। আর থেমে থেমে বৃষ্টির সঙ্গে গরম কিন্তু কমেনি। এই বৃষ্টি ও উচ্চ তাপমাত্রা চলতি বছর ডেঙ্গুর বিস্তারে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন কীটতত্ত্ববিদেরা। তবে সংক্রমণ কমাতে সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
নগরের ২৫টি এলাকাকে ডেঙ্গু ও ২৫টি এলাকাকে চিকুনগুনিয়ার জন্য হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এর মধ্যে বন্দর, ইপিজেড, হালিশহর, কোতোয়ালি, বায়েজিদ, পাহাড়তলী, কাট্টলী, খুলশী, ডবলমুরিং, লালখান বাজার, আগ্রাবাদ, চান্দগাঁও, দেওয়ানহাট, আন্দরকিল্লা, মুরাদপুর, সদরঘাট—এসব এলাকায় ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এসব এলাকায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।
সিটি করপোরেশনের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সরফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিশেষ দল করা হয়েছে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার জন্য। নিয়ম করে এলাকা ভাগ করে রুটিন অনুযায়ী ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।’
চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত বৃষ্টি হওয়ার ২৮ দিন পর্যন্ত মশার প্রকোপ থাকে বলে ধারণা করা হয়। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এ মাসে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এতে ডেঙ্গু বাড়তে পারে।