নেত্রকোনায় খামারির ফাঁদে মেছোবাঘ
Published: 4th, April 2025 GMT
নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় এক খামারির ফাঁদে একটি মেছোবাঘ ধরা পড়েছে। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার পাচুড়া গ্রামের শেখ জামালের হাঁসের খামার থেকে মেছোবাঘটি আটক করা হয়। মেছোবাঘটির উচ্চতা প্রায় দুই ফুট এবং লম্বায় তিন ফুট। সারা গায়ে ডোরাকাটা দাগ। গায়ের রং ধূসর। এটি দেখতে ভিড় করেছেন স্থানীয় লোকজন।
কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাইযুল ওয়াসীমা নাহাত বলেন, একটি হাঁসের খামার থেকে মেছোবাঘ আটকের খবর পেয়েছেন। বনজঙ্গলে হয়তো খাবার না পেয়ে মেছোবাঘটি লোকালয়ে চলে এসেছে। এটি অবমুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ, বন বিভাগ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাচুড়া গ্রামের শেখ জামালের খামার থেকে গত দুই মাসের মধ্যে কয়েক দিন পরপর কয়েকটি করে হাঁস কমে যাচ্ছিল। তিনি খামারের বেড়ার চারদিকে জাল দিয়ে রাখেন। এতেও কাজ হয়নি। সম্প্রতি তিনি কলমাকান্দা থেকে লোহার তৈরি ফাঁদসহ একটি খাঁচা বানিয়ে আনেন। খাঁচাটির ভেতর একটি হাঁস রেখে রাতে খামারের পাশে রেখে দেন। ইতিমধ্যে দুটি শেয়াল ওই ফাঁদে আটকা পড়ে। পরে অবশ্য তা ছেড়ে দেওয়া হয়। আজ ভোরে ওই ফাঁদে একটি মেছোবাঘ ধরা পড়ে। খবর পেয়ে সকাল থেকে উৎসুক লোকজন সেটি দেখতে খামারির বাড়িতে এসে ভিড় করেন।
খামারি শেখ জামাল বলেন, ‘গত দুই মাসে রাতের বেলা আমার খামারের অন্তত ২৮টি হাঁস খেয়েছে। আমি ভেবেছিলাম, শিয়াল অথবা বনবিড়াল–জাতীয় কোনো প্রাণী হাঁসগুলো খেয়েছে। পরে ফাঁদে মেছোবাঘ ধরা পড়ে। গ্রামের লোকজন মেছোবাঘটি মেরে ফেলতে চেয়েছিল। আমি হতে দিইনি। মেছোবাঘটি উদ্ধার করে নিয়ে যেতে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও বন বিভাগের লোকজনকে খবর দেওয়া হয়েছে।
নেত্রকোনা সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক প্রধান ও বন্য প্রাণী গবেষক মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।
আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।
আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।
কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।