‘বলতে পারেন অনেকটাই। আশা করি, পরেরবার একটা ভালো ক্যাচও নেব।’
বল হাতে নিয়েছেন ৩ উইকেট, ব্যাট হাতে ১৮ বলে ৪৪ রান। চেন্নাই সুপার কিংসকে ১০৩ রানে আটকে দিয়ে কলকাতা নাইট রাইডার্স যে ৮ উইকেটের বড় জয় তুলেছে, তাতে মূল অবদান সুনীল নারাইনেরই। খেলা শেষে ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে তুলে দেওয়ার তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, নিখুঁত একটা ম্যাচ খেললেন, তাই না?
তখনই ‘ভালো ক্যাচের ঘাটতি’র কথা নারাইনের মুখে। বিজয় শঙ্করের ক্যাচ মিস করেছিলেন, ইঙ্গিত করেছিলেন সেদিকেই। ক্যাচ মিসের ঘটনাটি বাদ দিলে চিপকে চেন্নাইয়ের বিব্রতকর হারের মূল অনুঘটকই নারাইন। তবে মহেন্দ্র সিং ধোনির দল একটু সান্ত্বনা নিতেই পারে। এই নারাইন শুধু চেন্নাইকে নয়, বছরের পর বছর বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দিচ্ছেন সব দলকেই। যার বড় প্রমাণ দুটি নতুন রেকর্ডে।
চেন্নাইয়ের বিপক্ষে নারাইন ৩ উইকেট নিয়েছেন ৪ ওভারে ১৩ রান দিয়ে। আইপিএলে ম্যাচ ৪ ওভার বোলিং করে ১৫ রানের কম দিলেন এ নিয়ে ১৩ বার। আইপিএলের দেড় যুগের ইতিহাসে এটি কিপটে বোলিংয়ে নতুন রেকর্ড। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২ বার এমন বোলিংয়ের কীর্তি আছে স্পিনার রশিদ খানের।
রশিদ আফগানিস্তানের খেলোয়াড়, আইপিএল অভিষেকও নারাইনের বেশ পরে (২০১৭ সালে, নারাইনের ২০১২)। তবে ৩৬ বছর বয়সী এই ক্যারিবীয় ক্রিকেটার একই ম্যাচে পেছনে ফেলেছেন ভারতের রবিচন্দ্রন অশ্বিনকেও।
আইপিএলের প্রথম আসর থেকে খেলে চলা অশ্বিন এখন পর্যন্ত ম্যাচে ৪ ওভার বল করে একটিও বাউন্ডারি হজম করেননি ১৫ বার। যে রেকর্ডে ভাগীদার ছিলেন নারাইন। গতকাল চিপকে অশ্বিনের দলের কোনো ব্যাটসম্যান নারাইনকে একটি বাউন্ডারিও মারতে না পারায় রেকর্ডটি এখন শুধুই তাঁর—আইপিএল ১৬ বার বাউন্ডারিশূন্য ৪ ওভারের বোলিং।
নতুন দুটি রেকর্ড গড়া নারাইন এখন স্বীকৃত টি–টোয়েন্টিতে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার পথে। টি–টোয়েন্টিতে একটি দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেটের রেকর্ডটা এখন সামিত প্যাটেলের, যিনি নটিংহামশায়ারের হয়ে নিয়েছেন ২০৮ উইকেট। ১৩ বছর ধরে কলকাতা নাইট রাইডার্সে খেলা নারাইনের উইকেট ২০৩টি।
দরকার মাত্র ৬ উইকেট। নারাইন যা করে ফেলতে পারেন এ মৌসুমেই।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র ইন র র কর ড উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
বিগ-বির মাধ্যমে জাপানের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী বাংলাদেশ
এক দশক আগে বঙ্গোপসাগর ঘিরে বাংলাদেশের জন্য বিগ-বি নামে পরিচিত বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট গ্রহণ করেছিল জাপান। বঙ্গোপসাগরীয় শিল্প প্রবৃদ্ধির ওই উদ্যোগে রয়েছে মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর, বিদ্যুৎ প্রকল্প আর আধুনিক পরিবহনব্যবস্থার বিকাশ। মে মাসের শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের জাপান সফরে বিগ–বির মাধ্যমে সহযোগিতা জোরদারের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। তাঁর জাপান সফরের আগে টোকিওতে ১৫ মে অনুষ্ঠেয় দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকেও বিষয়টিতে প্রাধান্য দেবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের ষষ্ঠ বৈঠকের প্রস্তুতি হিসেবে বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে জাপানের আলোচনায় কোন কোন বিষয়গুলোতে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার থাকবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
১৫ মে টোকিওতে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে জসীম উদ্দিন বাংলাদেশের এবং জাপানের জ্যেষ্ঠ উপমন্ত্রী আকাহোরি তাকেশি তাঁর দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে কোন কোন বিষয়গুলো ১৫ মের আলোচনায় প্রাধান্য পেতে পাবে, তা নিয়ে মতামত নেওয়া হয়। পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন সফরসহ সচিব পর্যায়ের সফর নিয়ে আলোচনা হয়।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বিগ–বিতে সহযোগিতা জোরদারের পাশাপাশি ব্যবসা, বিনিয়োগ, নবায়নযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ খাতভিত্তিক সহযোগিতা জোরদারের ওপর অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার নানা বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন সফর নিয়ে আলোচনা হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, টোকিওতে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকটি দুই ভাগে বিভক্ত থাকবে। প্রথম ভাগে থাকবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা বিষয়। আর দ্বিতীয় ভাগে থাকবে আঞ্চলিক ভূরাজনীতি ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি।
আঞ্চলিক বিষয়াদিতে জাপানের বিগ–বি নিয়ে আলোচনা হবে। এ সময় ঢাকার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের বাস্তবতা তুলে ধরা হবে। সেই সঙ্গে এ প্রকল্প সামনে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিও বলা হবে। পরে ভারত যদি এর সঙ্গে যুক্ত হতে চায়, তবে তার ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হবে।
বিগ–বির সঙ্গে ২০২৩ সালে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলকে যুক্ত করে জাপান। কিন্তু ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে চরম টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক। এমন এক প্রেক্ষাপটে বিগ–বিকে বিশেষ করে সংযুক্তিকে বাংলাদেশের পরিমণ্ডলে নেওয়ার পরিকল্পনায় আপাতত একটা ধাক্কা এসেছে। এ নিয়ে জাপান নানাভাবে নিজেদের অস্বস্তির বিষয়টি বাংলাদেশকে জানিয়েছে। বিগ–বি জাপানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের অগ্রাধিকার প্রস্তাব হওয়ায় এটিতে বিশেষ গুরুত্ব আছে টোকিওর। তাই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে আগ্রহী জাপান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক এবং প্রধান উপদেষ্টার টোকিও সফরে জাপান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিবিড় করার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশের কাছ থেকে সমরাস্ত্র বিক্রির ওপর কয়েক বছর ধরে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে জাপান।
বাংলাদেশকে ২০২৩ সালে জাপানের সরকারি নিরাপত্তা সহায়তায় (ওএসএ) যুক্ত করা হয়েছে। মূলত জাপান নিজের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে এই কাঠামো তৈরি করেছে। ওএসএর মাধ্যমে জাপান বন্ধুরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও গভীর করার এবং ওই দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা দিয়ে থাকে। ওএসএর মাধ্যমে জাপান একটি দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে ঋণের পরিবর্তে অনুদান দিয়ে থাকে।