এবার ঈদের ছুটির আট দিনে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩২ জন নিহত হয়েছেন। এ তথ্য সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)।

দেশের পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঈদের ছুটিতে (২৮ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল) সড়কে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঢাকা বিভাগে। এ বিভাগে মারা গেছেন ৩২ জন। সংখ্যার দিক থেকেও সড়ক দুর্ঘটনা ঢাকা বিভাগে বেশি, ২৭টি।

বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, ঈদের ছুটির আট দিনে সারা দেশে ১১০টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ২০৮ জন।

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এবার টানা ৯ দিনের সরকারি ছুটি শুরু হয় ২৮ মার্চ। এ ছুটি শেষ হয়েছে ৫ এপ্রিল (গতকাল শনিবার)। ঈদের সময় প্রতিবারই সড়কে হতাহতের ঘটনা ঘটে, যার ব্যতিক্রম হয়নি এবারও। বিআরটিএ সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে।

বিআরটিএর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২৮ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩১ মার্চ (ঈদের দিন)। সড়কে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যুও হয়েছে সেদিন। ঈদের দিন সারা দেশে ১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪ জনের মৃত্যু হয়। ঈদের পরদিন (১ এপ্রিল) সড়কে মৃত্যু হয় ১৯ জনের। এর পরদিন ২ এপ্রিল দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২২ জনের মৃত্যু হয়।

২ এপ্রিল তিন মেয়ে তাসনিয়া ইসলাম, আনিশা আক্তার ও লিয়ানাকে নিয়ে মাইক্রোবাসে করে কক্সবাজার বেড়াতে যাচ্ছিলেন রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ও লুৎফুন নাহার দম্পতি। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন ভাগনি তানিফা ইয়াসমিন। পথে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় সেদিন সকালে তাঁদের মাইক্রোবাসের সঙ্গে বাসের সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে নিহত হন রফিকুল ইসলাম, লুৎফুন নাহার, লিয়ানা ও তানিফা। হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যায় আনিশা। সবশেষ গত শুক্রবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যায় তাসনিয়া। শুধু ওই দুর্ঘটনাতেই ১১ জন নিহত হন।

বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, ঈদের ছুটির আট দিনে ঢাকা বিভাগের পর সড়কে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে, ৩১ জন। এ ছাড়া খুলনা বিভাগে ২৩, রাজশাহী বিভাগে ১৪, রংপুর বিভাগে ১১ ও ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন নিহত হয়েছেন। এ সময়ে সড়কে সবচেয়ে কম মৃত্যু সিলেট ও বরিশাল বিভাগে। এর মধ্যে সিলেটে মারা গেছেন ৫ জন আর বরিশালে মারা গেছেন ৬ জন।

দুর্ঘটনাও বেশি ঢাকা বিভাগে

রাজধানীর বনানীতে ২৮ মার্চ ভোরে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বহনকারী একটি বাস উল্টে যায়। এতে ৪২ জন আহত হন।

বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, ২৮ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে, যার সংখ্যা ২৭। এসব দুর্ঘটনায় ৮৪ জন আহত হন। এ ছাড়া খুলনা বিভাগে ১৯টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭টি, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে ১৪টি করে, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৭টি করে ও সিলেট বিভাগে ৫টি সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে।

গত দুই ঈদে পরিস্থিতি কেমন ছিল

বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুনে ঈদুল আজহার সময় (১১-২৩ জুন) ১৩ দিনে সারা দেশে সড়কে নিহত হন ২৩০ জন ও আহত হন ৩০১ জন। ওই সময় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ২৩৫টি।

অন্যদিকে গত বছরের এপ্রিল মাসে ঈদুল ফিতরের সময় (৪–২০ এপ্রিল) ১৭ দিনে সারা দেশে ২৮৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২০ জন নিহত হন ও আহত হন ৪৬২ জন।

এবার ঈদে কোন ধরনের যানবাহন সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে, সেই তথ্য অবশ্য বিআরটিএর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নেই।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, চালক, যানবাহন, সড়ক—সবকিছু সঠিক থাকার পরও যখন কোনো ঘটনা ঘটে, সেটি দুর্ঘটনা। কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটার জন্য সব উপাদান বিদ্যমান থাকার পর যে ঘটনা ঘটে, সেটি কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড।

