ঈদযাত্রার শেষ সময়ে এসে আজ রোববার সকালে কিছুটা যাত্রীর চাপ বেড়েছিল ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে। তবে দুই মহাসড়কে দূরপাল্লার পর্যাপ্ত গাড়ি থাকায় তেমন কোনো ভোগান্তি তৈরি হয়নি। শেষ সময়েও স্বস্তিতে শহর ছাড়ছে নারায়ণগঞ্জের যাত্রীরা। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়।

সকালের দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড, শিমরাইল মোড়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর ও রূপসী এলাকায় দূরপাল্লার বাস কাউন্টারগুলোতে সরেজমিনে ঘুরে কিছু যাত্রী উপস্থিতি দেখা গেছে। তবে তা উপচে পড়া ভিড় নয়। এমনকি যাত্রী উপস্থিতির কারণে কোনো প্রকার পরিবহনসংকটও তৈরি হয়নি। কাউন্টারগুলোতে গত তিন দিনের মতোই ঈদ বোনাসের নামে ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি নেওয়া হচ্ছে। তবে এই বাড়তি ভাড়া নিয়ে অভিযোগ নেই যাত্রীদের। ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক অনেকটা ফাঁকা। একই দৃশ্য দেখা যায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে। তবে সড়কের নির্মাণকাজ চলায় কোথাও কোথাও যানবাহন চলাচলে কিছুটা ধীরগতি দেখা গেছে।

হাইওয়ে পুলিশ, যাত্রী ও পরিবহনশ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে শনিবার রাত আটটার পর হঠাৎই কিছু যাত্রীসমাগম হয়েছিল নারায়ণগঞ্জের বাস কাউন্টারগুলোতে। তবে এক ঘণ্টার মধ্যেই আবার কাউন্টারগুলো ফাঁকা হয়ে যায়। আজ ভোর পাঁচটা থেকে থেকে আবার যাত্রীর আনাগোনা শুরু হয়। তবে সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে সড়কে যাত্রী উপস্থিতি কমতে শুরু করে।

আরও পড়ুনগাজীপুরে দুই মহাসড়কে রাতভর যানবাহনের ধীরগতি, সকাল থেকে অনেকটা ফাঁকা২ ঘণ্টা আগে

যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার যাঁরা বাড়ি ফিরছেন, তাঁদের অধিকাংশই নারায়ণগঞ্জের তৈরি পোশাক কারখানা অঞ্চলের ব্যবসায়ী ও শ্রমিক। ধাপে ধাপে তৈরি পোশাক কারখানাগুলো ছুটি ঘোষণার পর এরই মধ্যে শ্রমিকেরা নারায়ণগঞ্জ ছেড়েছেন। শ্রমিক অঞ্চলগুলো ফাঁকা হয়ে যাওয়ার পর এবার ওই সব অঞ্চলের শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল লোকজন বাড়ি ফিরছেন।

কাঁচপুরে কথা হয় শ্রমিকদের খাবার সরবরাহকারী আবদুল আজিজের সঙ্গে। চার শ্রমিককে সঙ্গে নিয়ে কিশোরগঞ্জের নিকলীতে যাচ্ছেন তিনি। আজিজ প্রথম আলোকে জানান, তিনি মূলত শ্রমিকদের মধ্যে খাবার সরবরাহের ব্যবসা করেন। চার শ্রমিকসহ তাঁদের সবার বাড়ি কিশোরগঞ্জের নিকলীতে। গত রাত পর্যন্ত খাবার সরবরাহের পর হিসাব–নিকাশ শেষ করে সকালে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। কাউন্টারে বাসের অপেক্ষায় আছেন তাঁরা।

পরিবারের তিন সদস্য নিয়ে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে যাচ্ছেন সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী ইপিজেড কারখানার শ্রমিক রুবাইয়া মাহমুদ। বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠানে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় চাকরি করেন তিনি। রুবাইয়া জানান, গত শুক্রবার তাঁদের কারখানা ছুটি হয়েছে। শনিবার পরিবারের জন্য ঈদের কেনাকাটা শেষ করেছেন। একটু সময় নিয়েই আজ রোববার সকালে বের হয়েছেন বাড়ির উদ্দেশে।

বাসের টিকিট পেতে কোনো সমস্যা হয়নি জানিয়ে রুবাইয়া বলেন, ‘সাধারণত ঈদের ভোগান্তি এড়াতে আমরা প্রাইভেট কার ভাড়া করে বাড়ি যাই। এবার গণমাধ্যম মারফত জানতে পেরেছি, কাউন্টারগুলোতে যাত্রী ভোগান্তি নেই। সাহস করে তাই সকালে কাউন্টারে চলে এসেছি। এসে দেখি, কাউন্টারগুলো ফাঁকা। যেখানে ঈদের সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে বেশি মূল্যে টিকিট কাটতে হতো, সেখানে পরিবহনশ্রমিকেরা যেচে এসে স্বাভাবিক মূল্যে টিকিট দিচ্ছেন। এটা খুবই দারুণ অভিজ্ঞতা।’

শিমরাইলে সেন্ট মার্টিন পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা মো.

