৮ এপ্রিল অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার আট মাস পার করল। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছর ৮ আগস্ট যখন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়, তখন সর্বত্র বিশৃঙ্খল অবস্থা চলছিল। সেই অবস্থা থেকে গত আট মাসে সরকার অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মোটামুটি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পেরেছে।
সাধারণ মানুষের উদ্বেগ ছিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে; আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষুব্ধ জনতার সহিংস প্রতিক্রিয়া আমরা দেখি। একের পর এক মব ভায়োলেন্সের ঘটনাও ঘটেছে, যার রেশ এখনো আছে। দ্বিতীয় উদ্বেগ ছিল নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি, আর্থিক খাতের বিশৃঙ্খলা ও জনপ্রশাসনে অস্থিরতা। কয়েক মাস ধরে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার পর গত রোজায় কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে এনেছে সরকার। এটা সাফল্যই বলতে হবে। অন্যদিকে জনপ্রশাসনে শুরুতে যে অস্থিরতা চলছিল, তা–ও কমে এসেছে।
গত আট আসে নানা কারণে বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাজার হাজার কর্মী চাকরি হারিয়েছেন। অর্থনীতিবিদদের মতে, প্রতিবছর কর্মবাজারে ২৪ থেকে ২৫ লাখ তরুণ–তরুণী প্রবেশ করেন। কিন্তু তাঁদের কাজের সংস্থান নেই। দেশের বিভিন্ন স্থানে যে ছিনতাই, ডাকাতি ও হানাহানির ঘটনা ঘটে চলেছে, তার একটি বড় কারণ বেকারত্ব।
সম্প্রতি সরকার যে বিনিয়োগ সম্মেলনটি করেছে, সেটি কিছুটা হলেও তরুণদের মধ্যে আশা জাগাতে পারে। যদিও তা সময়সাপেক্ষ। বৃহস্পতিবার একটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) এক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে আলাপ হলো। তিনি জানালেন, ইউএসএআইডির প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কমপক্ষে এক লাখ কর্মী চাকরি হারিয়েছেন।
নানা রকম প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সরকারকে যে দুটি খাত ভালো অবস্থানে রেখেছে, সেটা হলো রপ্তানি ও প্রবাসী আয়। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) রপ্তানি করেছে ৩০.
এই মুহূর্তে সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপ ও ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর সাময়িক সুবিধা আমরা পেতে পারি। কিন্তু স্থায়ী সমাধানের কথাই ভাবতে হবে আমাদের। ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার করায় আমাদের রপ্তানি ব্যয় ও সময় দুটোই বাড়বে। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন। কিন্তু সেটা এখনই সম্ভব নয়। আমাদের সক্ষমতা ছিল না বলেই ভারতীয় বন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানি করা হতো।
ডেইলি স্টার–এর প্রতিবেদন থেকে জানা গেল, গত ১৫ মাসে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতীয় রুট ব্যবহার করে ৩৬টি দেশে ৪৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। মোট রপ্তানির পরিমাণ ৩৪ হাজার ৯০০ টনের বেশি। ২০২০ সালের ২৯ জুন থেকে বাংলাদেশ এই সুবিধা পেয়ে আসছিল।
সাত–আট মাস ধরে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে সরকার এত দৌড়ঝাঁপ, এত কমিশন গঠন, এত আলোচনার পরও এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসতে না পারা স্বস্তির খবর নয়। সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে বল ছুড়ে দিয়েছে। আবার রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দুই পক্ষের এই দ্বৈরথ কিংবা ‘অল্প সংস্কার’ না ‘বেশি সংস্কারের’ দোলাচলে পড়ে নির্বাচন নিয়েই অনিশ্চয়তা তৈরি হোক, তা কেউ চায় না।ভারত এই সুবিধা বাতিলের জন্য তাদের পণ্যজটের দোহাই দিলেও মূল কারণ ‘রাজনৈতিক’। রাজনৈতিক কারণেই ভিসা সীমিত করা হয়েছে। রাজনৈতিক কারণেই দ্বিপক্ষীয় সমস্যাগুলো ঝুলে আছে। অনেকের ধারণা ছিল, ব্যাংককে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে বরফ গলবে। কিন্তু সেটি গলেনি।
আমাদের তৈরি পোশাকশিল্পের কাঁচামালের একটি বড় অংশ আমদানি হয় ভারত থেকে। ভবিষ্যতে নয়াদিল্লি যদি সে ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ আরোপ করে, তাহলে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত আরও ঝুঁকিতে পড়ে যেতে পারে। তাই সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ধীরে-সুস্থে, মাথা ঠান্ডা রেখে।
