মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম ৫০ দিনে প্রতিদিন গড়ে ৬ দশমিক ৩২ বার জো বাইডেনের নাম নিয়েছেন। সেই হিসাবে ৫০ দিনে তিনি ৩১৬ বার বাইডেনের নাম নিয়েছেন। এর অধিকাংশ সময় তিনি দোষারোপ করতে বাইডেনের নাম নিয়েছেন।

নিউইয়র্ক টাইমসের এক বিশ্লেষণে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ওই বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ট্রাম্প যতবার বাইডেনের নাম নিয়েছেন, ওই সময়ে ততবার তিনি আমেরিকা শব্দটিও বলেননি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিজেদের সৃষ্ট বিশৃঙ্খলায় ডুবে গেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এ জন্য কাকে দোষারোপ করতে হবে, তা খুব ভালো করেই জানেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

গত বুধবার সিগন্যালগেট কেলেঙ্কারির দুই দিন পর ট্রাম্প নিজের ডেস্কে বসে সাংবাদিকদের বলেন, এই ব্যর্থতার পেছনে আসল অপরাধী জো বাইডেন ছাড়া আর কেউ নন।

ট্রাম্প বলেন, ‘জো বাইডেনের উচিত ছিল ইয়েমেনে হামলা করা। এটা জো বাইডেনের করা উচিত ছিল এবং এটা করা হয়নি।’

প্রেসিডেন্ট বলেছেন, বাইডেন শুরুতেই হুতিদের ওপর হামলা করলে ট্রাম্পের প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে এ হামলার বিষয়ে পরিকল্পনা করতে হতো না এবং সিগন্যাল অ্যাপে একটি গ্রুপে এটি নিয়ে বার্তা আদান–প্রদান করতে হতে না। ওই গ্রুপে দ্য আটলান্টিকের সম্পাদকও সংযুক্ত ছিলেন।

সম্প্রতি ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের ওপর বড় ধরনের হামলা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। হুতিদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলার একটি পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে গেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভুলে ওই পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায়। তাঁরা সিগন্যালের মেসেজিং গ্রুপে এ-সংক্রান্ত বার্তা আদান–প্রদান করেছিলেন।

হোয়াইট হাউস থেকে পরিকল্পনা ফাঁস হওয়ার খবর প্রকাশের পর এ ঘটনায় সঙ্গে সঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা। তাঁরা বলেছেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার লঙ্ঘন এবং এতে আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে। ঘটনাটি অবশ্যই কংগ্রেসকে তদন্ত করতে হবে।

বরাবরের মতো এ ঘটনায়ও ট্রাম্প তাঁর পূর্বসূরি বাইডেনকেই দোষারোপ করেছেন। এবার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ট্রাম্প সবকিছুর জন্য বাইডেনকে দোষারোপ করছেন। এমনকি ছোটখাটো কোনো বিষয়েও তিনি বাইডেনকে দোষারোপ করা থেকে বিরত থাকেননি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর প্রথম বছরে ট্রাম্পের নাম নিতেই অনাগ্রহী ছিলেন। তিনি ট্রাম্পের কথা বলতে গিয়ে বেশির ভাগ সময় সাবেক ব্যক্তি বলতেন।

ট্রাম্প কেন বাইডেনকে বারবার দোষারোপ করেন, এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির সাবেক নীতিনির্ধারক জেমস কারভিল। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের মনে ঠিক কী চলে, সেটা আমি জানি বলেই আমার মনে হয়। তিনি জনগণকে অস্থিতিশীল অর্থনীতির জন্য প্রস্তুত করার চেষ্টা করছেন। তাঁর নিজের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে এই অস্থিতিশীল অর্থনীতি এখন চোখের সামনে। কী ঘটতে চলেছে, তা তিনি দেখতে পাচ্ছেন এবং তিনি নিজেকে দোষারোপ করতে পারবেন না। তাই তাঁকে বাইডেনকেই দোষারোপ করতে হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ ষ র প করত দ ষ র প কর

