রূপগঞ্জে যানজটহীন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে স্বস্তির ঈদ যাত্রা
Published: 29th, March 2025 GMT
নিত্য যানজটে ভোগান্তির ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে স্বস্থির ঈদ যাত্রা। ঈদে ঘরমুখো মানুষের ঢলে যানজটের শঙ্কা কে পিছনে ফেলে স্বাভাবিক রয়েছে যান চলাচল। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ অংশে নেই কোন যানজট।
ফলে ঈদে ঘরমুখো মানুষ বেশ স্বস্তিতে বাড়ি যেতে পারছেন। তবে বিকেলের পরে যানবাহনের চাপ কিছুটা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ।
শনিবার (২৯ মার্চ) দুপুরে ঈদকে কেন্দ্র করে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ অনেক আংশেই বেশি থাকলেও আদুরিয়া থেকে কাচপুর পর্যন্ত যান যানবাহন চলাচলে স্বাভাবিক চিত্র দেখা গেছে। কোথাও যানজট নেই।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মহাসড়কে কোনো থ্রি-হুইলার উঠতে না দেওয়া, গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা বন্ধ, বাসস্ট্যান্ডের যানবাহন সড়ক দখল করে রাখা রোধ, কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে সেই যানবাহন অপসারণে রেকার প্রস্তুত করে রাখাসহ নানা কারণে এবার যানজট কমেছে।
যেসব স্থানে যানজটের শঙ্কা রয়েছে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে যানজট নিরসনে স্বেচ্ছাসেবীদেরও কাজ করতে দেখা গেছে।
মহাসড়কের রূপসী এলাকায় কথা হয় বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা নরসিংদীর যাত্রী নুর আলম এর সঙ্গে। তিনি বলেন, পরিবারের সাথে ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছি। নিত্য যানজটের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে আজ ব্যতিক্রম দেখছি। সড়ক প্রায় ফাঁকা বলা চলে। নেই কোন যানজট। আশা করছি স্বস্তিতেই বাড়ি ফিরতে পারবো।
ভুলতা গাউছিয়া থেকে রাজধানীতে চলাচলকারী মেঘলা পরিবহনের চালক মকবুল হোসেন বলেন, ‘মহাসড়কে কোথাও যানজট নেই। অন্য সময়ের তুলনায় ট্রিপ বেড়ে গেছে । যানজট না থাকায় আয় রোজগারও ভাল হচ্ছে।
ভুলতা গাউছিয়া বাস স্ট্যান্ডে গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা ঘর মুখো যাত্রী আমানউল্লাহ। ঢাকা সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন উপজেলার আউখাব এলাকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। তিনি বলেন, এই সড়কে যানজট নিত্য নৈমিত্য ব্যাপার। কিন্তু ঈদ যাত্রায় পুরোপুরি ব্যতিক্রম। কোথাও কোন যানজট নেই।
এ বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর (টিআই) জাহানুর আলী বলেন, সড়ক সংস্কার কাজ এবং রাস্তা দখল করে বাজার বসা ও যানবাহনের চাপে যানজট দেখা দেয়।
ট্রাক-লরি পার্কিংয়ের বিশৃঙ্খল অবস্থান ও সর্বোপরি আইন ভঙ্গ করে একাধিক লাইন করার কারণেও বিভিন্ন সময়ে যানজট তৈরি হয়ে থাকলেও ঈদকে সামনে রেখে ভুলতা হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য বাড়ানো হয়েছে।