আট মাস পরও আইনশৃঙ্খলার উন্নতি না হওয়া সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ মনে করি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যেদিন দাবি করলেন আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হয়েছে, তার পরদিনই সাভারে দিনদুপুরে চলন্ত বাসে ছিনতাই, স্বর্ণালংকার লুটের ঘটনা ঘটল। বৃহস্পতিবার তিনি সুনামগঞ্জে বলেছিলেন, ‘সাধারণ মানুষ বলতাছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো। ওই রাস্তা থেকে হুনি, মানুষ বলতাছে, আপনারা আরও পাঁচ বছর থাকেন।’
এর আগেও নানা মহল থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের আরও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা দরকার বলে প্রচার চালাচ্ছেন। এনসিপির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেছেন, তিনি চান মুহাম্মদ ইউনূস পাঁচ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় থাকুন। কিন্তু সেটি কীভাবে সম্ভব? তিনি তো এসেছেন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে। এ ধরনের কথাবার্তা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত হলেও একজন উপদেষ্টার মুখে এই প্রথম শুনলাম। রাস্তার লোকজন সরকার সম্পর্কে আরও অনেক কিছু বলেন। সেটাও যেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মনোযোগ দিয়ে শোনেন।
সরকারের নানামুখী উদ্যোগ সত্ত্বেও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ব্যাংককে মিয়ানমার সরকারের প্রতিনিধি ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা দেশে ফিরে যাওয়ার যোগ্য বলে যে মন্তব্য করেছেন, তাতে অনেকে আশ্বস্ত হয়েছিলেন। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের বক্তব্য ছিল মূলত প্রতারণামূলক। মিয়ানমার প্রতিনিধি বলেননি যে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে তঁারা ফেরত নেবেন। কূটনীতিতে ‘ফেরত নেওয়া’ আর ‘ফেরতযোগ্য’ শব্দদ্বয়ের মধ্যে বিরাট ফারাক। এর আগেও মিয়ানমার কথা দিয়ে কথা রাখেনি। বরং গত আট মাসে আরও লাখ খানেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে বলে নানা সূত্রে খবর পাওয়া গেছে।
মূল কথা হলো যে রাখাইন প্রদেশ থেকে তারা বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে এসেছে, সেখানে মিয়ানমার সরকারের কর্তৃত্ব নেই। বেশির ভাগ এলাকাই সেখানকার বিদ্রোহী আরাকান আর্মির দখলে। রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরতে হলে এখন চার পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হতে হবে—মিয়ানমার সরকার, আরাকান আর্মি, রোহিঙ্গা শরণার্থী ও বাংলাদেশ সরকার।
আগের চেয়ে সরকারকে অনেক আত্মবিশ্বাসী মনে হয়। কিন্তু এই আত্মবিশ্বাসের যৌক্তিক কারণ নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন। সমালোচকেরা মনে করেন, রাজনৈতিক সরকারের মতো অন্তর্বর্তী সরকারও অনেক কিছু ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করছে। প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরেও সহায়তার বড় কোনো অঙ্গীকার পাওয়া যায়নি। যদিও বলা হচ্ছে চীন সফর অভূতপূর্ব সফল। বিমসটেক সম্মেলনে বাংলাদেশ জোটের পরবর্তী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে। কিন্তু ১৯৯৮ সালে যাত্রা শুরু করা এই জোট তো কার্যকরই হলো না। তবু আমরা চেয়ারম্যান হয়েছি, এটুকু সান্ত্বনা।
সাত–আট মাস ধরে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে সরকার এত দৌড়ঝাঁপ, এত কমিশন গঠন, এত আলোচনার পরও এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসতে না পারা স্বস্তির খবর নয়। সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে বল ছুড়ে দিয়েছে। আবার রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দুই পক্ষের এই দ্বৈরথ কিংবা ‘অল্প সংস্কার’ না ‘বেশি সংস্কারের’ দোলাচলে পড়ে নির্বাচন নিয়েই অনিশ্চয়তা তৈরি হোক, তা কেউ চায় না।
সোহরাব হাসান প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও কবি
[email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত আট ম স সরক র র উপদ ষ ট ন র পর আম দ র ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।
এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।
বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশএমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।
এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।
কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেইএমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।
এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।
সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।
গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতাঅক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।
সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।