‘কোথাও যানজট নেই, কিন্তু ভাড়া বেশি’
Published: 30th, March 2025 GMT
‘মুক্তারপুর থেকে পদ্মা সেতু উত্তর থানা পর্যন্ত কোথাও যানজট নেই। তবে সেখান থেকে সিএনজিতে ৩৯ টাকা বেশি নিয়েছে। এখানে এসে ঘণ্টাখানেক ধরে বসে আছি। স্বাভাবিক সময় এখান থেকে বরিশালের ভাড়া ৪০০ টাকার ভাড়া এখন ৭০০-৮০০ টাকা করে নিচ্ছে, তারপরও বাস পাচ্ছি না।’- এসব কথা বলছেন পদ্মা সেতু উত্তর থানার সামনে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী আল ইমরান। তিনি মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর সিমেন্ট কারখানায় কর্মরত ও বরিশালের বাকেরগঞ্জ যাবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আল ইমরানের মতো আরও একাধিক ঈদ ঘরমুখো মানুষ অভিযোগে জানিয়েছেন গণপরিবহনে ভাড়া বেশি নেওয়ার বিষয়টি। ঢাকা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমমাঞ্চলের প্রবেশ পথ ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ঈদের ছুটির তৃতীয় দিনে ঘরমুখো মানুষ নির্বিঘ্নে নিজ নিজ গন্তব্যে যাচ্ছে। অন্য সময়ের চেয়ে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বাড়লেও এখনও ওই মহাসড়কের কোথাও যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ নেই। তবে গণপরিবহনে ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ করছেন যাত্রীরা।
বাগেরহাট যাওয়ার জন্য পরিবার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মেহবুবা আক্তার বলেন, আমরা অনলাইনে টিকিট করতে পারিনি। এখানে এসে বাসের জন্য প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে বসে আছি; কোনো বাস পাচ্ছি না। যদি গাড়িতে উঠতে পারি, সেই কষ্ট আর কষ্ট আর থাকবে না।
এদিকে ঈদযাত্রায় মহাসড়কের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যেই কাজ করেছে হাইওয়ে পুলিশ। হাঁসাড়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, পদ্মা সেতুর উত্তর প্রান্তের পুরো মহাসড়কে নিরাপত্তায় হাইওয়ে পুলিশের ৮টি ইউনিট কাজ করছে।
পদ্মা সেতু উত্তর থানার ওসি জাকির হোসেন জানান, যাত্রী নিরাপত্তার জন্য দিনরাত পদ্মা সেতু এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি টহল টিম রাখা হয়েছে। তার সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ দ্বারা ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে টহল টিম কাজ করছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে
অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।
১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’
এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।
পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)