রাজশাহীতে মিস্ত্রি মজুর সবাই এখন অটোচালক
Published: 11th, April 2025 GMT
রাজশাহীর টালি, ঘড়ি ও চশমা মিস্ত্রি এবং দিনমজুররা পেশা পাল্টে অটোরিকশা চালক হয়েছেন। কারণ, আগের পেশায় বেতন কম, অনিশ্চয়তা এবং কাজ ছিল অনিয়মিত। এখন তাদের সেই সংকট কেটে গেছে। শহরে এত বেশি অটোরিকশা চলছে, যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। বেপরোয়া গতির কারণে ঘটছে দুর্ঘটনা। হচ্ছে শব্দদূষণ ও যানজট।
বেকারত্বের মুক্তি অটোরিকশায়
ডাসমারির মিজানের মোড়ের বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহিন ছিলেন টালি মিস্ত্রি। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন টালির কাজ হতো না। বেকার থাকতে হতো। তাই পেশা বদল করে অটোরিকশা চালাচ্ছি। এখন এক দিনও বেকার থাকতে হয় না। পরিবার নিয়ে ভালো আছি।’
নগরীর হাদির মোড়ের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আগে চশমার কাচের পাওয়ার মিস্ত্রি ছিলাম। মাসে ৬ হাজার টাকা বেতন ছিল। পরিবার বড় হওয়ায় ওই টাকায় সংসার চলত না। তাই পাঁচ বছর আগে অটোরিকশা চালানো শুরু করি। প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা আয় হয়।’
হাদির মোড়ের মোহাম্মদ রতন বলেন, ‘আগে বড় গাড়ি চালাতাম। সারা দেশ ঘুরতে হতো, টাকা পাওয়া যেত কম। ট্রিপ না থাকলে, বেকার বসে থাকতে হতো। এখন অটো চালিয়ে ভালো আয় করতে পারছি।’
সক্ষমতার চার গুণ অটোরিকশা
রাজশাহীতে অটোরিকশার সংখ্যা শহরের সক্ষমতার তুলনায় চার গুণ। এগুলোর বেশির ভাগের নেই রেজিস্ট্রেশন। সিটি করপোরেশন ১৫ হাজার ৬০০ অটোরিকশা ও ইজিবাইকের রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে। নতুন করে রেজিস্ট্রেশন দিচ্ছে না। তবে এলাকার প্রভাবশালীদের ধরে কেউ কেউ রেজিস্ট্রেশন পাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
হাদীর মোড়ের রতন আলী বলেন, তিনি ৯ বছর ধরে ব্যাটারিচালিত দুই আসনের অটোরিকশা চালান। কিন্তু তাঁর রেজিস্ট্রেশন নেই। গতবছর রেজিস্ট্রেশন পেতে এক পরিচিতজনকে ৩০ হাজার টাকা দিয়েও তা পাননি। তবে তিনি আশা ছাড়েননি। গত রোজায় ট্রাফিক পুলিশ আটক করে তাঁকে ২ হাজার ৬০০ টাকা জরিমানা করেছিল।
তিনি বলেন, ‘আমার পরিচিত সবুর নামে এক বড় ভাইকে ৫ আগস্টের আগে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছি লাইসেন্স করে দিতে। এখনও হয়নি।’
এদিকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার অটোরিকশা চলাচলের ফলে পরিচ্ছন্ন শহর যানজটে রূপ নিয়েছে। নগরীর সাহেববাজার, রেলগেট, লক্ষ্মীপুর, তালাইমারি, বিনোদপুর ও কাটাখালী এলাকায় সড়ক ও মহাসড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।
দুর্ঘটনার কারণ গতি
রতন আলী বলেন, ‘অটোরিকশা অনেকে ৫০ কিলোমিটার গতিতেও চালান। আমি ২০ কিলোমিটার গতির উপরে চালাই না, কারণ গতি বাড়ালে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, দুর্ঘটনা ঘটে।’
এ কথার সত্যতা পাওয়া গেল গত ৩ ফেব্রুয়ারির এক সড়ক দুর্ঘটনায়। ওইদিন ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যাচ্ছিল গ্রামীণ ট্রাভেলসের বাস। দামকুড়ার কসবায় দ্রুত গতিতে আসা ছয় আসনের একটি অটোরিকশা বাঁ পাশ থেকে হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডান পাশের গ্রামীণ ট্রাভেলসের সামনে ঢুকে যায়। বাসের ধাক্কায় অটোরিকশায় থাকা দুই যাত্রী ঘটনাস্থলে মারা যান। গুরুতর আহত হন আরও পাঁচজন। রাজশাহী শহর ও এর আশপাশে প্রায়ই ঘটছে এমন দুর্ঘটনা।
আলুপট্টির ভাদু শেখ (৬০) গত বছর অটোরিকশায় চড়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হন। এতে তাঁর একটি পা ভেঙে যায়। কানের একাংশ কেটে আলাদা হয়ে যায়। তিনি বলেন, অটোরিকশায় শহর থেকে কাঁকনহাট যাচ্ছিলাম। সড়কে দ্রুত গতিতে চলছিল। হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে খাদে পড়ে যায়। আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা সভাপতি আহমেদ শফিউদ্দিন বলেন, ‘রাজশাহী অঞ্চলে কর্মসংস্থান কম। এ কারণে বেকারত্ব ঘোচাতে সবাই অটোরিকশা চালান।’
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আবু সালেহ মো.
নগর পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি-ট্রাফিক) নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার এখতিয়ার সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)। কিন্তু বিআরটিএর তালিকায় এসব অটোরিকশা যানবাহন নয়। সিটি করপোরেশন ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে পারে না। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা দিন-রাত চেষ্টা করছেন এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে। কিন্তু তাদের ঠেকানো যাচ্ছে না।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি