স্বর্ণভর্তি ব্যাগ ফেরত দিয়ে সততার দৃষ্টান্ত গড়লেন অটোরিকশাচালক
Published: 5th, April 2025 GMT
সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ফেলে যাওয়া ব্যাগভর্তি ১৮ ভরি স্বর্ণালঙ্কার এবং ১৫ হাজার টাকা যাত্রীকে ফেরত দিয়ে সততার অনন্য দৃষ্টান্ত গড়েছেন বগুড়ার খায়রুল ইসলাম খোকন। গত ২৯ মার্চ নিজের অটোরিকশায় ওই ব্যাগ পান তিনি। শুক্রবার (৪ এপ্রিল) রাতে পুলিশের মাধ্যমে প্রকৃত মালিককে স্বর্ণ ও টাকাসহ ব্যাগ ফেরত দেন খায়রুল ইসলাম খোকন।
খায়রুল ইসলাম খোকনের বাড়ি বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বেতগাড়ি এলাকায়। তিনি বগুড়ার শাহ সুলতান কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার পাশাপাশি সিএনজি অটোরিকশা চালান। বাবার মৃত্যুর পর নিজের লেখাপড়ার খরচ চালানো এবং সংসারের হাল ধরতেই তিনিই অটোরিকশা চালান।
গত ২৯ মার্চ পাবনার ফরিদপুর উপজেলার গোপালনগরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী মো.
পুলিশের পরামর্শে তিনি শাজাহানপুর থানায় একটি জিডি করেন। পাশাপাশি তিনি কয়েকদিন ধরে সাতমাথায় ওই অটোরিকশাচালককে খুঁজতে থাকেন। কিন্তু, তার দেখা না পেয়ে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।
এদিকে, অটোরিকশার চালক খায়রুল ইসলাম খোকন ব্যাগের মালিকের সন্ধান করতে থাকেন। কিন্তু, তাকে কোথাও না পেয়ে তিনি ব্যাগটি নিয়ে নিজ বাড়ি শাজাহানপুর উপজেলার বেতগাড়ি হাজীপাড়ায় যান এবং তার মাকে বিষয়টি জানান। মা তাকে ব্যাগটি ফিরিয়ে দিতে বলেন। মায়ের কথামতো ব্যাগটি ফিরিয়ে দিতে আরো চেষ্টা করতে থাকেন খায়রুল। একপর্যায়ে ব্যাগের মালিককে না পেয়ে পরিচিত ট্রাফিক সার্জেন্ট আলমগীরের মাধ্যমে সদর থানার ওসি এস এম মইনুদ্দিনের কাছে যান এবং ব্যাগটি থানায় জমা দেন। এরপর পুলিশ জিডির সূত্র ধরে ব্যাগের প্রকৃত মালিক জুয়েলারি ব্যবসায়ী মো. শাহিনকে গতকাল ৪ মার্চ রাত ১১টার দিকে থানায় ডেকে স্বর্ণ ও টাকাসহ ব্যাগ বুঝিয়ে দেন। এ সময় ওই ব্যবসায়ী অটোরিকশাচালক খায়রুলকে ৫০ হাজার টাকা দিতে চান। কিন্তু, তিনি টাকা নিতে অনীহা প্রকাশ করেন।
ব্যাগ ফিরে পেয়ে শাহিন বলেন, খায়রুলের সততা আমাকে মুগ্ধ করেছে। ওর মতো মানুষ থাকলে সমাজে কোনো ভয় নেই।
খায়রুল ইসলাম খোকন বলেন, ব্যাগে থাকা সোনা ও টাকা মালিককে ফিরিয়ে দিতে পেরে দায়মুক্ত হয়েছি। সারা জীবন সৎ থাকতে হবে। সৎ থাকলে পরকালে ভালো হবে।
সদর থানার (ওসি) এস এম মইনুদ্দিন বলেন, খায়রুলের মতো শিক্ষার্থীরা সমাজের জন্য আশার আলো। সে শুধু সৎ নয়, দায়িত্বশীল ও মানবিক।
ঢাকা/এনাম/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র উপজ ল র স বর ণ ও ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।