পাশাপাশি মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে স্বেচ্ছাসেবীরাও কাজ করছে। আমাদের ‘পিকেট ডিউটি টিম ও হোনডা মোবাইল টিম তৎপর রয়েছে । যানজট তৈরি হওয়া স্পটগুলোর নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করছি আমরা।
মহাসড়কে উল্লেখযোগ্য কোন যানজট নেই। স্বস্তির ঈদ যাত্রা নিশ্চিত করতে কাজ করছে হাইওয়ে পুলিশ।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: র পগঞ জ ন র য়ণগঞ জ য নজট ন ই ক ন য নজট ঈদ য ত র ক জ কর হন র চ
এছাড়াও পড়ুন:
এই অদম্য মেয়েদের আমরা হারিয়ে যেতে দিতে পারি না
অবহেলিত মেয়েরা কঠিন একটি কাজ সম্পন্ন করেছেন। অনেকের কাছে এখনো অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। অসাধ্য এক অর্জনকে বাস্তবের জমিনে নামিয়ে এনেছেন আমাদের বাঘিনীরা। সাফ পর্যায় জয় করে নারীদের ফুটবলকে এশীয় পর্যায়ে নিয়ে গেলেন। বিশ্বকাপও খেলে ফিরতে পারেন এই অদম্য বাঘিনীরা।
এখন বলাই যায়, নারী ফুটবলের বিশ্ব পর্যায়ে কড়া নাড়ছেন আমাদের মেয়েরা। ফুটবলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তাঁরা। শুধু ফুটবলই নয়, আমাদের নারী জাগরণের নতুন দিশা হতে পারে মেয়েদের এই সাফল্য। এই মেয়েরা সারা দেশের মেয়েদের জন্য উদাহরণ। নারী অধিকার, নারী ক্ষমতায়নের নতুন দিনের আলোকবর্তিকা আমাদের নারী ফুটবল দল।
ফুটবলে মেয়েদের এই সাফল্যের পেছনে আছে দীর্ঘদিনের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস। সফলতা খুব সহজে আসেনি। নানা প্রতিবন্ধকতা পার করে কঠিন এক সংগ্রামের ফসল মেয়েদের আজকের এই অর্জন। ঠাকুরগাঁওয়ের প্রত্যন্ত পল্লি থেকে কোহাটি কিষ্ক, কলসিন্দুরের মারিয়া মান্দা, শামসুন্নাহার, তহুরা খাতুন, সানজিদা আক্তার বা রাঙামাটির দুর্গম গ্রাম মগছড়ি থেকে ঋতুপর্ণা চাকমাদের আজকের এই পর্যায়ে আসার ইতিহাসটা আমরা কমবেশি সবাই জানি।
এই পথচলায় সামাজিক বিধিনিষেধ ছিল। ছিল আর্থিক টানাপোড়েন, অনিশ্চয়তা। জীবনের এমন কোনো সংকট নেই, যা তাঁদের সামনে আসেনি। কিন্তু হিমালয়সম সেই বাধাকে সাহসিকতার সঙ্গে পেছনে ঠেলে আজকে তাঁরা এশীয় পর্যায়ে নিজেদের উন্নীত করেছেন।
তাঁদের অর্জনের তুলনায় রাষ্ট্র দিতে পেরেছে খুবই কম। বলতে গেলে, তাঁরা পেটেভাতে দেশের জন্য খেলে দিচ্ছেন। যেন খেলার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চলছে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আদলে। যৎসামান্য যে বেতন দেওয়া হয়, সেটাও অনিয়মিত। যেকোনো সাফল্যের পর যখন মেয়েদের কাছে শুনতে চাওয়া হয়, ‘আপনারা কী চান?’ উত্তরে মেয়েরা জানান, ‘নিয়মিত বেতনটা চাই। আর বেতনটা বাড়ালে আরও ভালো হয়।’ ২০২৫ সালে এসে এটা মেনে নেওয়া কঠিন।
দেশে মেয়েদের নিয়মিত লিগ হয় না। অন্য কোনো টুর্নামেন্টও হয় না নিয়মিত। নিয়মিত খেলার জন্য আমাদের মেয়েদের ভুটান লিগে খেলতে যেতে হয়। কেবল আবাসিক ক্যাম্পের প্রশিক্ষণ ও কিছু প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ খেলেই মেয়েদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতামূলক খেলায় নামতে হয়। সেই সব খেলায় তাঁরা নিয়মিত লিগ খেলা দলগুলোকে বলে-কয়ে হারাচ্ছে।