এছাড়াও পড়ুন:

নরসিংদীতে বিএনপির সংঘর্ষের সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকের ওপর হামলা

নরসিংদীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের খবর প্রকাশের জেরে এক সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে নরসিংদী সদর হাসপাতাল চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।

বিএনপির একদল কর্মী তাঁর ওপর হামলা করলেও তাঁদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। ভুক্তভোগী সাংবাদিকের নাম আইয়ুব খান সরকার। তিনি বেসরকারি যমুনা টেলিভিশনের নরসিংদীর স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত। এলোপাতাড়ি কিলঘুষিতে তাঁর মাথা ফেটে গিয়ে চারটি সেলাই দিতে হয়েছে।

আজ ভোর পাঁচটার দিকে নরসিংদী সদর উপজেলার চরাঞ্চল আলোকবালী ইউনিয়নের মুরাদনগর গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মো. ইদন মিয়া (৬০) নামের একজন নিহত হন। আহত হন আরও অন্তত পাঁচজন। হতাহত ব্যক্তিদের নরসিংদী সদর হাসপাতালে আনা হয়েছিল। ওই ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে সকাল থেকে হাসপাতাল কমপ্লেক্সে অবস্থান করছিলেন আইয়ুব খান সরকার।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, আলোকবালীর সংঘর্ষের ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের খবর নিতে হাসপাতাল চত্বরে অবস্থান করছিলেন হতাহত ব্যক্তিদের স্বজন, স্থানীয় লোকজন ও সাংবাদিকেরা। বেলা পৌনে ১১টার দিকে বিএনপির একদল কর্মী যমুনা টিভির সাংবাদিক আইয়ুব খান সরকারকে ঘিরে ধরেন। তাঁরা জানতে চান, যমুনা টিভির সংবাদে ঘটনাটিকে কেন ‘বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ’ লেখা হয়েছে। তাঁদের দাবি, ঘটনাটি ঘটেছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে। দ্রুত সেটি সংশোধনের দাবি করেন তাঁরা।

প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য, এ সময় সাংবাদিক আইয়ুব খান সরকার তাঁদের বলেন, স্থানীয় লোকজন, বিভিন্ন সোর্স ও পুলিশের বক্তব্য নিয়ে তিনি প্রতিবেদনটি করেছেন। এখানে কোনো ভুল নেই। এ কথা বলার পরপরই তাঁরা উত্তেজিত হয়ে আইয়ুব খান সরকারের গায়ে হাত তোলেন। এ সময় তাঁদের উপর্যুপরি কিলঘুষিতে মাথা ফেটে যায় তাঁর। একপর্যায়ে কয়েকজন সাংবাদিকের সহায়তায় হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তার (আরএমও) কক্ষে আশ্রয় নেন তিনি।

হামলার সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন সময় টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার আশিকুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যমুনা টিভির সংবাদে কেন বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ বলা হয়েছে, তা নিয়েই প্রথমে তর্কাতর্কি শুরু হয়। আইয়ুব খান সরকার বারবারই এটা তো তাঁর লেখার কিছু নয়, ওসি ও স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন বলছিলেন। এরপরই ‘লিখলি কেন’, ‘এখনই ঠিক কর’ বলে হামলা করা হয়। তাঁকে উপর্যুপরি কিলঘুষি মারা হয়। ঠেকাতে গিয়ে তিনিও (আশিকুর) কিলঘুষি খেয়েছেন।

সদর হাসপাতালের আরএমও ফরিদা গুলশানারা কবীর বলেন, হামলার ঘটনায় সাংবাদিক আইয়ুব খান সরকারকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাঁর মাথার ডান পাশে চারটি সেলাই লেগেছে। মাথায় আঘাত করার কারণে তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমদাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতাল চত্বরে সাংবাদিক আইয়ুব খান সরকারের ওপর হামলার ঘটনা শুনেছেন। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