সাতক্ষীরার আলীপুরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে প্রভাবশালীদের দখলে থাকা ১২ বিঘা সরকারি খাসজমি উদ্ধার করেছে জেলা প্রশাসন। আজ মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাক আহমেদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও পুলিশের দুটি দল দিনভর আলীপুরে অভিযান চালিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ওই জমি উদ্ধার করে।

দীর্ঘদিন ওই জমি নিজেদের দখলে রেখে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছিলেন আলীপুরের বাসিন্দা আবদুস সবুর ও তাঁর ভাই আবদুর রউফ। আবদুস সবুর সাতক্ষীরা জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি এবং আবদুর রউফ জেলা বিএনপির সাবেক নেতা ও আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।

জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ জানান, তাঁদের কাছে তথ্য আসে, জেলার অনেক খাসজমি দীর্ঘদিন ধরে কয়েকজন ব্যক্তি দখলে রেখে ভোগদখল করছেন। এরপর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মঈনুল ইসলামকে জেলার কোথায় কোথায় খাসজমি আছে এবং জমিগুলো কী অবস্থায় আছে, তার তালিকা প্রস্তুত করতে বলা হয়। পাশাপাশি সওজ ও পাউবোকে একই দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে সাতক্ষীরার আলীপুরের আবদুস সবুর ও তাঁর ভাই আবদুর রউফের দখলে থাকা ১২ বিঘা জমি উদ্ধার করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক বলেন, জমিগুলো সওজ ও পাউবোর। এসব খাসজমি অবৈধভাবে ভরাট করে ট্রাক টার্মিনাল ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছিল। আজ সেখানে অভিযান চালিয়ে সবকিছু গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এভাবে ধীরে ধীরে জেলার সব খাসজমি যেগুলো অবৈধভাবে দখলে আছে, সেগুলো উদ্ধার করা হবে। তাঁরা অভিযান শুরু করেছেন। তাঁদের সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা আছেন। তিনি সবার সহযোগিতা চেয়ে বলেন, সাতক্ষীরার এক খণ্ড সরকারি জমি যাতে কোনোভাবে প্রভাবশালী বা দখলকারীর হাতে না থাকে, সে লক্ষ্যে তাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন।

সরকারি খাসজমি উদ্ধার ও উচ্ছেদ অভিযানে সাতক্ষীরা সেনা ক্যাম্পের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাবিদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শেখ মঈনুল ইসলাম, সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) অতিশ কুমার সরকার, আরডিসি পলাশ আহমেদ, সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম সরোয়ার, পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সালাহ উদ্দীনসহ পুলিশ ও সেনাসদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল প র সরক র খ সজম

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