আমাদের খেলাধুলাকে রাজধানীকেন্দ্রিক না রেখে প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। শুধু নারী ফুটবল নয়, সব ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করতে হবে তৃণমূল থেকে। তবেই নতুন নতুন প্রতিভাবান খেলোয়াড় বেরিয়ে আসবে। ঢাকাকেন্দ্রিক খেলার কুফল কী হতে পারে, তার বড় উদাহরণ আমাদের ছেলেদের ফুটবল। সারা দেশে নিয়মিত প্রতিযোগিতামূলক লিগ না হওয়ার কারণে নতুন নতুন ফুটবলার বেরিয়ে আসছেন না।কী পরিমাণ প্রতিভার অধিকারী হলে ন্যূনতম সুবিধা না পেয়েও এ পর্যায়ে সাফল্য অর্জন করা যায়, তা এককথায় অবিশ্বাস্য। ভারত ও নেপালে নিয়মিত মেয়েদের খেলা হয়, লিগ হয়। আর আমরা তাদের এখন নিয়মিতই হারাই। এখন সাফের বাইরের দলগুলোকেও আমরা হারাতে শুরু করেছি।
এই মেয়েদের প্রচেষ্টা ও সাহস নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। প্রচণ্ড রকম ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে তাঁরা খেলতে নামেন। ভয়হীন ফুটবল খেলেন। সব থেকে বড় কথা, খেলার যেকোনো ধরনের ট্যাকটিকসের সঙ্গেই তাঁরা দ্রুত মানিয়ে নিতে পারেন। আগে আমাদের মেয়েরা কিছুটা রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলতেন। রক্ষণ সামলে প্রতি-আক্রমণে যেতেন। এবার এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে মেয়েরা পুরো খেলার ধরন বদলে ফেলেছেন।
আমাদের মেয়েরা এবার হাই প্রেসিং ফুটবল খেলেছেন। এই দল আগের থেকে দ্রুতগতিসম্পন্ন ফুটবল খেলে। বল পায়ে রাখতে পারে। তাদের বল ডিস্ট্রিবিউশন আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। পাসিংও ভালো। পজিশন সেন্স চমৎকার। বিশেষ করে বল হারালে দ্রুত নিজেরা অবস্থান নিতে পারে।
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে হাই লাইন ডিফেন্স করে গেছে দুর্দান্তভাবে। আর বাহরাইনের সঙ্গে শামসুন্নাহার জুনিয়র যেভাবে গতি সঞ্চার করে ডিফেন্স থেকে বেরিয়ে ওয়ান টু ওয়ানে গোলরক্ষককে পরাজিত করলেন ঠান্ডা মাথায়, তা আমাদের পুরুষ দলের স্ট্রাইকার বা উইঙ্গাররাও করতে পারেন না। নিয়মিত খেলার মধ্যে না থাকা একটি দলের কাছে এর বেশি আশা করা উচিত নয়। কিন্তু তাঁরা আমাদের সেই আশাকে ছাড়িয়ে গেছেন। তাঁরা পরিস্থিতি বুঝে মাঠে খেলাটা তৈরি করতে পারেন।
মেয়েদের এই লড়াইকে ধরে রাখতে হবে। তাঁদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সিরাত জাহান স্বপ্না বা আঁখি খাতুনের মতো খেলোয়াড়দের আর্থিক অনিশ্চয়তার কারণে ফুটবল থেকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। মেয়েদের প্রতিযোগিতামূলক লিগ নিয়মিত আয়োজন করতে হবে। এর পাশাপাশি জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে লিগের আয়োজন করতে হবে।
‘সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে এই মেয়েরা আমাদের ফুটবল নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন।’