বিশ্বের উৎপাদন হাব হিসেবে দেশকে গড়ে তোলার ঘোষণা এনসিপির
Published: 11th, April 2025 GMT
বিশ্বের উৎপাদন হাব (কেন্দ্রবিন্দু) হিসেবে দেশকে গড়ে তুলতে চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। জাতীয় বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানিয়েছে দলটি। একই সঙ্গে বেকারত্ব কমিয়ে আনা, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়ানো এবং ঘুষ ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করার অঙ্গীকার করেছে। রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গতকাল বৃহস্পতিবার এনসিপির প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে এসব বিষয় তুলে ধরেন মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
গত সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত এ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। সেখানে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে এনসিপির প্রতিনিধি দল। এনসিপি ছাড়া বিএনপি ও জামায়াতের প্রতিনিধি দল বৈঠক করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমাদের দেশ কৃষিনির্ভর। কীভাবে কৃষিকে প্রযুক্তিনির্ভরে রূপান্তর করতে পারি, কীভাবে এটিকে পুরো বিশ্বের একটি উৎপাদন হাব বানানো যায়, সে বিষয়ে আমরা বিনিয়োগকারীদের বলেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীনসহ বড় বড় দেশে যারা বিনিয়োগ করে, তারা আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে। আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছি। আমরা রাজনৈতিক অঙ্গীকার নিশ্চিত করেছি।’
তিনি জানান, বাংলাদেশ আগামীতে একটি বিনিয়োগ স্বর্গে রূপান্তরিত হবে। সেজন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন তরুণরা।
নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস ওয়ার্ক র্যাঙ্কিংয়ে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৬৮তম। নাগরিক পার্টি ক্ষমতায় গেলে এ অবস্থান শীর্ষ ৫০-এ নিয়ে যাব। আমাদের বার্ষিক এফডিআই ১৩০ কোটি থেকে ১৫০০ কোটি ডলারে নিয়ে যাব।’
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আরও বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা বলেছেন, গত ৫৩ বছরে তারা কোথায় কাজ করতে গিয়ে ঘুষ, নিয়ম জটিলতার সম্মুখীন হয়েছেন। আমরা আশ্বস্ত করেছি, এনসিপি সরকারে গেলে ওয়ান স্টপ সলিউশনে (এক টেবিলে সমাধান) যাব।’
এ ছাড়া এনসিপির পক্ষ থেকে হাইটেক, স্বাস্থ্যসেবা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সমুদ্র, গাড়ি ও পোশাকশিল্পে বৈচিত্র্যায়ন ঘটিয়ে বিনিয়োগ হাব তৈরি করা হবে।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমরা মধ্যপ্রাচ্যের বিনিয়োগকারীদের এ দেশের মাদ্রাসাগুলোর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। মাদ্রাসার ছাত্ররা আরবি জানে। তাদের কর্মসংস্থানের ব্যাপারে বলেছি।’
বিরোধী দলে গেলে এনসিপি হরতাল-অবরোধ ডাকবে কিনা এমন প্রশ্নে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘সরকার ও বিরোধী দল মিলে রাষ্ট্র। আমরা বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করেছি রাজনৈতিক দল হিসেবে সব সময় ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ আমরা নিশ্চিত করব। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের যে যাত্রা শুরু হয়েছে, আমরা এখানে আশাবাদী।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলম মাহির, যুগ্ম সদস্য সচিব সাগুফতা বুশরা মিশমা, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল্লাহ আল ফয়সাল প্রমুখ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনস প ন স র দ দ ন প টওয় র এনস প র ত কর ছ
এছাড়াও পড়ুন:
অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক
নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।
ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’
সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।
প্রতিবাদ, বিক্ষোভসেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।
‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।
পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।
দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।
সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।
সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।
কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।