Prothomalo:
2025-05-01@03:23:37 GMT

বিছানা–গাড়ি বানিয়ে হইচই

Published: 5th, April 2025 GMT

সড়ক ধরে চলে যাচ্ছে খাটসহ একটি বিছানা, এক ব্যক্তি বিছানায় রাখা কোলবালিশে বাঁ হাত রেখে আরাম করে বসে আছেন। ডান হাত দিয়ে একটি স্টিয়ারিং ঘোরাচ্ছেন। সম্প্রতি অনলাইনে একটি ভিডিও তুমুল ভাইরাল হয়। সেখানেই দেখা যায় এই চিত্র।

অদ্ভুত দেখতে এই ‘বিছানা–গাড়ি’ তৈরি করেছেন ভারতীয় তরুণ নওয়াব শেখ। তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের একটি সড়কে নিজের অদ্ভুত এই গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিলেন নওয়াব। তাঁর গাড়ির কারণে সেদিন সেই সড়কে রীতিমতো যানজট লেগে গিয়েছিল।

নওয়াবের সেই বিছানা–গাড়ির ওপর ম্যাট্রেস পাতা। তার ওপর উজ্জ্বল রঙের চাদর, বালিশ। বিছানার পায়ের দিকের অংশে আবার দুটি সাইড মিরর লাগানো।

ইনস্টাগ্রামে নওয়াবের বিছানা–গাড়ি চালানোর ভিডিওটি পোস্ট করার পর সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে।

অন্য গাড়ির মতো নওয়াবের গাড়িতেও চারটি চাকা ও ব্রেক আছে। আছে একটি স্টিয়ারিং। ভিডিওতে একপর্যায়ে তাঁকে দাঁড়িয়ে দুই হাত দুই দিকে প্রসারিত করে বলিউডের নায়ক শাহরুখ খানের মতো করে পোজ দিতে দেখা যায়। তারপর বসে আবার তিনি তাঁর অদ্ভুত গাড়িটি চালাতে শুরু করেন।

ওই ভিডিওর নিচে মন্তব্যের ঘর নানা মন্তব্যে ভরে ওঠে। একজন লেখেন, ‘ভারত নতুনদের জন্য নয়।’

আরেকজন লেখেন, ‘রোলস–রয়েস থেকে ৬৯টি মিসড কল এসেছে।’

অন্য আরেকজন লেখেন, ‘এমনটা কেবল ভারতেই দেখা যায়।’

সড়কে এমন একটি গাড়ি চালানোর অনুমতি নওয়াবের আছে কি না, তা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তোলেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক বছরের বেশি সময় ধরে পরিশ্রম করে গাড়িটি তৈরি করেছেন নওয়াব। এ জন্য তাঁর ব্যয় হয়েছে দুই লাখ রুপি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে নওয়াবের গাড়ির প্রশংসা করলেও পুলিশ গাড়িটি আটকে দিয়েছে। এমনকি সেটি খুলেও ফেলা হয়েছে। কারণ, গাড়িটির কারণে মুর্শিদাবাদের রানীনগর-দমকল সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নওয় ব র

এছাড়াও পড়ুন:

ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা

বছর পাঁচেক আগেও ধান কাটার শ্রমিকেরা বৈশাখ মাসের অপেক্ষায় থাকতেন। বৈশাখে হাওরের বুকজুড়ে সবুজ ধান যখন সোনালি রঙ ছড়াতে শুরু করে, তখন থেকেই দূরদূরান্ত থেকে হাওরে আসতে থাকেন ধান কাটার শ্রমিকেরা। কিন্তু, এই চিত্র দ্রুত বদলাচ্ছে। হাওরের কৃষক এখন ধান কাটার জন্য বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করেন। ফলে কৃষকের শ্রম এবং অর্থ দুটোরই সাশ্রয় হচ্ছে। তবে, কর্মহীন হয়ে পড়ছেন কৃষি শ্রমিকেরা। বাধ্য হয়ে তারা পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে ঝুঁকছেন অন্য পেশায়।

তিন বছর হলো ধান কাটার পেশা ছেড়েছেন মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের মো. মকবুল মিয়া। এখন তিনি সারাবছর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান।

আরো পড়ুন:

