বিশ্বের উৎপাদন হাব (কেন্দ্রবিন্দু) হিসেবে দেশকে গড়ে তুলতে চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। জাতীয় বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানিয়েছে দলটি। একই সঙ্গে বেকারত্ব কমিয়ে আনা, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়ানো এবং ঘুষ ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করার অঙ্গীকার করেছে। রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গতকাল বৃহস্পতিবার এনসিপির প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে এসব বিষয় তুলে ধরেন মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।

গত সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত এ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। সেখানে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে এনসিপির প্রতিনিধি দল। এনসিপি ছাড়া বিএনপি ও জামায়াতের প্রতিনিধি দল বৈঠক করেছে। 

সংবাদ সম্মেলনে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমাদের দেশ কৃষিনির্ভর। কীভাবে কৃষিকে প্রযুক্তিনির্ভরে রূপান্তর করতে পারি, কীভাবে এটিকে পুরো বিশ্বের একটি উৎপাদন হাব বানানো যায়, সে বিষয়ে আমরা বিনিয়োগকারীদের বলেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীনসহ বড় বড় দেশে যারা বিনিয়োগ করে, তারা আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে। আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছি। আমরা রাজনৈতিক অঙ্গীকার নিশ্চিত করেছি।’

তিনি জানান, বাংলাদেশ আগামীতে একটি বিনিয়োগ স্বর্গে রূপান্তরিত হবে। সেজন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন তরুণরা।

নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস ওয়ার্ক র‌্যাঙ্কিংয়ে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৬৮তম। নাগরিক পার্টি ক্ষমতায় গেলে এ অবস্থান শীর্ষ ৫০-এ নিয়ে যাব। আমাদের বার্ষিক এফডিআই ১৩০ কোটি থেকে ১৫০০ কোটি ডলারে নিয়ে যাব।’

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আরও বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা বলেছেন, গত ৫৩ বছরে তারা কোথায় কাজ করতে গিয়ে ঘুষ, নিয়ম জটিলতার সম্মুখীন হয়েছেন। আমরা আশ্বস্ত করেছি, এনসিপি সরকারে গেলে ওয়ান স্টপ সলিউশনে (এক টেবিলে সমাধান) যাব।’

এ ছাড়া এনসিপির পক্ষ থেকে হাইটেক, স্বাস্থ্যসেবা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সমুদ্র, গাড়ি ও পোশাকশিল্পে বৈচিত্র্যায়ন ঘটিয়ে বিনিয়োগ হাব তৈরি করা হবে।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমরা মধ্যপ্রাচ্যের বিনিয়োগকারীদের এ দেশের মাদ্রাসাগুলোর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। মাদ্রাসার ছাত্ররা আরবি জানে। তাদের কর্মসংস্থানের ব্যাপারে বলেছি।’

বিরোধী দলে গেলে এনসিপি হরতাল-অবরোধ ডাকবে কিনা এমন প্রশ্নে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘সরকার ও বিরোধী দল মিলে রাষ্ট্র। আমরা বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করেছি রাজনৈতিক দল হিসেবে সব সময় ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ আমরা নিশ্চিত করব। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের যে যাত্রা শুরু হয়েছে, আমরা এখানে আশাবাদী।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলম মাহির, যুগ্ম সদস্য সচিব সাগুফতা বুশরা মিশমা, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল্লাহ আল ফয়সাল প্রমুখ।


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এনস প ন স র দ দ ন প টওয় র এনস প র ত কর ছ

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের হামলায় ২০ ইসরায়েলি নিহত

ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চারদিন ধরে চলছে। এসব হামলায় উভয় দেশের মধ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইসরায়েলের জাতীয় পরিষেবা জানিয়েছে, আজ সোমবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত শুক্রবার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা  ২০ জনে পৌঁছুল। আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।

অন্যদিকে আল-জাজিরা বলছে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত ইরানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।

ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডমের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী। 

এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়া, তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।

রোববার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।

সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।

ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।

সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’

তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।

এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