ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের ১৫ কিলোমিটার তীব্র যানজট, ভোগান্তি
Published: 5th, April 2025 GMT
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশের কাঁচপুর থেকে মেঘনা সেতুর টোল প্লাজা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার (৫ এপ্রিল) সকালে মহাসড়কের ঢাকাগামী ও চট্টগ্রামগামী লেনের কাঁচপুর থেকে মেঘনা টোলপ্লাজা পর্যন্ত এমন দৃশ্য দেখা যায়।
লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরের যাত্রাকে ঘিরে লক্ষ লক্ষ মানুষের আগমনের কারণে এ যানজট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। এদিকে যানজটের ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন কর্মস্থলে যাওয়া যাত্রীরা।
জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মদনপুর, জাঙ্গাল, লাঙ্গলবন্দসহ কয়েকটি পয়েন্টে পুণ্যার্থীরা যানবাহন থেকে নেমে রাস্তা পারাপারের কারণে এ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। পুণ্যার্থীদের আগমনের কারণে মহাসড়কে ভোর থেকেই যানবাহনের চাপ কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, তীব্র যানজটের কারণে অধিকাংশ লোককেই পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে যেতে দেখা গেছে। অনেকেই আবার তীব্র যানজটের কারণে বাসায় ফিরে যাচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন জরুরি কাজে বের হওয়া নারী ও বৃদ্ধরা। এদিকে বিভিন্ন যানবাহনে বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
মনির হোসেন নামের এক চাকরিজীবী বলেন, মালিবাগ যাওয়ার জন্য ৩০ মিনিট আগে কাঁচপুর মোড় থেকে বাসে উঠেছি। কিন্তু রাস্তায় এত যানজট যে, বাস এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।
শ্যামলী আক্তার নামের আরেক যাত্রী জানান, দীর্ঘক্ষণ বাসে বসে আছি। কতক্ষণ রাস্তার এই অবস্থা থাকবে জানি না।
কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি কাজী ওয়াহিদ মোর্শেদ জানান, ঈদের ছুটি থাকায় ঘরমুখো মানুষের চাপ রয়েছে এছাড়া লাঙ্গলবন্দের পুণ্যস্নানে প্রচুর পুণ্যার্থী আসায় গাড়ির চাপ বাড়ছে তাই যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের একাধিক টিম মহাসড়কে কাজ করছে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স ন রগ ও ন র য়ণগঞ জ য নজট র র য নজট
এছাড়াও পড়ুন:
পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে
অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।
১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’
এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।
পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)