গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলাকালে সোমবার দেশের কয়েকটি শহরে কিছু লোক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে। এ সময় তাদের লুট করতেও দেখা গেছে। এরই মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং ঘোষণা দিয়েছে– জড়িতদের শিগগির শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৫০ জনকে আটক করা হয়েছে।
আমরা বহু দেশে দেখেছি, গণঅভ্যুত্থানের পরপরই আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে। রাষ্ট্রে এত ব্যাপক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, যা বোধগম্য। এমনকি পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা বিভিন্ন অজুহাতে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করতে পারে। কিন্তু কোনো সরকার গঠনের পরও যখন মবের মতো ঘটনা ঘটে, তখন তা সর্বস্তরের জনসাধারণের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
পত্রিকার বরাতে আমরা জেনেছি, খুলনা, সিলেট, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও কক্সবাজার শহরে কেএফসি, বাটা, ডমিনো’স, পুমা, কোকা-কোলার আউটলেটে হামলার ঘটনা ঘটেছে। কোথাও কোথাও এসব প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড তছনছ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে একাধিক আউটলেটে লুটপাটের ঘটনা ঘটে। পুলিশের মহাপরিদর্শক জড়িতদের শিগগির গ্রেপ্তারের নির্দেশনা দিয়েছেন।
সব মিলিয়ে গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী আইনশৃঙ্খলার উন্নতিকরণে সরকারের সদিচ্ছা স্পষ্ট। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে তরুণদের অনেকেই এসব হামলায় উস্কানি দিচ্ছে। এতে অভ্যুত্থানের প্রতিনিধিত্বকারী সরকারের যেমন সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে, তেমনি তাদের বিভিন্ন উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যেমন সোমবারই ঢাকায় বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫ শুরু হয়েছে, যা আগামী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। এমন পরিস্থিতিতে এ ধরনের অস্থিরতা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম স্পষ্টত অবনতি ঘটাবে।
কারও কারও মতে, সরকার কঠোর না হওয়ার কারণে এ রকম নৈরাজ্য ও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শক্ত হাতে মাঠে নামলে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে থাকত। এখনও দেশের বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। নিশ্চয় এসব ঘটনা দিয়ে সরকারের সফলতা কিংবা ব্যর্থতা কোনোটাই মাপার সুযোগ নেই। তবে দেশে-বিদেশে সরকারকে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হলে আইনশৃঙ্খলা ও জনসাধারণের নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে হবে।
মবকারী যে দলের হোক না কেন, তারা রাষ্ট্র ও জনগণের শত্রু। তা ছাড়া যেভাবে তারা হামলাগুলো চালিয়েছে, তাতে ইসরায়েলি গণহত্যাকারীদের কিছুই হবে না। বরং দেশের ভেতরে অস্থিরতা ও নৈরাজ্য বাড়বে। তবে ইসরায়েলি পণ্য বাজারে থাকলে আমরা সেটি ন্যায়সংগত পদ্ধতিতে বয়কট করতে পারি। প্রতিবাদের এ ধরনের নজির আমাদের জাতীয় জীবনেও রয়েছে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে আমরা ইংরেজদের পণ্য বয়কট করেছি, আবার অসহযোগ আন্দোলনও চালিয়েছি। সরকারও ন্যায়সংগতভাবে আন্দোলন ও বিক্ষোভ করলে তাতে বাধা নেই বলে ঘোষণা দিয়েছে।
এই মুহূর্তে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্দোলন, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়া আমাদের ন্যায়সংগত লড়াই। দুনিয়ার প্রতিটি প্রান্ত থেকে এ লড়াইয়ে শামিল হওয়া প্রত্যেকের কর্তব্য। কিন্তু যখন আমরা এমন একটি কর্তব্য পালন করতে গিয়ে লুটপাটে যুক্ত হই, তখন আমাদের ভেতরকার ইসরায়েলি মানসিকতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আমরা দেশের মধ্যে এমন কিছু না করি, যা নৈরাজ্য উস্কে দেয়। তবে বিশ্বনেতৃত্বের ব্যর্থতা তুলে ধরতে আমরা ন্যায়সংগতভাবে নানামুখী আন্দোলন ও প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে পারি।
যদিও প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর বা আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। নির্বাচন ঘিরে দেশের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিশেষত বিএনপি ও এনসিপি মুখোমুখি হতে পারে, যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দল সুযোগের সন্ধানে রয়েছে বলে সরকারকে আরও বেশি তৎপর হতে হবে। মব নিয়ন্ত্রণ করা গেলে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়বে বৈ কমবে না।
ইফতেখারুল ইসলাম: সহসম্পাদক, সমকাল
Iftekarulbd@gmail.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর স থ ত ইসর য় ল সরক র র
এছাড়াও পড়ুন:
পূজাকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আইনসৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সকল ধর্মমত, সকল সম্প্রদায় তারা একত্রিত হয়েছে।
সকলেই সার্বিক সহয়তা করছে যাতে করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা উৎসব সুন্দর ভাবে পজলন করতে পারে। পূজাকে ঘিরে একটি গোষ্ঠি চাইবে পূজা উৎসব নষ্ট করে দেয়ার জন্য।
সে জন্য আমাদের তৎপরতা রয়েছে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তার পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশবাহিহনী সবাই কাজ করছে যাতে করে সুন্দর ভাবে পূজা উৎসব শেষ করতে পারি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ৫নং ঘাটে দূর্গা পূজার প্রতিমা বিসর্জনের স্থান পরিদর্শনকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
দূর্গা পূজা বিজয়া দশমী শেষে প্রতিমা বিসর্জনের সময় যেকোনো অপ্রীতিকর দূর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সুন্দর ভাবে প্রতিমা বিসর্জনের স্থান নিরাপদ রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, নারায়ণগঞ্জের ২২৩টি পূজা মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে বর্তমানে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে।
এসময় তিনি প্রতিটি মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে ও নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ সহযোগিতার নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, সকলে মিলে সব উৎসব উদযাপন করাই বাংলার ঐতিহ্য ও গৌরব।
এসময় জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।