‘রাহাজানিময়’ কেন নয় ‘বেবাক’ বাংলাদেশ
Published: 30th, March 2025 GMT
‘দেহায় মুরগি, খাওয়ায় ডাইল’—কথাটি প্রচলিত ছিল আশির দশকের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। তরুণ বয়সে পরিবারের বাইরে আবাসিক হলের জীবনে কিছুটা হাস্যরস ছিল এ ধরনের উচ্চারণে।
আজকের বাস্তবতা আরও ভিন্ন, মিথ্যার উর্বর বিশ্বে দেখছি ঘটনা ঘটছে এক, চেষ্টা হচ্ছে আরেক গল্প বলার। বাংলাদেশেও তা-ই।
মানুষ ব্যস্ত রোজা আর ঈদ নিয়ে। রটানো হচ্ছে যে উত্তাল পরিস্থিতিতে দেশ। বাস্তবে ক্ষমতায় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আর ভার্চ্যুয়াল ওয়ার্ল্ডে শিগগির ‘প্রত্যাবর্তন’ করছেন পতিত শেখ হাসিনা! এই বুঝি ঘটে যাচ্ছে প্রতিবিপ্লব!
মনে হয় কিছু লোক ধরে নিয়েছে, ‘সেই সত্য যা রচিবে তুমি, যা ঘটে তা সব সত্য নয়’। যেন গোয়েবলসের পুনরুত্থান হচ্ছে এখানে–সেখানে মিনিটে মিনিটে। সত্য যেন মিশে আছে মিথ্যায়, হায়!
এই তো কয়েক দিন আগেই মাগুরার শিশুটির ধর্ষণ ও মৃত্যু নির্বাক করে দিয়েছিল সারা জাতিকে। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের মধ্য দিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করা অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এটাই ছিল সম্ভবত সবচেয়ে আলোচিত অপরাধের ঘটনা।
এর নিন্দা ও প্রতিবাদে সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মী, সচেতন নারী সমাজ এবং বিবেকবান মানুষের কণ্ঠ উচ্চকিত হয় ক্যাম্পাসে, রাজপথে, পাবলিক ফোরামে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
এরপর সুশীলের আলোচনা মোড় নেয় অন্য কোথাও, অন্য কোনোখানে, পরবর্তী ইস্যুর বেড়াজালে।
দেশে আরও সংঘটিত হয় ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধ, যেখানে রাজনৈতিক দলের সদস্যদের কিছু নামও উঠে আসে। কয়েকটি ঘটনায় কিছুসংখ্যক উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি মানুষের বাসায় ঢুকে পড়ে এবং কেউ কেউ প্রকাশ্যে নারীকে অপমান ও উত্ত্যক্ত করে।
অপরাধের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে একটি পত্রিকা রিপোর্ট করেছে, ধর্ষণ, চুরি ও ছিঁচকে অপরাধ কমেছে সম্প্রতি। তবে কিছুটা বেড়েছে ডাকাতি, ছিনতাই ও অপহরণ—যেসব অপরাধ সাধারণত সংঘটিত হয় নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে।
এই অপরাধ সংঘটনের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিবাদ এবং গণমাধ্যমে প্রতিবেদন বাক্স্বাধীনতার বিরাজমান অবস্থা প্রমাণ করে। স্বাধীনতার ব্যাপ্তি স্বীকার করেছেন অধ্যাপক ইউনূস নিজেই; তিনি বলেন, ‘মন খুলে’ তাঁর সরকারের সমালোচনা করা যাবে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এখনকার মতো প্রতিবাদ, প্রতিবেদন প্রকাশ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দেখানো কতটা সম্ভব ছিল পতিত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে? বিবেকের স্বাধীনতা, ভোটের সুযোগ ও অন্যান্য অধিকার হরণের দায়ে ওই সরকারের কুখ্যাতিই ছিল তার আসল অর্জন।
আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর তুলনামূলকভাবে অনেক মুক্ত এক পরিবেশে শিল্পশ্রমিকেরা ঢাকা-গাজীপুর মহাসড়কে অবরোধ দেয় অন্তত ৮৩ বার। ঢাকা পরিণত হয় দাবিদাওয়ার মিছিল আর প্রতিবাদের নগরে।
এ ধরনের হইচই, মুক্ত আলোচনা এবং একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আফসোসের সংলাপ আওড়ানো এমন ধারণার সৃষ্টি করেছে যেন খুন, ডাকাতি, রাহাজানি, চুরি, অপহরণ এবং নারী ও শিশু নির্যাতনসহ সব অপরাধ বহুগুণে বেড়েছে।
সৌভাগ্যক্রমে বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় কবি ডব্লিউ বি ইয়েটসের লাইনগুলোর হাহাকার চোখে পড়ে না। ‘চারদিকে লেহেরোকা খুন, মাছুমের উৎসব ডুবছেই।’ আর ‘রাহাজানিময় তাই দুনিয়া বেবাক’ তো বাংলাদেশের চিত্র নয়, প্রিয় ফেসবুক গল্পকাররা।অবশ্যই অতীত অত্যাচারের তিক্ত প্রতিক্রিয়ায় কিছু রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। বিপ্লবের সময় এবং এর অব্যবহিত পরেও এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। এগুলোকেও সামাজিক অপরাধমূলক ইস্যু হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে!
