মুঠোফোন নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদলের সুযোগ, কিন্তু জনপ্রিয় হয়নি কেন
Published: 31st, March 2025 GMT
দেশের সব জায়গায় সব মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্ক শক্তিশালী নয়। এ কারণে গ্রামে গিয়ে অনেকে নেটওয়ার্ক সমস্যায় ভোগেন। মুঠোফোনে ঘরে বসে কথা বলা কঠিন হয়ে পড়ে। ইন্টারনেট পাওয়া যায় না। অবশ্য চাইলে মুঠোফোন নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদলে নেওয়া যায়। এ সুবিধার নাম মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি)। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ২০১৮ সালের অক্টোবরে মোবাইল নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর বদলের এই সেবা চালু করে। ঘটা করে এমএনপি সেবা চালু করলেও তা জনপ্রিয় হয়নি।
এমএনপিতে গ্রাহকের মুঠোফোন নম্বর পুরোপুরি ঠিক থাকবে। শুধু গ্রাহক যে অপারেটরে যাবেন, সেই অপারেটরের মিনিট, ইন্টারনেট ও খুদেবার্তার (এসএমএস) প্যাকেজ কিনতে হবে। এতে সুবিধা হলো, গ্রাহকের অনেক দিনের পুরোনো নম্বরটি পাল্টাতে হবে না। পাশাপাশি গ্রাহকের এলাকায় যে অপারেটরের নেটওয়ার্ক শক্তিশালী, সেই অপারেটরের সেবা নিতে পারবেন।
দেশে চারটি মোবাইল অপারেটর রয়েছে—গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও টেলিটক। এর মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল নেটওয়ার্ক টেলিটকের। আবার শহরে এবং গ্রামে কিছু কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় সব অপারেটরের নেটওয়ার্ক সমানভাবে শক্তিশালী নয়। যেমন বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বাসিন্দা সামিউর রহমানের বাড়িতে তিনি যে অপারেটরের নম্বর ব্যবহার করেন, সেটির নেটওয়ার্ক দুর্বল। আরেকটি অপারেটরের নেটওয়ার্ক মোটামুটি ভালো।
সামিউর বলেন, তিনি নিজের একটি সিমের অপারেটর বদলে নিয়েছেন। ছুটিতে বাড়ি গেলে ওই নম্বরে ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনে নেন।
এমএনপির নিয়মনম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদল করতে হলে যে অপারটরে যেতে চান সেই অপারটেরের সার্ভিস সেন্টার বা সেবাকেন্দ্রে যেতে হবে। ওই সেবাকেন্দ্র থেকে আগের অপারেটরের সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ করে অন্য অপারেটর যাওয়ার আবেদন করতে হবে। পুরোনো অপারেটর ছাড়পত্র দিলে নম্বর পোর্টেবিলিটি ক্লিয়ারিং হাউস নম্বর পোর্টিং করে দেবে। এ সময় আঙুলের ছাপের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করা হবে।
জাতীয় পরিচয়পত্র প্রয়োজন না হলেও তার একটি ফটোকপি সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। মনে রাখতে হবে, মুঠোফোন নম্বর বদলের সময় সংশ্লিষ্ট নম্বরে ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স বা ধার নেওয়া থাকলে অথবা পোস্ট পেইডে বকেয়া থাকলে বদল কার্যক্রম আটকে যাবে। এই প্রক্রিয়ায় খুব বেশি সময় না লাগলেও নতুন অপারেটরের সিম সক্রিয় হতে অন্তত ৭২ ঘণ্টা সময় লাগে। অপারেটর পরিবর্তনের জন্য গ্রাহককে ৪০৮ টাকা ফি দিতে হয়।
এমএনপিতে পুরোনো অপারেটরে থাকা টাকা বা ব্যালেন্স (স্থিতি) ও ডেটা নতুন অপারেটরে যুক্ত হয় না। তবে বিটিআরসির নির্দেশনা হচ্ছে, আগের অপারেটরে থাকা ব্যালেন্স ও ডেটা অপারেটরকে অন্তত দুই বছর রেখে দিতে হবে। কারণ, এর মধ্যে গ্রাহক আগের অপারেটরে ফেরত আসতে পারেন।
একবার অপারেটর পরিবর্তন করলে ৯০ দিনের মধ্যে অপারেটর বদল করা যায় না (গ্রামীণফোনের ক্ষেত্রে ৬০ দিন)। এক অপারেটর থেকে অন্য অপারেটরে প্রি-পেইড গ্রাহকেরা শুধু প্রি-পেইডে যেতে পারবেন এবং পোস্ট পেইড গ্রাহকেরা পোস্ট-পেইডে স্থানান্তরিত হতে পারবেন।
উচ্চ ব্যয়, জনপ্রিয়তা কম২০১৮ সালে বিটিআরসি ঘটা করে এমএনপি সেবা চালু করলেও তা জনপ্রিয় হয়নি। এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উচ্চ ব্যয় ও কঠিন শর্তকে দায়ী করেন।
