বিশ্বের অন্যতম জনবহুল রাজধানী শহর ঢাকার খেলার মাঠ, পার্ক তথা উন্মুক্ত জনপরিসরের সংকটের বিষয়টি আমাদের কারও অজানা বিষয় নয়। পর্যাপ্ত মাঠ ও পার্ক না থাকার কারণে জনজীবন এখানে সংকুচিত হয়ে গেছে। ঢাকা যে দিন দিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে, তার মধ্যে এটিও অন্যতম কারণ। এমন পরিস্থিতিতে মাঠ ও পার্ক এমনকি সড়কের এক পাশ দখল করে মেলার আয়োজন করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অথচ ঢাকা শহরে তেমনটিই ঘটছে। বিষয়টি খুব দুঃখজনক।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ঈদ ও বৈশাখী মেলার নামে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুটি মাঠ, একটি পার্ক ও একটি সড়কের এক পাশ দখল করে ব্যবসা শুরু করেছেন কিছু মানুষ। মেলা আয়োজনের জন্য সিটি করপোরেশনের কোনো অনুমতি নেননি তাঁরা। দক্ষিণ সিটির মতোই ঢাকা উত্তর সিটিতেও একটি মাঠ দখল করে মেলা বসানো হয়েছে। দুই সিটি করপোরেশন এলাকাতেই এসব মেলার আয়োজকেরা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। জিয়া পরিবারের ছবিও টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে মেলায়। শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে এভাবে মাঠ দখল করে মেলার আয়োজন করতেন তখনকার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির যে চারটি জায়গায় মেলা বসানো হয়েছে, সেগুলো হলো ধূপখোলা খেলার মাঠ, নারিন্দার বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা মাঠ, ইংলিশ রোডের মালিটোলা পার্ক এবং ধোলাইখালের প্রধান সড়কের এক পাশের একটি অংশে। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটিতেও মিরপুর ১১ নম্বরে প্যারিস রোড খেলার মাঠেও মেলা বসানো হয়েছে।
দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষই বলছে, খেলার মাঠ ও পার্কে মেলা বসানোর কোনো অনুমতি তারা দেয়নি। অভিযান চালানোর জন্য তারা ডিএমপিকে অনুরোধ করেছে। মূলত বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে একটি পক্ষ খেলার মাঠ ও পার্কে অবৈধভাবে মেলা বসিয়েছে।
এমন মাঠেও মেলা আয়োজন করা হয়েছে দুই বছর আগে। ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সেটি সংস্কার করা হয়েছে। মেলাগুলোয় একেকটি স্টল বরাদ্দ নিতে দিতে হচ্ছে ৫০ হাজার থেকে এক–দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। নগর–পরিকল্পনাবিদদের ভাষ্য, এখানে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। সিটি করপোরেশনের উচিত দ্রুত এসব মাঠ ও পার্ক উদ্ধার করে শিশু-কিশোর ও বাসিন্দাদের ব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়া। যাঁরা মাঠ ও পার্ক দখলের সঙ্গে যুক্ত, রাজনৈতিক পরিচয়ের দিকে না তাকিয়ে দখলদার হিসেবে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আমরা আশা করব, এ ব্যাপারে দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ও ডিএমপি যৌথভাবে জোরালোভাবে ভূমিকা রাখবে। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিও এ ব্যাপারে নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে, সেটিই কাম্য।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নোয়াখালীতে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাকে আশ্রয় দেওয়ায় তাঁতী দলের নেতা বহিষ্কার
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আলাউদ্দিনকে নিজ বাড়িতে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের এক নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বহিষ্কৃত মোহাম্মদ সৈকত উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়ন তাঁতী দলের সভাপতি ছিলেন। আজ শুক্রবার বিকেলে জেলা তাঁতী দলের সদস্যসচিব মোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে জেলা তাঁতী দলের আহ্বায়ক ইকবাল করিম সোহেল ও সদস্যসচিব মোরশেদ আলমের যৌথ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বহিষ্কারের আদেশ দেওয়া হয়।
চিঠিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মোহাম্মদ সৈকতকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি মূল্যায়নে ব্যর্থ হওয়ায় হাতিয়া উপজেলা তাঁতী দলের দক্ষিণ কমিটিকে সতর্ক করা হয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার ভোরে হাতিয়া উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের জোড়খালী গ্রামে সৈকতের বাড়ি থেকে সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে হাতিয়া থানা–পুলিশ। এ সময় তাঁর কাছ থেকে ১০টি ককটেল উদ্ধার করা হয়। আলাউদ্দিন ও মোহাম্মদ সৈকত সম্পর্কে ফুফা–ভাগনে।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ সৈকত প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে অনেকগুলো পরিবার থাকে। আমি ব্যবসার কাজে দিনের বেশির ভাগ সময় বাইরে থাকি। আলাউদ্দিন কখন বাড়িতে এসেছেন, তা আমার জানা নেই। আমাদের ঘর থেকে তাঁর শ্বশুরদের ঘর অনেক দূরে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাকে জড়ানো হয়েছে।’
নোয়াখালী জেলা তাঁতী দলের সদস্যসচিব মোরশেদ আলম বলেন, আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাকে আত্মগোপনে থাকার সুযোগ করে দেওয়ায় মোহাম্মদ সৈকতকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের তাঁতী দল কমিটিকেও সতর্ক করা হয়েছে।
আরও পড়ুনহাতিয়ায় শ্বশুরবাড়িতে পালিয়ে থাকা সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গ্রেপ্তার৩১ জুলাই ২০২৫