হঠাৎ বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মার্কিন ক্রেতা, ব্র্যান্ড কোম্পানি, খুচরা বিক্রেতা ও তাদের প্রতিনিধিদের কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন। গতকাল তিনি এই চিঠি ইস্যু করেন।

চিঠিতে এই সংকট মোকাবিলায় ক্রেতাদের যেকোনো পরামর্শ ও মতামত চাওয়া হয়। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে চিঠিতে বলা হয়।

চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির জন্য যুক্তরাষ্ট্র একক বৃহত্তম দেশ। দেশের মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। তাই বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ বাংলাদেশের রপ্তানিকারকসহ মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের মাঝে অনিশ্চয়তা বেড়েছে।

খোলা চিঠিতে আরও বলা হয়, এই পাল্টা শুল্ক আরোপ বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র, উভয়ের জন্য অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এর প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ব্যয় কাঠামো, সরবরাহ ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। বাংলাদেশের সরকার ও বেসরকারি খাত বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে বলে চিঠিতে জানানো হয়েছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, অনেক আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতা তাদের বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। অনেকে এই শুল্কের প্রভাব মোকাবিলায় সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করছে। তবে এই মুহূর্তে ব্যবসায়ীদের কাঁধে অতিরিক্ত চাপ না দিয়ে অংশীদারদের ধৈর্য ও সহযোগিতার জন্য অনুরোধ করা হয় খোলা চিঠিতে।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানদের উদ্দেশে খোলা চিঠিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের পোশাক খাতকে টেকসই ও সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ খাতে রূপান্তরে যেভাবে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে পাশে রয়েছে, সেই সম্পর্কের ভিত্তিতে পারস্পরিক প্রচেষ্টায় এই সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

শ্রম আইন সংশোধন দ্রুত শেষ করতে বলেছে মার্কিন প্রতিনিধিদল

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে পাল্টা শুল্ক কমাতে হলে বাণিজ্যঘাটতি কমানোর পাশাপাশি শ্রম আইন সংশোধনপ্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে বলেছে ঢাকা সফররত মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদল।

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতাদের সঙ্গে আজ সোমবার সকালে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠক করে এমনটাই বলেছে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদল। যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডেন লিঞ্চ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের নেতৃত্বে সংগঠনটির সহসভাপতি মো. রেজওয়ান সেলিম, পরিচালক ফয়সাল সামাদ, মোহাম্মদ আবদুস সালাম প্রমুখ মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে আরও ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। ব্রেন্ডেন লিঞ্চ দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন বাণিজ্যনীতি বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মার্কিন প্রতিনিধিদল বিজিএমইএর নেতাদের স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিয়েছে যে পাল্টা শুল্ক নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে এখনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়নি। ফলে পাল্টা শুল্কের হার সেটি আরও কমানোর সুযোগ রয়েছে। তার জন্য বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্যঘাটতি এবং শ্রম আইন সংশোধনপ্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাণিজ্যঘাটতি কমানোর বিষয়ে আমরা প্রতিনিধিদলকে জানিয়েছি, ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি শুরু হয়েছে। এ ছাড়া গম, এলএনজিসহ অন্যান্য পণ্য আমদানির প্রক্রিয়াও চলছে। এসব পণ্য আমদানি হলে বাণিজ্যঘাটতি অনেকটাই কমে আসবে। এ ছাড়া শ্রম আইন সংশোধনের ১২৪টির মধ্যে ১২২টির বিষয়ে আমরা ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে একমত হয়েছি। বাকিগুলোর বিষয়েও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানো যাবে। তা ছাড়া আইএলওর কনভেনশন অনুসমর্থন নিয়েও আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’

বিজিএমইএর সভাপতি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা কোনো পণ্য উৎপাদনে ওই পণ্যের মোট মূল্যের কমপক্ষে ২০ শতাংশ যদি দেশটির উপকরণ বা কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়, তাহলে ওই ২০ শতাংশের ওপর পাল্টা শুল্ক প্রযোজ্য না হওয়ার একটি বিষয় আমরা জেনেছি। সেটি পরিষ্কার করার বিষয়ে আমরা মার্কিন প্রতিনিধিদলকে অনুরোধ করেছি। তাঁরা বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা কাজ করছেন। তাঁরা দ্রুতই জানাবেন।’

পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমে ২০ শতাংশ হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে বাণিজ্য চুক্তির একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। বাণিজ্য চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত করতে তিন দিনের সফরে ঢাকায় এসেছে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদলটি। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে গতকাল রোববার সচিবালয়ে বৈঠক করে প্রতিনিধিদল। এতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নাজনীন কাউসার চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সফররত মার্কিন দল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গেও বৈঠক করবে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শ্রম আইন সংশোধন দ্রুত শেষ করতে বলেছে মার্কিন প্রতিনিধিদল
  • জামায়াত আমিরের সঙ্গে শিল্প মালিক‌দের সৌজন্য সাক্ষাৎ