শুরুতে অপারেটর বদলে খরচ ছিল ১৫৮ টাকা। এর মধ্যে ছিল অপারেটর বদলাতে গ্রাহকের ফি ৫০ টাকা, এর ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট এবং সিম পরিবর্তন বা রিপ্লেসমেন্টের ওপরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ১০০ টাকা কর।
এমএনপি চালুর পর উচ্চ ব্যয় নিয়ে সমালোচনার মুখে বিটিআরসির অনুরোধে এনবিআর ১০০ টাকা সম্পূরক শুল্ক তুলে নেয়। যদিও পরে তা আরোপ করা হয়। এখন সিমকর ৩০০ টাকা। আর সব মিলিয়ে খরচ ৪০৮ টাকা।
দেশের একটি অপারেটরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, মানুষ তাঁর পুরোনো নম্বর ফেলে দিয়ে নতুন নম্বর ব্যবহার শুরু করতে চান না। তাই সেবায় সন্তুষ্ট না হলেও অপারেটর বদল করা হয় না। এমএনপির খরচ যদি কম হতো, যদি শর্ত শিথিল থাকত, তাহলে বাংলাদেশেও এমএনপি জনপ্রিয় হতো।
তিনি বলেন, এমএনপির সর্বোচ্চ খরচ ৫০ টাকা হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে সিমকর নেওয়া অন্যায়। কারণ গ্রাহক তো নতুন সিম কিনছেন না, তাহলে কেন কর দেবেন। আর অপারেটর বদল করে সেখানে অন্তত ৯০ দিন থাকার শর্ত এমএনপিকে নিরুৎসাহিত করছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র হক র ব ট আরস জনপ র য়
এছাড়াও পড়ুন:
কর এবং মোবাইল অপারেটর অসহযোগিতায় কমেছে এমএনপি গ্রাহক: ইনফোজিলিয়ন
চালুর ৬ বছরেই মুখ থুবড়ে পড়েছে মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) সেবা। সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ইনফোজিলিয়ন বলছে, উচ্চ সিম কর এবং মোবাইল অপারেটর অসহযোগিতায় সেবা গ্রহণের হার কমেছে ৯৭ শতাংশ। এছাড়া নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসির বিধিনিষেধের কারণে প্রচার-প্রচারণা চালানো যাচ্ছে না। এতে জনগণ সেবাটি সম্পর্কে সেবা জানতে পারছে না।
মঙ্গলবার রাজধানীতে টিআরএনবি আয়োজিত কর্মশালায় এসব তথ্য তুলে ধরে এমএনপি অপারেটর।
২০১৮ সালের অক্টোবরে এমএনপি সেবা চালু হয়। এটি এমন এক ধরনের পদ্ধতি যেখানে গ্রাহক মোবাইল নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদলের সুযোগ পায়।
কর্মশালায় বলা হয়, শুরুতে অপারেটর বদলে ভ্যাট ট্যাক্স মিলিয়ে খরচ ছিল ১৫৮ টাকা। এই উচ্চ ব্যয় নিয়ে সমালোচনার মুখে ১০০ টাকা সম্পূরক শুল্ক তুলে নেয় এনবিআর। এতে শুরুর বছরেই সাত লাখ গ্রাহক এমএনপি সেবা গ্রহণ করে। একমাসে সবোর্চ্চ এক লাখ ১১ হাজার গ্রাহক এ সেবা নেয়। পরে ৩৪৫ টাকা সিমট্যাক্স আরোপ করায় বর্তমানে এমএনপি সেবায় খরচ ৪০৮ টাকা। খরচ বাড়ায় বর্তমানে মাসে মাত্র সাড়ে ৩ হাজার মানুষ এমএনপি সেবা নিচ্ছেন।
ইনফোজিলিয়নের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশে এমএনপি সেবায় যে সিমট্যাক্স ধরা হয়েছে সেটা আন্তর্জাতিকভাবে ভালো চর্চা নয়। গ্রাহকের ওপর জুলুম হয়ে যায়। উচ্চ খরচের পাশাপাশি মোবাইল অপারেটরদের বিরুদ্ধে অসহযোগিতারও অভিযোগ তুলেছে এমএনপি অপারেটরটি।
ইনফোজিলিয়নের ডাটাবেজ অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশনসের ম্যানেজার ওবায়দুল ইসলাম বলেন, গ্রাহকের এমএনপি আবেদনের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশের নিচে আবেদন বাতিল আদর্শ। কিন্তু আমাদের এখানে ৪৫ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি আবেদন বাতিল হচ্ছে। এটা হওয়ার কথা না।
কর্মশালায় আন্তর্জাতিক এসএমএস আদান প্রদান নীতিমালার প্রণয়নের দাবি তোলা হয়। বলা হয়, এই নীতিমালা হলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।
ইনফোজিলিয়নের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাবরুর হোসাইন বলেন, গ্রাহকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি, কিন্তু নানা বিধিনিষেধে সেই স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাধাগুলো দূর করা গেলে সরকারের রাজস্বও বাড়বে, পাশাপাশি গ্রাহক পাবে মান সম্মত সেবা।
উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশের চার মোবাইল অপারেটরের গ্রাহক সংখ্যা ১৮ কোটি ৬৫ লাখ।