মানুষ বলছে, আপনারা আরও ৫ বছর থাকেন: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
Published: 10th, April 2025 GMT
স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের থেকে ভালো। রাস্তা থেকে মানুষ আমারে বলতেছিল– আপনারা আরও পাঁচ বছর থাকেন।’ সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আজ বৃহস্পতিবার তিনি দেখার হাওরে বোরো ধান কাটার উদ্বোধন করেন। এ সময় ধান কাটা উৎসবের জন্য বর্ণাঢ্য আনুষ্ঠানিকতা ছিল না; মঞ্চও ছিল না। তবে উপস্থিত কৃষকদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘খাদ্য বিভাগ কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনতে যাতে দুষ্টুমি করতে না পারে, সেদিকে সবাই খেয়াল রাখবেন। ময়েশ্চার (আর্দ্রতা) বলে কৃষককে বিদায় করা যাবে না।’
তিনি হাওরে ধান কাটা শেষ করতে সবার সহযোগিতা চেয়ে বলেন, ‘হারভেস্টার মালিকরা ধান কাটতে কৃষকদের কাছ থেকে বেশি টাকা চাইলে মেশিন জব্দ করা হবে।’
হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাঁধ দুর্বল হলে বা ফসল রক্ষা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরও শঙ্কা আছে।’
উপস্থিত কৃষকরা অভিযোগ করেন, বিশ্বম্ভরপুরের করচার হাওরের গজারিয়া রাবার ড্যাম ছিদ্র হয়ে গেছে। পানি ঢোকায় ফসল হুমকিতে আছে। এ কথা শুনে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীকে খোঁজেন তিনি। প্রকৌশলী অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত না থাকায় ক্ষুব্ধ হন উপদেষ্টা। এ সময় নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেনকে ফোন দিয়ে উপদেষ্টাকে বলতে শোনা যায়– ‘কোথায় বসে টাকার হিসাব করছেন আপনি? রাবার ড্যাম দিয়ে পানি ঢুকছে। এক সপ্তাহের মধ্যে ঠিক না হলে আপনাকে রিপেয়ার (মেরামত) করা হবে।’
এর আগে শান্তিগঞ্জ থানা পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের চুক্তি আছে। এর আওতায় শেখ হাসিনাকে আনার চেষ্টা করা হবে।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আজ দুপুরে প্রথমে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এয়ারপোর্ট থানা পরিদর্শনে যান। সেখানে লালগালিচা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কমিশনারকে লালগালিচা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বলতে শোনা যায়, ‘প্রটোকল করতে করতে তোমাদের সময় শেষ। মেইন কাম করতে পারতেছ না।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ হ ঙ গ র আলম চ ধ র
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।