বাংলাদেশকে বিনিয়োগের স্বর্গরাজ্য বানাতে চায় এনসিপি: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
Published: 10th, April 2025 GMT
বিনিয়োগ সম্মেলনে আসা দেশি–বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে এনসিপি কাজ করবে বলে জানিয়েছেন দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে আমরা বিনিয়োগের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করতে চাই।’ আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে বিনিয়োগ সম্মেলনে এনসিপির প্রতিনিধিদল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথাগুলো বলেন।
গত সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত রাজধানীতে বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। সেখানেই এনসিপির চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল যায়।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘বড় বড় দেশগুলো যারা বাংলাদেশকে ইনভেস্টমেন্ট হাব হিসেবে বেছে নিয়েছে, তারা আমাদের সাথে কথা বলেছে। বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে যে ভঙ্গুর করে দেওয়া হয়েছিল, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য তারা রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি চেয়েছে। আমরা এনসিপির পক্ষ থেকে সেই প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করেছি। সেই সঙ্গে বলেছি আগামীতে বাংলাদেশ বিনিয়োগের স্বর্গে পরিণত হবে।’
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশকে ৫০–এ উন্নীত করার কথা আমরা বলেছি। আমরা আরও বলেছি, আমাদের যে বার্ষিক এফডিআই ফ্লো এখন ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন, এটিকে আমরা ১৫ বিলিয়ন ডলারে রূপান্তরিত করব।’
বিনিয়োগকারীরা নবায়নযোগ্য শক্তি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল উল্লেখ করে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমরা আমাদের কনট্রিবিউশনকে ৩০ শতাংশে উন্নীত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছি। বেকারত্ব কমিয়ে আনার ব্যাপারে কথা বলেছি। কৃষিপ্রযুক্তি, নবায়নযোগ্য শক্তি, স্বাস্থ্যসেবা বিষয়গুলোতে আমরা জোর দিয়েছি। এ ছাড়া কীভাবে বাংলাদেশকে বৈশ্বিক ম্যানুফ্যাকচারিং হাবে রূপান্তরিত করা যায়, সে বিষয়ে কথা বলেছি। আমাদের বড় একটি শক্তি সুনীল অর্থনীতি, সে বিষয়েও কথা বলেছি।’
বিগত ১৫ বছরের অনিয়ম এবং নীতি জটিলতার কথা বিনিয়োগকারীরা সমনে এনেছে জানিয়ে নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছি এনসিপি সরকারে গেলে আমরা ওয়ান–স্টপ সল্যুশনে যাব। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন করে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতে তরুণ প্রজন্ম তাদের সহায়ক হবে।’
মাদ্রাসাছাত্রদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে এনসিপি কাজ করছে জানিয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমরা মধ্যপ্রাচ্যের বিনিয়োগকারীদের এ দেশের মাদ্রাসাগুলোর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়েছি। আরবি ভাষা জানা মাদ্রাসার ছাত্রদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে তাদের সাথে কথা বলেছি।’
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘গতকাল আমরা লক্ষ করেছি যখন সম্মেলন চলছিল, মানুষ উৎফুল্ল তখন কিছু রাজনৈতিক দলের নেতারা এটা নিয়ে উপহাস করছিল। আমরা তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, আমাদের সমনে একটি সম্ভাবনা এসেছে, সেটিকে কাজে না লাগালে বংলাদেশ আবারও পিছিয়ে যাবে।’
বিরোধী দলে গেলে এনসিপি হরতাল–অবরোধ ডেকে ব্যবসার পরিবেশ বিঘ্নিত করবে কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘সরকার এবং বিরোধী দল মিলেই রাষ্ট্র। আমরা বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করেছি রাজনৈতিক দল হিসেবে সব সময় ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ আমরা নিশ্চিত করব।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলম, যুগ্ম সদস্যসচিব সাগুফতা বুশরা মিশমা, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল্লাহ আল ফয়সাল প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন স র দ দ ন প টওয় র ন শ চ ত কর র জন ত ক এনস প র আম দ র ত কর ছ
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’
গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।
বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’
গণজমায়েতে র্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।