খুলনার বরফশ্রমিক
নেই নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড ও ছুটি

ফুড ডেলিভারিম্যান: খাবারের রাজ্যে অতৃপ্ত দিনরাত

মকবুল মিয়া বলেন, ‘‘আগে বছরের ছয় মাস বর্ষায় নৌকা বাইতাম, আর হুগনা সিজন আইলে নিজের জমি চাষ করতাম, আবার মাইনষের জমিতেও কামলা দিতাম। যা আয় অইতো তাই দিয়া আমরার ছয়জনের সংসার চইল্যা যাইতো। কিন্তু, যহন থেইক্যা নতুন নতুন মেশিন হাওরে আইতাছে, তহন থেইক্যা আমরার আর বেইল নাই।’’

‘‘কেউ আর আমরারে আগের মতন দাম দেয় না। কাম করলেও ঠিকমতো টেহা পাই না, তাই পুষায় না,’’ বলেন এই কৃষিশ্রমিক।

মকবুলের মতো ধান কাটা, মাড়াই, রোদে শুকানো, ঝাড়া, কাঁধে বহন করার মতো স্বাধীন পেশা ছেড়েছেন অষ্টগ্রামের ফয়জুল, ইটনার শামছুল মিয়া, নিকলীর ফরিদ উদ্দিনসহ অসংখ্য শ্রমিক। এক সময় যারা এ পেশায় দলবেঁধে কাজ করতেন, এখন দৃশ্যপট পুরোটাই ভিন্ন। ধান কাটার পেশা বদলে তারা এখন কেউ রিকশাচালক, কেউ চায়ের দোকানদার, কেউ চটপটি-ফুচকার দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

তারা বলছেন, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির গতির সঙ্গে তারা কখনো তাল মেলাতে পারবেন না। কৃষকরাও তাদের শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছেন না। বেশি জমি যাদের আছে তারাও আধুনিক পদ্ধতির প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন। যে কৃষক অল্প জমিতে চাষাবাদ করেছেন, তারাও আর পয়সা খরচ করে কৃষিশ্রমিকের ওপর নির্ভর করছেন না। তারা পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা নিচ্ছেন। ফলে খেটে খাওয়া শ্রমিকেরা পড়েছেন বিপাকে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমির ধান কাটতে প্রচুর সময় লাগে। ফসল কাটার পরে বহন ও মারাই করা, তারপর বস্তায় সংরক্ষণ করার জন্যও অনেক শ্রমিকের দরকার। এটুকু ৬ থেকে ৭ জন শ্রমিকের সারা দিনের কাজ। তার জন্য মজুরি গুনতে হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। কিন্তু, এ কাজে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করলে সময় এবং অর্থ দুটোই কম লাগে।

বৈশাখে বর্ষার পানি ও বৈরী আবহাওয়া না থাকায় কৃষকেরা হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটছেন। বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে ঝড়-তুফান শুরু হলে পাকা ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে তারা যে পদ্ধতিতে ধান কাটা সহজ এবং দ্রুত হয় সেই পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার পুরো জেলায় এক লাখ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওর এলাকাতেই আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। ফলন ভালো হওয়ায় এই ধান থেকে এবার প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ধান কাটতে এ বছর হাওর অঞ্চলে ৩৫ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত আছেন। এই সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধান কাটতে কৃষক কম্বাইন্ড হারভেস্টারসহ ৪১৩টি ধান কাটার যন্ত্র ব্যবহার করছেন। 

জেলা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. খোরশেদ উদ্দিন বলেন, ‘‘মানুষের পেশা পরিবর্তনশীল। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের বিভিন্ন পেশা বেছে নিতে হয়। কিন্তু, কৃষি এমন একটা পেশা, যারা এ পেশা রপ্ত করেছেন তাদের জন্য নতুন পেশায় আসা খুব কঠিন। বর্তমানে কৃষিকাজে যেভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, তাতে কৃষিশ্রমিকেরা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।’’

‘‘শুধু কৃষিতেই নয়, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে,’’ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকারকেই সুদৃষ্টি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান, মাঠে যদি কৃষক ও শ্রমিক ন্যায্য শ্রমমূল্য না পান, তাহলে কৃষিও একদিন হুমকির মুখে পড়বে।’’

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