সুজন প্রথম আলোকে জানান, এমন না যে সড়কে এবার যাত্রী ছিল না। যাত্রী ছিল ঠিকই। কিন্তু একসঙ্গে কোনো চাপ তৈরি হয়নি। বুধবার থেকে ধীরে ধীরে যাত্রীরা শহর ছেড়েছেন। যাত্রীর তুলনায় সড়কে পর্যাপ্ত গণপরিবহন থাকায় টিকিট–সংকট তৈরি হয়নি। ফলে বাড়তি ভাড়া আদায়েরও সুযোগ ছিল না। তিনি বলেন, ‘কাউন্টারগুলাতে হাজার হাজার মানুষ; বাস নাই, টিকিট নাই, যাত্রীরা পাগল হইয়া টিকিট খুঁজতাছে—এমনটা হইলে তখন সিন্ডিকেট কইরা টিকিটের দাম বাড়াইয়া দেওয়া হইত। এবার তো এমন কোনো পরিস্থিতিই তৈরি হয় নাই; বরং যাত্রীর চেয়ে বাস বেশি।  আমরা স্বাভাবিক টিকিট মূল্যেই যাত্রী টানার প্রতিযোগিতা করতেছি।’

আরও পড়ুনআকস্মিক ঘন কুয়াশায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল এক ঘণ্টা বিঘ্নিত১ ঘণ্টা আগে

এদিকে গত রাত থেকে আজ বেলা ১১টা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে যানজট দেখা যায়নি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা টোল প্লাজায়ও ছিল না কোনো ধীরগতি। তবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বরাবরের মতোই ধীরগতি ছিল যানবাহন। সকালেও সরেজমিনে যানবাহনের সেই ধীরগতি চোখে পড়েছে। সকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে রূপসী পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার এলাকা ঘুরে এক লেনের মহাসড়কটিকে গাড়ির চাপ দেখা গেছে। এ সময় মহাসড়কটিতে তিন চাকার যান চলাচল করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া সড়কের বিভিন্ন স্থানে গণপরিবহনে থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করতে দেখা গেছে। পাশাপাশি সড়কের খানাখন্দগুলো যানবাহনগুলোর গতি কমিয়ে চলাচল করতে বাধ্য করছে। এ সময় মহাসড়কটিতে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সক্রিয়তা দেখা গেছে।

কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী ওয়াহিদ মুর্শেদ বলেন, ‘এক লেন থেকে ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলমান থাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটিতে যানবাহনের কিছুটা ধীরগতি আছে। আমরা দিনরাত সাধ্যমতো চেষ্টা করছি এই ধীরগতি যেন যানজটে পরিণত না হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কোনো প্রকার সমস্যা নেই। এখন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের যাত্রীরা স্বস্তিতেই নারায়ণগঞ্জ ছেড়েছেন।’

আরও পড়ুনমহাসড়কে যানজট নেই, চাপ কমেছে ফেরিতে২৯ মার্চ ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ র ধ রগত

এছাড়াও পড়ুন:

আড়াইহাজারের সেপটি ট্যাংকির ঝুঁকি ও করণীয় নিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা

আড়াইহাজারে সেপটি ট্যাংকির ঝুঁকি ও করনীয় বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে উপজেলার বৈইলার কান্দী ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্ড কার্যালয়ের সামনে এই প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। প্রশিক্ষনের আয়োজন করেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স নারায়ণগঞ্জ জোন- ২ ।

উক্ত প্রশিক্ষণে আড়াইহাজার এলাকায় অর্ধশতাধিক নির্মাণ শ্রমিক অংশগ্রহণ করেন এবং সচেতনার মাধ্যমে সেফটি ট্যাংকির দূর্ঘটনার মোকাবেলা করে জীবন রক্ষা করার বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন।

 প্রশিক্ষণে সভাপতিত্ব করেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স নারায়ণগঞ্জের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ওসমান গনি । এই সময়  নারায়ণগঞ্জ জোন-২ এবং আড়াইহাজার ফায়ার স্টেশনের স্টেশন অফিসার মো: রবিউল হাসানসহ অনান্য সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন। 

প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া নির্মাণ শ্রমিক বাছেদ বলেন, নতুন এই প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে আমরা অনেক কিছু শিখলাম। আমরা চাই এই ধরণের প্রশিক্ষণ সবাইকে দেওয়া  হোক।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • “শিক্ষার্থীদের উপর হামলা, ইন্ধন থাকতে পারে তৃতীয় পক্ষের”
  • শিক্ষার্থীদের উপর অটো চালকদের হামলা, আহত ২০ (ভিডিও)
  • শিক্ষার্থীদের উপর অটো চালকদের হামলা, আহত ২০
  • ফতুল্লায় পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযানে কারখানার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন
  • সোনারগাঁয়ের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে সিদ্ধিরগঞ্জ বিএনপির চিঠি
  • নারায়ণগঞ্জে বিদেশি পিস্তল-গুলিসহ গ্রেপ্তার ৩
  • সড়ক দুর্ঘটনায় যুবদল নেতা রিয়াদের দুই মেয়ে গুরুতর আহত : দোয়া প্রার্থনা 
  • আড়াইহাজারের সেপটি ট্যাংকির ঝুঁকি ও করণীয় নিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা
  • যে কারণে ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর
  • নিম্নমানের সরঞ্জাম দিয়ে সড়ক সংস্কার, দুদকের অভিযান