নিত্য যানজটে ভোগান্তির ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে স্বস্থির ঈদ যাত্রা। ঈদে ঘরমুখো মানুষের ঢলে যানজটের শঙ্কা কে পিছনে ফেলে স্বাভাবিক রয়েছে যান চলাচল। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ অংশে নেই কোন যানজট।

ফলে ঈদে ঘরমুখো মানুষ বেশ স্বস্তিতে বাড়ি যেতে পারছেন। তবে বিকেলের পরে যানবাহনের চাপ কিছুটা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ।

শনিবার (২৯ মার্চ) দুপুরে ঈদকে কেন্দ্র করে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ অনেক আংশেই বেশি থাকলেও আদুরিয়া থেকে কাচপুর পর্যন্ত যান যানবাহন চলাচলে স্বাভাবিক চিত্র দেখা গেছে। কোথাও যানজট নেই।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মহাসড়কে কোনো থ্রি-হুইলার উঠতে না দেওয়া, গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা বন্ধ, বাসস্ট্যান্ডের যানবাহন সড়ক দখল করে রাখা রোধ, কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে সেই যানবাহন অপসারণে রেকার প্রস্তুত করে রাখাসহ নানা কারণে এবার যানজট কমেছে।

যেসব স্থানে যানজটের শঙ্কা রয়েছে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে যানজট নিরসনে স্বেচ্ছাসেবীদেরও কাজ করতে দেখা গেছে।

মহাসড়কের রূপসী এলাকায় কথা হয় বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা নরসিংদীর যাত্রী নুর আলম এর সঙ্গে। তিনি বলেন, পরিবারের সাথে ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছি। নিত্য যানজটের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে আজ ব্যতিক্রম দেখছি। সড়ক প্রায় ফাঁকা বলা চলে। নেই কোন যানজট। আশা করছি স্বস্তিতেই বাড়ি ফিরতে পারবো।

ভুলতা গাউছিয়া থেকে রাজধানীতে চলাচলকারী মেঘলা পরিবহনের চালক মকবুল হোসেন বলেন, ‘মহাসড়কে কোথাও যানজট নেই। অন্য সময়ের তুলনায় ট্রিপ বেড়ে গেছে । যানজট না থাকায় আয় রোজগারও ভাল হচ্ছে।

ভুলতা গাউছিয়া বাস স্ট্যান্ডে গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা ঘর মুখো যাত্রী আমানউল্লাহ। ঢাকা সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন উপজেলার আউখাব এলাকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। তিনি বলেন, এই সড়কে যানজট নিত্য নৈমিত্য ব্যাপার। কিন্তু ঈদ যাত্রায় পুরোপুরি ব্যতিক্রম। কোথাও কোন যানজট নেই।

এ বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর (টিআই) জাহানুর আলী বলেন, সড়ক সংস্কার কাজ এবং রাস্তা দখল করে বাজার বসা ও যানবাহনের চাপে যানজট দেখা দেয়।

ট্রাক-লরি পার্কিংয়ের বিশৃঙ্খল অবস্থান ও সর্বোপরি আইন ভঙ্গ করে একাধিক লাইন করার কারণেও বিভিন্ন সময়ে যানজট তৈরি হয়ে থাকলেও ঈদকে সামনে রেখে ভুলতা হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য বাড়ানো হয়েছে।

পাশাপাশি মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে স্বেচ্ছাসেবীরাও কাজ করছে। আমাদের ‘পিকেট ডিউটি টিম ও হোনডা মোবাইল টিম তৎপর রয়েছে । যানজট তৈরি হওয়া স্পটগুলোর নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করছি আমরা।

মহাসড়কে উল্লেখযোগ্য কোন যানজট নেই। স্বস্তির ঈদ যাত্রা নিশ্চিত করতে কাজ করছে হাইওয়ে পুলিশ।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: র পগঞ জ ন র য়ণগঞ জ য নজট ন ই ক ন য নজট ঈদ য ত র ক জ কর হন র চ

এছাড়াও পড়ুন:

পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে

অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।

১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’

এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।

পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।

পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।

আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)

সম্পর্কিত নিবন্ধ