ঈদযাত্রা: শেষ মুহূর্তে সদরঘাটে স্বস্তির হাসি
Published: 30th, March 2025 GMT
শেষ মুহূর্তের ঈদযাত্রায় ঢাকার ঐতিহ্যবাহী লঞ্চঘাটে সবার মুখে স্বস্তির হাসি দেখা গেছে। ঈদের আগের দিন রবিবারও দক্ষিণাঞ্চলের অসংখ্য মানুষকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ছেড়ে যেতে দেখা গেছে।
সোমবার (৩১ মার্চ) পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন হবে দেশজুড়ে। এরই মধ্যে ঈদের অগ্রিম আনন্দ শুরু হয়েছে দেশে। তবে নানা কারণে ঈদের আগের দিন রবিবারও ঢাকা ছেড়েছে মানুষ।
ঈদযাত্রায় এবার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের যাত্রীদের শুরু থেকেই স্বস্তি প্রকাশ করতে দেখা গেছে, যারা ধারাবাহিকতা ছিল রবিবারও।
আরো পড়ুন:
কড়া নাড়ছে ঈদ, চলছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা
‘ধর্ম-বর্ণ ও দলমত নির্বিশেষে সবার জন্য ডিএনসিসির ঈদ আনন্দ উৎসব’
এদিন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে সেখানে ঘরমুখো মানুষের ঢল দেখা যায়। যাত্রীরা বলেন, স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদযাত্রার জন্য তারা লঞ্চ বেছে নিয়েছেন; কারণ পরিবারের নারী সদস্য ও শিশুদের নিয়ে গাড়ির চেয়ে লঞ্চ যাত্রা করা তাদের বিবেচনায় বেশি নিরাপদ।
লঞ্চ যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য এবার সরকারের পক্ষ থেকে ব্যতিক্রমী কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- প্রতিটি লঞ্চে যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে চারজন করে আনসার সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
লঞ্চ টার্মিনালে ডিএমপি, নৌ পুলিশ, র্যাব, সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও বিআইডাব্লিউটিএর সদস্যদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ রয়েছে। বিভিন্ন রুটের লঞ্চ সদরঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়ার আগে অতিরিক্ত যাত্রী ও ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করছেন তারা। অভিযোগ পেলে বিআইডাব্লিউটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছেন। যার ফলে অন্যবারের চেয়ে এবারের ঈদযাত্রা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য বেশি স্বস্তিদায়ক হয়েছে।
রবিবার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের দৃশ্য। ছবি: রাইজিংবিডি
বরিশালগামী এমভি সুন্দরবন-৯ লঞ্চের যাত্রী আফসানা মিম বলেন, “পদ্মা সেতু চালুর পরও আমাদের বরিশালের মানুষ ঈদে পরিবার-পরিজন নিয়ে লঞ্চে যেতে পছন্দ করে। এই সময় বাসে ভাড়া বেশি থাকে। তাই বেশিরভাগ মানুষ স্বস্তির যাত্রার জন্য সড়ক ছেড়ে নৌপথ বেছে নেয়। আমি সবসময়ই লঞ্চে যাওয়া-আসা করি। লঞ্চের মতো শান্তির যাত্রা আমার কাছে আর কিছুতেই হয় না।”
ভোলাগামী এমভি কর্ণফুলী লঞ্চের যাত্রী তানজিল চৌধুরী বলেন, “আমাদের ভোলায় যাওয়ার জন্য একমাত্র পথ হল নৌপথ। লঞ্চগুলোও খুব আরামদায়ক। এবারের যাত্রাটা আমার কাছে অন্যবারের তুলনায় একটু ব্যতীক্রম মনে হলো। আগে এই শেষ সময়ে এসে বাড়িতে ফিরতে হলে আমাদের বাড়তি ভাড়া গুনতে হতো। কিন্তু এবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় লঞ্চ মালিকরা বেশি সুবিধা করতে পারছে না।”
“লঞ্চের ধারণ ক্ষমতার বেশি যাত্রীও তারা নিতে পারছে না। ফলে সাধারণ যাত্রীরা নির্বিঘ্নে, স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদযাত্রা করছে। এজন্য অবশ্য সরকার ধন্যবাদ পেতে পারে,” বলেন তানজিল চৌধুরী।
এমভি সুন্দরবন-১৫ লঞ্চের সুপারভাইজার মো.
“আমাদের টার্গেট অনুযায়ী টিকিট বিক্রি হয়েছে। এবার কোনো লঞ্চ-মালিকই বাড়তি ভাড়া নিচ্ছেন না। সরকার নির্ধারিত ভাড়া দিয়ে যাত্রীরা তাদের গন্তব্যে যাচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অনেক তৎপর রয়েছেন,” বলেন দুলাল হোসেন।
বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সদস্য সচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, “এবারের ঈদ যাত্রায় যাত্রীরা স্বস্তি প্রকাশ করছেন, এটা আমাদের জন্য ভালো খবর। কোনো লঞ্চ-মালিক বাড়তি ভাড়া নেননি। আমরা অভিযোগ পেলে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিয়েছি।”
“সাধারণত লঞ্-মালিকরা দুই ঈদের দিকে চেয়ে থাকেন। সাধারণ সময়ে আগের মতো যাত্রী পাওয়া যায় না। ঈদে পরিবার-পরিজন নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ গাড়ির চেয়ে লঞ্চে যেতে পছন্দ করেন, তাই আমাদের জন্য ঈদ একটি আশীর্বাদ স্বরূপ। এখন পর্যন্ত ঈদের লঞ্চ-যাত্রায় কোনো সমস্যা হয়নি। আশা করি, শেষ মুহূর্তেও এর ব্যতিক্রম হবে না।”
বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক মুহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, “ঈদযাত্রাকে নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক করার জন্য আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা সার্বক্ষণিক নজরদারি রেখেছেন। যাতে কোনো ধরনের বাড়তি চাপ না পড়ে, সে জন্য অতিরিক্ত লঞ্চ পরিচালনা করা হচ্ছে। গতবারের মতো এবার বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ সেভাবে পাইনি। লঞ্চ-যাত্রা নিরাপদ করার জন্য সেনাবাহিনীর পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এখন পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক আছে।”
এবারের ঈদযাত্রার সার্বিক নিরাপত্তা বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ নৌ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আব্দুল ওয়ারীশ বলেন, “আমরা যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা নদীতে নিয়মিত তদারকি করছি। আমাদের পুলিশ সদস্যরা সার্বক্ষণিক নজরদারি বজায় রেখেছেন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। যাত্রীদের কোনো অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যাত্রীদের মুখে স্বস্তির কথা শুনেছি।”
ঢাকা/রাসেল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ র র জন য র সদস য ঈদয ত র আম দ র রব ব র ন র পদ সরক র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।
এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।
বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশএমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।
এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।
কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেইএমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।
এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।
সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।
গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতাঅক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।
সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।