ঈদের দিন আট জেলায় সড়কে ঝরল ১৬ প্রাণ
Published: 31st, March 2025 GMT
ঈদের দিন দেশের সাত জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো কয়েকজন। এর মধ্যে, বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রামের লোহাগড়ায়। সেখানে বাসের সঙ্গে মিনিবাসের সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রাণহানি হয়েছে বগুড়ায়। সেখানে পৃথক দুর্ঘটনায় বাবা-মেয়েসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া, গাজীপুরে অটোরিকশায় বাসের ধাক্কায় দুইজন, মেহেরপুরে মাইক্রোবাসের চাপায় দুইজন এবং নাটোর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মাগুরা এবং ঝিনাইদহে একজন করে মারা গেছেন।
সোমবার (৩১ মার্চ) বিভিন্ন সময় এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে। রাইজিংবিডির প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
আরো পড়ুন:
মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছে ধাক্কা, যুবক নিহত
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অটোরিকশায় বাসের ধাক্কা, নিহত ১
চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি এলাকায় বাসের সঙ্গে মিনিবাসের সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।
লোহাগাড়া ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার রাখাল চন্দ্র রুদ্র বলেন, ‘‘চুনতি এলাকায় বাস-মিনিবাসের সংঘর্ষ হয়েছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস এবং পুলিশের একাধিক দল ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করেছে।’’
বগুড়া
বগুড়ায় ঈদের দিন ঘুরতে বেরিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। শেরপুর হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের উপ-পরিদর্শক আব্দুল খালেক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘‘ঈদের দিন বিকেলে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হন শাহ আলম, তার কন্যাশিশু ও শ্বশুর। বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মহিপুর ইউনিয়নের জামতলা এলাকায় পৌঁছালে মোটরসাইকেলটি রাস্তার পূর্ব পাশ থেকে পশ্চিম দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় অজ্ঞাত গাড়ি মোটরসাইকেলকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে মোটরসাইকেলের তিন আরোহী আহত হন। তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে বাবা-মেয়ের মৃত্যু হয়।’’
অপরদিকে, বগুড়ার শেরপুরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় অলক নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন জয়দেব নামের মোটরসাইকেলের আরেক আরোহী।
শেরপুর হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের উপ-পরিদর্শক আব্দুল খালেক বলেন, ‘‘অলক ও জয়দেব মোটরসাইকেলযোগে ঝুপুনিয়া আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে যাচ্ছিলেন। গতি বেশি থাকায় মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের ওপর পরে যান তারা। এতে দুজনই আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক অলককে মৃত ঘোষণা করেন।’’
গাজীপুর
গাজীপুরে অটোরিকশায় বাসের ধাক্কায় দুইজন নিহত হয়েছেন। তারা সম্পর্কে খালা ও ভাগ্নি। ঘটনার পরে স্থানীয়রা যাত্রীবাহী বাসে আগুন ধরিয়ে দেন।
পুলিশ জানায়, গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা থেকে একটি অটোরিকশায় শিউলি বেগম এবং তাবাসসুম নরসিংদীতে আত্মীয়ের বাড়ি যাচ্ছিলেন। শিববাড়ি মোড়ে পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাস অটোরিকশাকে চাপা দেয়। এতে অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়।
গাজীপুর সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো.
মেহেরপুর
মেহেরপুরে মাইক্রোবাসের চাপায় দুইজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তিনজন। নিহতরা হলেন- মেহেরপুর সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের হাসানুজ্জামানের ছেলে ব্যাংক কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান ও গাংনী উপজেলার ধানখোলা গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে জুবায়ের হোসেন।
মেহেরপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা শামীম রেজা বলেন, ‘‘বেপরোয়া গতিতে একটি মাইক্রোবাস আমঝুপি মেহেরপুর শহরে যাচ্ছিল। পথে একটি মোটরসাইকেল ও ভ্যানকে ধাক্কা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সীমানা পিলারে ধাক্কা দেয় মাইক্রোবাসটি। এতে মোটরসাইকেলের দুই ও ভ্যানের দুই আরোহীসহ পাঁচজন আহত হন। দ্রুত তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক দুইজনকে মৃত ঘোষণা করেন।’’
নাটোর
নাটোরের বড়াইগ্রামে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কায় আব্দুল্লাহ নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। বড়াইগ্রাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহবুবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘‘বিকেলে লক্ষ্মীকোল বাজারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হন আব্দুল্লাহ। বাড়ি থেকে ২০০ গজ দূরে যেতেই মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে গুরুতর আহত হন তিনি। স্বজনেরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে অটোরিকশায় বাসের ধাক্কায় একজন নিহত হয়েছেন এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তিনজন। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সময়ে নিহত ও আহতের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।
সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মামুন রহমান বলেন, ‘‘বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী একটি বাস বিপরীত দিক থেকে আসা একটি অটোরিকশাকে ধাক্কা দিলে অটোরিকশায় থাকা একজন নিহত ও তিনজন আহত হন।’’
‘‘নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে ও আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।’’- যোগ করেন তিনি।
মাগুরা
মাগুরার রামনগরে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় অজ্ঞাত নারী নিহত হয়েছেন। সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
মাগুরা হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহম্মদ আলমগীর কবীর বলেন, ‘‘রামনগর বাজার মোড় এলাকায় হাইওয়ে সড়ক পার হওয়ার সময় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় এক নারী নিহত হয়েছেন। মোটরসাইকেলটি আটক করা হয়েছে। তবে, চালক পালিয়ে গেছেন। নিহতের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে।’’
ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে আলমসাধুর চাপায় আরিফ হোসেন নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। কোটচাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কবির হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহতের চাচাতো ভাই ও আলমসাধুর চালক ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘‘দুই ভাই সারাদিন আখের রস বিক্রি করে বাড়ি ফিরছিলাম। আমি আলমসাধু চালাচ্ছিলাম, আর আরিফ আলমসাধুর উপরে থাকা রস চাপা মেশিন ধরে বসে ছিল। ফুলবাড়ি নামক স্থানে পৌঁছালে গাড়ির সামনের চাকা খাদে পড়ে। সে সময় আরিফ উপর থেকে নিচে পড়লে ওর মাথার ওপর দিয়ে চাকা চলে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’’
ঢাকা/রেজাউল/এনাম/রেজাউল/ফারুক/আরিফ/রুবেল/শাহীন/শাহরিয়ার/রাজীব
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক দ র ঘটন ন হত ন শ চ ত কর ছ ন ব র হ মণব ড দ র ঘটন য় ঈদ র দ ন চ ক ৎসক উপজ ল র দ ইজন ত নজন
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।