তবে এবার ঈদযাত্রায় ভোগান্তি সেভাবে ছিল না বলে উল্লেখ করেন সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, এবার তুলনামূলকভাবে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি—দুটোই কম হয়েছে। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় যাঁর পরিবারে একজন মারা গেছেন, তাঁদের জন্য সেটাই অনেক বড় কিছু। তাই সড়ক নিরাপদ করার জন্য সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন য় ২৮ ম র চ ব আরট এ সবচ য়

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামে বছর শেষে বাড়ছে ডেঙ্গু, কমেছে চিকুনগুনিয়া

চট্টগ্রামে বছরের শেষে এসে আবারও বাড়ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম দুই দিনেই ৮৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা একটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪১ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গত বছরও এই সময়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েছিল। এদিকে বছরের শেষ দিকে এসে চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ কমেছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল শূন্য।

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া—দুটিই মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। দুটিই এডিস মশার কামড়ে হয়। এডিসের বংশ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে বৃষ্টি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, নভেম্বরের শুরুতে লঘুচাপের কারণে বৃষ্টি হতে পারে। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

চট্টগ্রামে বছরের শুরু থেকে গতকাল বেলা একটা পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৯২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে গত অক্টোবর মাসে। পুরো জেলায় ওই মাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯৯০ জন। এর আগের মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৩৫। চলতি নভেম্বর মাসে এ সংখ্যা নির্ভর করছে বৃষ্টির ওপর। কারণ, শীত শুরু হলে এডিসের বংশবৃদ্ধির আশঙ্কা কম। তবে বৃষ্টি হলে সেটি বাড়তে পারে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।

এদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত কমেছে। গতকাল পর্যন্ত জেলায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬৬৯। তবে চিকুনগুনিয়ায় মাসভিত্তিক তথ্য দেয়নি সিভিল সার্জন কার্যালয়। যদিও প্রতিদিনের আক্রান্তের হিসাব দেয় তারা। প্রাথমিক হিসাবে, গত সেপ্টেম্বর মাসে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭০৪। গত অক্টোবর মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১২১ জন। এ মাসে কেবল একজন।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।

এদিকে গত বছরের তুলনায় এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের উপসর্গগুলোও কিছুটা ভিন্ন বলে জানা গেছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৪১ জন রোগী জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ জন ভর্তি হয়েছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) এবং ১২ জন ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।এ এস এম লুৎফুল কবির, মেডিসিন বিভাগের প্রধান, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা গেছে। তবে এ বছর যাঁরা আসছেন, তাঁদের মধ্যে শক সিনড্রোম বেশি। পাশাপাশি ডায়রিয়ার উপসর্গও আছে। শক সিনড্রোম হলে রোগীর রক্তচাপ বোঝা যায় না। এই দুটি উপসর্গ গুরুতর। কারণ, সময়মতো ফ্লুইড (তরল খাবার) না পেলে রোগীর অবস্থা আরও গুরুতর হতে পারে।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান এ এস এম লুৎফুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।’

চলতি বছর এপ্রিল থেকে মোটামুটি বৃষ্টি হচ্ছে। জুনে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হলেও পরের মাসগুলোয় স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়। আর থেমে থেমে বৃষ্টির সঙ্গে গরম কিন্তু কমেনি। এই বৃষ্টি ও উচ্চ তাপমাত্রা চলতি বছর ডেঙ্গুর বিস্তারে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন কীটতত্ত্ববিদেরা। তবে সংক্রমণ কমাতে সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

নগরের ২৫টি এলাকাকে ডেঙ্গু ও ২৫টি এলাকাকে চিকুনগুনিয়ার জন্য হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এর মধ্যে বন্দর, ইপিজেড, হালিশহর, কোতোয়ালি, বায়েজিদ, পাহাড়তলী, কাট্টলী, খুলশী, ডবলমুরিং, লালখান বাজার, আগ্রাবাদ, চান্দগাঁও, দেওয়ানহাট, আন্দরকিল্লা, মুরাদপুর, সদরঘাট—এসব এলাকায় ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এসব এলাকায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সরফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিশেষ দল করা হয়েছে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার জন্য। নিয়ম করে এলাকা ভাগ করে রুটিন অনুযায়ী ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।’

চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত বৃষ্টি হওয়ার ২৮ দিন পর্যন্ত মশার প্রকোপ থাকে বলে ধারণা করা হয়। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এ মাসে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এতে ডেঙ্গু বাড়তে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