প্রতিবছর ঈদের আগে-পরে কয়েক দিন যানবাহনের বাড়তি চাপ দেখা যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। এবারও তাঁর ব্যতিক্রম হয়নি। মহাসড়কে বেড়েছে যাত্রীবাহী যানবাহনের চলাচল। যদিও নেই চিরচেনা যানজট।

আজ শনিবার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়কে যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে নানা ধরনের যানবাহন। ঢাকামুখী লেনে গাড়ির চাপ তুলনামূলক বেশি। উভয় লেনেই পণ্যবাহী যানবাহনের চলাচল কমেছে।

যানবাহনের চাপ বাড়ার কারণে প্রায়ই যানজট দেখা দেয় মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশের নানা স্থানে। তবে সকালে মহাসড়কের বাড়বকুণ্ড, বাঁশবাড়িয়া, কুমিরাসহ নানা এলাকা ঘুরে কোথাও যানজট দেখা যায়নি। মহাসড়কে কথা হয় হাইওয়ে পুলিশের বার আউলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মোমিনের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মহাসড়ক নিরাপদ ও যানজটমুক্ত রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে হাইওয়ে পুলিশ। তিনি আরও বলেন, ঈদ উপলক্ষে ২৫ মার্চ থেকে ঈদ–পরবর্তী তিন দিন মহাসড়কে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লরি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে জরুরি খাদ্য, ওষুধ ও রপ্তানিযোগ্য পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত গাড়ি চলাচল করছে।

ফেরিতে চাপ কমেছে

সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাটে গত কয়েক দিন সন্দ্বীপগামী যাত্রী ও যানবাহনের চাপ দেখা গেলেও আজ সেটি কমে গেছে। চাপ নেই কুমিরা নৌঘাটেও। পর্যাপ্ত যাত্রী ছাড়াই সন্দ্বীপের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে জাহাজ এমভি আইভি রহমান।

সকাল আটটার দিকে বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাটে অপেক্ষা করতে দেখা যায় ১টি ট্রাক, ২টি মাইক্রোবাস, ১টি বাস, ৮টি পিকআপ, ১০ মোটরসাইকেল ও ৩টি ব্যক্তিগত গাড়ি। ঘাটে জাফর আহমদ নামের এক যাত্রী বলেন, অল্প সময়ের জন্য প্রথম ট্রিপের ফেরি ধরতে পারেননি তিনি। ফলে তাঁকে দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

একটি বাসের চালক মোহাম্মদ মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ৪৫ জন যাত্রী নিয়ে হালিশহর থেকে এসেছেন। মহাসড়কের কোথাও যানজট না থাকায় খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ফেরিঘাটে পৌঁছেছেন। যাত্রীপ্রতি সন্দ্বীপের এনাম নাহার পর্যন্ত পৌঁছাতে ভাড়া নিয়েছেন ৩০০ টাকা।

জোয়ার-ভাটায় পানির উচ্চতার ব্যাপক তারতম্যের কারণে আজ গাড়ি ফেরিতে উঠতে কিছু অসুবিধা হয়েছে। ফলে সকালের ট্রিপ ছেড়েছে সকাল সাড়ে ছয়টার পরিবর্তে সোয়া সাতটায়। ঘাটের শুল্ক আদায়কারী সাইফুল আহমেদ বলেন, সন্দ্বীপ থেকে ফিরে আসার পরে ১১টায় দ্বিতীয় ট্রিপ যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গাড়ি ও যাত্রীর তেমন চাপ নেই বলে জানান তিনি।

জেটির অদূরে নোঙর করা আছে জাহাজ। নৌকায় করে সেই জাহাজে যাচ্ছেন যাত্রীরা। আজ সকাল ১০টার দিকে কুমিরা ঘাটে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য নজট

এছাড়াও পড়ুন:

পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে

অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।

১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’

এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।

পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।

পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।

আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)

সম্পর্কিত নিবন্ধ