বিপ্লবের পর সত্যিকারের সামাজিক অপরাধও বাড়তেই পারত। বিশেষ করে যখন পুরোনো ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে কিন্তু নতুন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি, তখন তা বাড়তে পারত। ওই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার ধারক, বাহক এবং দেড় দশকের অন্যায়, অত্যাচার, হত্যাকাণ্ড, বর্বরতা, নিষ্ঠুরতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রভাবশালী অংশ বিপ্লবের তোপে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।
তাই আরব বসন্তের মতো বিপ্লব–পরবর্তী দৃশ্যপটে এ দেশেও সৃষ্টি হতে পারত সামগ্রিক নৈরাজ্য। এই নৈরাজ্যের উর্বর ভূমিতে জন্মে চরমপন্থী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী; অপরাধ তো বটেই।
তাহলে অত্যাচারী শাসনের চাপানো স্থিতিশীলতার তুলনায় সাম্প্রতিক কালের ধারণায় অস্থির পরিস্থিতি প্রসঙ্গে অপরাধের পরিসংখ্যান সত্যিই কি বলে?
আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাওয়া ২০২৫-এর ফেব্রুয়ারি মাসে পুলিশ নথিভুক্ত করেছে ১৩ হাজার অপরাধের ঘটনা। হাসিনার তৃতীয় কারচুপির নির্বাচন বিজয়ের মধ্য দিয়ে সরকার গঠনের ঠিক পরের মাস, ২০২৪-এর ফেব্রুয়ারিতে এই সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার ৫০০।
হাসিনার সর্বশেষ পূর্ণ মাস ২০২৪-এর জুলাইয়ে এ ধরনের অপরাধ পুলিশের তালিকাভুক্ত হয় ১৫ হাজারটি, যা আগস্টে তাঁর পলায়নের মাসটিতে নেমে দাঁড়ায় ৯ হাজারের নিচে (৮,৮৩৩)। পরবর্তী মাসগুলোয় অপরাধের ঘটনা ছিল ১২-১৩ হাজারের মধ্যে, অথচ হাসিনা পতনের পূর্ববর্তী সময়ে এ হার ছিল মাসে ১৬ হাজার।
ভুলে গেলে চলবে না, এক হাজারের অধিক ছাত্র ও সাধারণ মানুষকে হত্যা এবং ২০ হাজারের অধিককে জখম করেছিল হাসিনার আজ্ঞাবহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শুধু জুলাই-আগস্ট মাসের অভ্যুত্থানের দিনগুলোয়। হাসিনার পতনে তাদেরও পতন হয়।
বিপ্লবের শরিক স্বেচ্ছাসেবী ও রাজনৈতিক কর্মীরা তখন রাত জেগে পাহারা দিয়েছেন বিভিন্ন স্থাপনা ও মহল্লা, বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়ি, সম্পত্তি ও উপাসনালয়। সেই উত্তাল দিনগুলোয় হঠাৎ গুজব উঠত ডাকাতি বা বাড়িতে আক্রমণের, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুল প্রমাণ হয়।
কিছু কিছু মাধ্যমে বর্ণিত অসংখ্য অপরাধমূলক ঘটনার ঘটনা আদতে ঘটেইনি। সম্প্রতিও আমরা দেখেছি অদৃশ্য রাজনৈতিক হাতের ইশারায় কিছু ঘটনা ঘটানোর অপচেষ্টা হয়েছে। এই নাশকতা প্রচেষ্টার নমুনা পাওয়া গেছে হাসিনার নেতা-কর্মীদের ফাঁস হওয়া টেলিফোন সংলাপে।
সত্যিকারভাবে কষ্টসহিষ্ণু এবং শান্তিপ্রিয় হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের জনগণ অন্যান্য দেশের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির বিপরীতে নিজেদের আলাদা প্রমাণ করেছে। স্বৈরাচারী শাসনের অবসানে নানা দেশে সামাজিক সম্প্রীতির অভাবে তৈরি হয়েছে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি। কিন্তু বাংলাদেশিরা সেই নৈরাজ্যের গুহায় ঢুকে পড়েনি।
তবু পূর্ববর্তী সরকারের হতাশ সমর্থকদের (অ) সামাজিক নেটওয়ার্কের প্রোপাগান্ডা দেখে বোঝা যায় কী আফসোস তাদের। তাদের চাওয়া—নৈরাজ্য কেন গ্রাস করছে না তামাম বাংলাদেশকে! যাতে তারা ব্যাখ্যা করতে পারে যে দেশের অবস্থা তাদের শাসনকালেই তো ভালো ছিল!
