ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে ঈদ উৎসবে মাতলো গ্রামবাসী
Published: 3rd, April 2025 GMT
‘এসো স্মৃতির গ্রামে, মিলি ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে’ স্লোগানে শিশু থেকে তরুণ ও বৃদ্ধদের অংশগ্রহণে ঈদ উৎসবে মেতেছেন গ্রামবাসী। ঈদের ছুটিতে স্মৃতিঘেরা গ্রামে ফিরে এমন আয়োজন করেছেন ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার জুঙ্গুরদিয়া গ্রামবাসী। তাঁদের উদ্যোগে আজ বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) দিনব্যাপী জুঙ্গুরদি আভা মাঠে দিনব্যাপী নানা প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।
ঈদ উৎসব ও মিলনমেলা উপলক্ষে সকাল ১০টার দিকে বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন গ্রামের গুনী বয়োজ্যেষ্ঠরা। পরে রঙবেরঙয়ের টি-শার্ট গায়ে বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়। র্যালিটি অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের হয়ে জুঙ্গুরদি বাস স্ট্যান্ড প্রদিক্ষণ করে শেষ করে।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথমার্ধ শুরু হয় ছাত্র ও পেশাজীবীদের মধ্যকার ক্রিকেট খেলা দিয়ে। পরে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে হামদ-নাদ, গজল, কোরআন তেলওয়াত, কবিতা আবৃতি প্রতিযোগিতা হয়। শিশু-কিশোরদের মাঝে বয়সভিত্তিক দৌড়, বয়স্কদের হাড়ি ভাঙ্গা প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন বয়সীদের নানা প্রদর্শনী হয়। যা দেখতে জুঙ্গুরদিয়া গ্রামবাসী ছাড়াও বিভিন্ন গ্রামের মানুষ সকাল থেকে জড়ো হতে থাকে।
আরো পড়ুন:
কুষ্টিয়ায় বিনোদন কেন্দ্রে আনন্দে মেতেছে শিশুরা
১৬ বছর পর মুক্ত পরিবেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের ঈদ
অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা ওই গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মাদ তারেক হাসান। তিনি শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘কর্মময় ব্যস্ত জীবনের মাঝে ঈদের ছুটিতে শৈশব স্মৃতিতে ফিরে যেতে এই আয়োজন করা হয়েছে। আমরা নতুন আঙ্গিকে মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে চাই। সেই লক্ষ্যে আজ থেকে প্রতিবছর ঈদ উৎসবের আয়োজন করা হবে। এটি শুধু উৎসব নয়, আমাদের গ্রামের গুণীজন ও কৃতী শিক্ষার্থীদের সম্মাননাও দেওয়া হবে। আমাদের এই গ্রামকে দেশের মধ্যে রোল মডেল হিসেবে গড়তে চাই।’’
গ্রামে প্রথমবারের মতো এমন আয়োজনে উৎফুল্ল শিশু থেকে বয়োজ্যেষ্ঠরা। তারা, হিংসা-বিভেদ, হানাহানি দূর করে শান্তিপূর্ণ গ্রাম গড়তে আজ যেন ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন অনেকে।
এ অনুষ্ঠানে উল্লেখ্যযোগ্যদের অংশগ্রহণ করেন, নগরকান্দার ঐতিহ্যবাহী এম এন একাডেমীর সাবেক প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমান বাবলু, ডা.
ঢাকা/তানিম/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ উৎসব ঈদ উৎসব গ র মব স অন ষ ঠ ন
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।