‘এক দুর্ঘটনা কত মায়ের বুক খালি করল’
Published: 4th, April 2025 GMT
একে একে সব কটি আলো নিভে গেল রফিকুল ইসলামের পরিবারটির। নিহতের তালিকায় শেষ নাম তাসনিয়া ইসলাম প্রেমা। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁর মরদেহ ঢাকায় নেওয়ার তোড়জোড় চলছিল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মর্গে। তাঁকে দাফন করা হবে মিরপুরের কবরস্থানে মা, বাবা ও দুই বোনের পাশে। একসঙ্গে পুরো পরিবার নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন স্বজনেরা।
লাশ নিতে আসা তাসনিয়ার মামা রবিউল হাসানের চোখের পানি শুকিয়ে গেছে এই কদিনে। রবিউল হাসান বললেন, ‘একটা পরিবার পুরোপুরি শেষ হয়ে গেল। আমার বৃদ্ধ মা এই ঘটনার পর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। চোখের সামনে মেয়ে, জামাতা, নাতনিদের মৃত্যু দেখতে হলো তাঁকে। এই দুর্ঘটনা আমাদের দিকে তিন মায়ের বুক খালি করেছে। এ ছাড়া দিলীপ বাবুর মা-বাবাও দেখলেন ছেলে ও পুত্রবধূর লাশ। এক দুর্ঘটনা কত মায়ের বুক খালি করল!’
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় গত বুধবার এ সড়ক দুর্ঘটনায় তাসনিয়াসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে তাসনিয়ার মা, বাবা, দুই বোনসহ একই পরিবারের পাঁচজন রয়েছেন। ঘটনাস্থলে মারা যাওয়া তাসনিয়ার মা লুৎফুন নাহার, বাবা রফিকুল ইসলাম এবং দুই বোন আনিশা আক্তার ও লিয়ানার মরদেহ বৃহস্পতিবার মিরপুর–১১ নম্বরে কালশী কবরস্থানে দাফন করা হয়। একই স্থানে দাফন করা হয় রফিকুল ইসলামের ভাগনি তানিফা ইয়াসমিনকেও। এখন তাসনিয়াকেও তাঁদের পাশে কবর দেওয়া হবে বলে জানান তাঁর মামা রবিউল হাসান।
সড়ক দুর্ঘটনার পর থেকে তাসনিয়ার মামা রবিউল হাসান ঢাকা-চট্টগ্রাম দৌড়ের মধ্যে রয়েছেন। পাঁচজনের লাশ দাফন করে আজ শুক্রবার সকালে তিনি ও অন্যরা চট্টগ্রামে ফিরেছেন। সঙ্গে রয়েছেন নিহত তানিফার ভাই সাকিব আহমেদ। মামাতো বোনের লাশ নিতে তিনিও আসেন।
সাকিব আহমেদ বলেন, ‘মামাদের সঙ্গে আমার ছোট বোনকে দাফন করা হয়েছে। এখন প্রেমাকে নিতে এসেছি। নিজের মেয়ে এবং ভাইয়ের পরিবারকে হারিয়ে আমার মা (নাসরিন বেগম) খুব ভেঙে পড়েছেন।’
নিহত রফিকুল ইসলাম ঢাকায় একটি পোশাক কারখানার কর্মকর্তা ছিলেন। বাড়ি পিরোজপুরে। তিনি ঢাকায় মা ও পরিবার নিয়ে থাকতেন। ঈদের ছুটিতে রফিকুল ইসলাম নিজের পরিবার, সহকর্মী দিলীপ বিশ্বাসের পরিবারসহ কক্সবাজারে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। বুধবার সকালে তাঁদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়ার জাঙ্গালিয়া এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাসের সঙ্গে ধাক্কা খায়। ওই দিনই ১০ জন মারা যান। আজ তাসনিয়ার মৃত্যু হলো।
নিহত বাকিরা হলেন দিলীপ বিশ্বাস ও তাঁর স্ত্রী সাধনা মণ্ডল, সাধনার স্বজন আশীষ মণ্ডল, রফিকুলের স্বজন মোক্তার আহমেদ এবং চালক ইউছুফ আলী।
একই দুর্ঘটনায় নিহত দিলীপ বিশ্বাস ও তাঁর স্ত্রী সাধনা মণ্ডলের মা–ও এমন মৃত্যু কোনোভাবে মেনে নিতে পারছেন না।
রবিউল হাসান বলেন, ‘দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা চট্টগ্রাম আসি। এখানে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এবং স্বেচ্ছাসেবকেরা যেভাবে আমরা আসার আগে থেকেই আহতদের সেবা দিয়েছে, তা অনেক বড় পাওয়া। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাদের পরিবারের কাউকে বাঁচাতে পারলাম না।’
এ ঘটনায় নিহত দিলীপ বিশ্বাসের মেয়ে আহত আরাধ্য বিশ্বাসকে আজ ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে। আরাধ্যর মামাতো ভাই আহত দুর্জয় মণ্ডল চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র পর ব র দ র ঘটন ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
গৌরনদী থানার ওসি-এসআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা
এক লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগে গৌরনদী মডেল থানার ওসি ইউনুস মিয়া ও উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী এক নারী। বরিশাল সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে আজ মঙ্গলবার মামলাটি দায়ের করেন গৌরনদীর বাটাজোর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আজাদ সরদারের স্ত্রী সুমা বেগম।
অভিযোগকারীর আইনজীবী নাজিম উদ্দীন আহমেদ পান্না এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে মামলাটি করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী নারী মামলায় অভিযোগ করেছেন, গত ১১ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় কতিপয় দুর্বৃত্তরা তার (সুমা) শ্বশুরবাড়ির পাকা কবরস্থান ভাঙচুর করে ও দখলের চেষ্টা করে। এ ঘটনায় বাদী জরুরি সেবা ৯৯৯- এ কল করলে থানার এসআই নজরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে যান। তবে নজরুল ইসলাম ভুক্তভোগী সুমা বেগমসহ মামলার তিনজন সাক্ষীকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। ওসি এবং এসআই আটককৃতদের ছেড়ে দিতে সুমা বেগমের কাছে এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। টাকা দিকে অপরাগতা প্রকাশ করায় মামলায় জড়ানোর হুমকি দেন ওসি এবং এসআই। ওইদিন রাত নয়টার পর থানা হেফাজত থেকে বাদী ও মামলার তিনজন সাক্ষীকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ওসি এবং এসআই মামলার বাদী ও তিন সাক্ষীকে দীর্ঘসময় থানায় আটকে রাখার সুযোগে দুর্বৃত্তরা কবরস্থান ভাঙচুর করে দখল করতে পেরেছে। বাদীর দায়ের করা এজাহার থানায় মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়নি। এ ঘটনায় বাদী সুমা বেগম গত ১৩ এপ্রিল দুর্নীতি দমন কমিশনের বরিশাল কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো. ইউনুস মিয়া বলেন, ‘ঘুষ দাবির কোনো ঘটনা সেদিন ঘটেনি। একটি কু-চক্রী মহলের প্ররোচনায় এ মামলা দায়ের করা হয়েছে।