এরাই হচ্ছে সেই প্রজাতি, যারা চোখ বন্ধ করে অনুমোদন দিয়েছে ফ্যাসিবাদী হাসিনা শাসনের যেকোনো অপকর্মকে, তা হোক দুর্নীতি, মানুষ হত্যা বা নাগরিকদের দাস বানানো। নতুন বাংলাদেশে সামাজিক অবস্থান পুনরুদ্ধারের কোনো নৈতিক ভিত্তি নেই তাদের।
অবাক হওয়ার কিছু নেই, তাদের এই হতাশার প্রতিফলন মিলছে একশ্রেণির ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রচারে, যদিও সেই প্রচারে সংখ্যালঘু অধিকারসহ বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে ভিত্তিহীন অভিযোগ আর বাগাড়ম্বর ছাড়া তেমন কিছু নেই।
সম্প্রতি এক ভারতীয় সাংবাদিককে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডকে বাংলাদেশ সম্পর্কে প্ররোচনামূলক প্রশ্ন করতে। জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে ‘অসংখ্য সহিংসতার ঘটনা’ এবং ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ নিয়ে উদ্বিগ্ন কি না।
মার্কিন কর্মকর্তার জবাব সহজেই অনুমেয় এবং তাঁর বক্তব্য বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বাস্তবতা থেকে যোজন যোজন দূরে, যদিও তিনি যে দেশ সফর করছিলেন সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে হাজারো প্রশ্ন থাকে।
সৌভাগ্যক্রমে বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় কবি ডব্লিউ বি ইয়েটসের লাইনগুলোর হাহাকার চোখে পড়ে না। ‘চারদিকে লেহেরোকা খুন, মাছুমের উৎসব ডুবছেই।’ আর ‘রাহাজানিময় তাই দুনিয়া বেবাক’ তো বাংলাদেশের চিত্র নয়, প্রিয় ফেসবুক গল্পকাররা।
অবশ্য ষড়যন্ত্র মোকাবিলাসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির সুযোগ আছে। চলমান জটিল ইস্যুগুলো মেটাতে দরকার হবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আরও সংহতকরণ, আমলাতন্ত্র ও পুলিশ বাহিনীকে অধিক কার্যকর করা, পরিবর্তন আনতে বিপ্লবের ম্যান্ডেট নবায়ন, সুশাসন নিশ্চিতে রাজনৈতিক বোঝাপড়া, সংযোগ জোরদার ও সংস্কার বাস্তবায়ন এবং জন-আকাঙ্ক্ষার যথাযথ প্রতিফলন ঘটানো।
এসব বিষয় রাজনৈতিক উত্তরণ ও নির্বাচনী অ্যাজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে বৃহত্তর জাতীয় কল্যাণে।
খাজা মাঈন উদ্দিন সাংবাদিক
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক পর স থ ত সরক র র এ ধরন র ব স তবত অপর ধ র র পর স র ঘটন আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।
এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।
বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশএমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।
এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।
কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেইএমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।
এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।
সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।
গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতাঅক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।
সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।