ঈদের ছুটির আট দিনে সড়কে নিহত ১৩২: বিআরটিএর তথ্য
Published: 6th, April 2025 GMT
এবার ঈদের ছুটির আট দিনে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩২ জন নিহত হয়েছেন। এ তথ্য সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)।
দেশের পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঈদের ছুটিতে (২৮ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল) সড়কে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঢাকা বিভাগে। এ বিভাগে মারা গেছেন ৩২ জন। সংখ্যার দিক থেকেও সড়ক দুর্ঘটনা ঢাকা বিভাগে বেশি, ২৭টি।
বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, ঈদের ছুটির আট দিনে সারা দেশে ১১০টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ২০৮ জন।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এবার টানা ৯ দিনের সরকারি ছুটি শুরু হয় ২৮ মার্চ। এ ছুটি শেষ হয়েছে ৫ এপ্রিল (গতকাল শনিবার)। ঈদের সময় প্রতিবারই সড়কে হতাহতের ঘটনা ঘটে, যার ব্যতিক্রম হয়নি এবারও। বিআরটিএ সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে।
বিআরটিএর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২৮ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩১ মার্চ (ঈদের দিন)। সড়কে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যুও হয়েছে সেদিন। ঈদের দিন সারা দেশে ১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪ জনের মৃত্যু হয়। ঈদের পরদিন (১ এপ্রিল) সড়কে মৃত্যু হয় ১৯ জনের। এর পরদিন ২ এপ্রিল দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২২ জনের মৃত্যু হয়।
২ এপ্রিল তিন মেয়ে তাসনিয়া ইসলাম, আনিশা আক্তার ও লিয়ানাকে নিয়ে মাইক্রোবাসে করে কক্সবাজার বেড়াতে যাচ্ছিলেন রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ও লুৎফুন নাহার দম্পতি। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন ভাগনি তানিফা ইয়াসমিন। পথে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় সেদিন সকালে তাঁদের মাইক্রোবাসের সঙ্গে বাসের সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে নিহত হন রফিকুল ইসলাম, লুৎফুন নাহার, লিয়ানা ও তানিফা। হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যায় আনিশা। সবশেষ গত শুক্রবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যায় তাসনিয়া। শুধু ওই দুর্ঘটনাতেই ১১ জন নিহত হন।
বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, ঈদের ছুটির আট দিনে ঢাকা বিভাগের পর সড়কে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে, ৩১ জন। এ ছাড়া খুলনা বিভাগে ২৩, রাজশাহী বিভাগে ১৪, রংপুর বিভাগে ১১ ও ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন নিহত হয়েছেন। এ সময়ে সড়কে সবচেয়ে কম মৃত্যু সিলেট ও বরিশাল বিভাগে। এর মধ্যে সিলেটে মারা গেছেন ৫ জন আর বরিশালে মারা গেছেন ৬ জন।
দুর্ঘটনাও বেশি ঢাকা বিভাগেরাজধানীর বনানীতে ২৮ মার্চ ভোরে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বহনকারী একটি বাস উল্টে যায়। এতে ৪২ জন আহত হন।
বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, ২৮ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে, যার সংখ্যা ২৭। এসব দুর্ঘটনায় ৮৪ জন আহত হন। এ ছাড়া খুলনা বিভাগে ১৯টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭টি, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে ১৪টি করে, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৭টি করে ও সিলেট বিভাগে ৫টি সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে।
গত দুই ঈদে পরিস্থিতি কেমন ছিলবিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুনে ঈদুল আজহার সময় (১১-২৩ জুন) ১৩ দিনে সারা দেশে সড়কে নিহত হন ২৩০ জন ও আহত হন ৩০১ জন। ওই সময় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ২৩৫টি।
অন্যদিকে গত বছরের এপ্রিল মাসে ঈদুল ফিতরের সময় (৪–২০ এপ্রিল) ১৭ দিনে সারা দেশে ২৮৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২০ জন নিহত হন ও আহত হন ৪৬২ জন।
এবার ঈদে কোন ধরনের যানবাহন সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে, সেই তথ্য অবশ্য বিআরটিএর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নেই।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, চালক, যানবাহন, সড়ক—সবকিছু সঠিক থাকার পরও যখন কোনো ঘটনা ঘটে, সেটি দুর্ঘটনা। কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটার জন্য সব উপাদান বিদ্যমান থাকার পর যে ঘটনা ঘটে, সেটি কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড।
তবে এবার ঈদযাত্রায় ভোগান্তি সেভাবে ছিল না বলে উল্লেখ করেন সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, এবার তুলনামূলকভাবে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি—দুটোই কম হয়েছে। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় যাঁর পরিবারে একজন মারা গেছেন, তাঁদের জন্য সেটাই অনেক বড় কিছু। তাই সড়ক নিরাপদ করার জন্য সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন য় ২৮ ম র চ ব আরট এ সবচ য়
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের হামলায় ২০ ইসরায়েলি নিহত
ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চারদিন ধরে চলছে। এসব হামলায় উভয় দেশের মধ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইসরায়েলের জাতীয় পরিষেবা জানিয়েছে, আজ সোমবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত শুক্রবার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা ২০ জনে পৌঁছুল। আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
অন্যদিকে আল-জাজিরা বলছে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত ইরানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডমের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়া, তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
রোববার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।