বন্দরে সেই অহিদের বাড়িতে আমন্ত্রিত বিএনপির শীর্ষ নেতারা, ক্ষোভ
Published: 12th, April 2025 GMT
বন্দরের মদনপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রকাশ্যে শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারী যুবলীগ নেতা অহিদুজ্জামান অহিদের মালিকানাধীন নবনির্মিত বহুতল ভবন উদ্বোধন করতে আমন্ত্রিত অতিথি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ তিন নেতা।
ওসমান পরিবারের সহচর ও ছাত্র-জনতা হত্যা সহ একাধিক মামলার আসামি অহিদের বাড়িতে নারায়ণগঞ্জের বিএনপির শীর্ষ তিন নেতার আগমনের এ খবরটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
আমন্ত্রিত অতিথিরা হলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড, সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ।
মাজহারুল ইসলাম হিরণ অর্থের বিনিময়ে অহিদকে পূর্নবাসনে মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিযোগ। আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক প্রভাবে মাদক ব্যবসা , দখল, চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণসহ অবৈধ পন্থায় অর্জিত অর্থে অহিদের মালিকানাধীন স্পেশালাইজড হসপিটালের শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপি শীর্ষ নেতারা আমন্ত্রিত অতিথি হচ্ছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন মদনপুর ইউনিয়ন বিএনপির নেতৃবৃন্দ সহ তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
উত্তরাঞ্চলের শীর্ষ সন্ত্রাসী, যুবলীগ নেতা অহিদের অবৈধ টাকায় মদনপুর ফুলহর এলাকায় গড়ে তোলা বহুতল বভনেই হাসপাতালটি উদ্বোধন করা হবে আগামী ১৪ এপ্রিল আগামীকাল সোমবার বিকালে।
উদ্বোধনী এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে আয়োজিত আমন্ত্রণ পত্রে আমন্ত্রিত অতিথিরা হলেন, উদ্বোধী হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজমল খানের সভাপতি, প্রধান অতিথি, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। উদ্বোধক, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড.
বিশেষ অতিথি, সোনারগাঁও উপজেলার বিএনপির সভাপতি আজাহারুল ইসলাম মান্নান, সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন ও কাঁচপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সেলিম হক রুমী, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ, শিল্পপতি আনোয়ার হোসেন।
স্থানীয়রা জানান, বিগত আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় ক্ষমতাবলে অহিদুজ্জামান অহিদ মদনপুর এলাকায় গড়ে তোলে সন্ত্রাসী বাহিনী। অহিদের নেতৃত্বে এ বাহিনী নিয়ন্ত্রণে ছিলো মদনপুর এলাকা সহ উত্তরাঞ্চলের মদক, চাঁদাবাজি, দখল, ছিনতাই সহ নানা অপকর্ম।
এছাড়াও ক্ষমতার দাপটে অহিদ একই এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী আমির হোসেনের পৈত্রিক জমি দখল করে অবৈধ ইটভাটা গড়ে তুলেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে প্রকাশ্য অস্ত্র নিয়ে হামলার ভিডিও ফেসবুক জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
৫ আগস্ট হাসিনা দেশ ছাড়ার পর অহিদ পালিয়ে যায়। তার পর অদৃশ্য ইশারায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র হত্যা মামলার আসামি হয়েও বহাল তবিয়তে অহিদ।
মদনপুর ইউনিয়ন বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অহিদ আগামীর পথ চলা বিএনপির ছায়াতলে। উপজেলা বিএনপির সভাপতি হিরণের নিয়ন্ত্রণে পূর্নবাসনের পায়তারা করছে আসছে। আওয়ামী লীগের আমলে বিএনপি কর্মীদের দাস বানিয়ে ব্যবহার করতেন।
তার নিয়ন্ত্রণে না থাকলেই যে কাউকে ইয়াবা সহ পুলিশে সোপর্দ করতো। অদৃশ্য ইশারায় অহিদের বহুতল বভন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন জেলার শীর্ষ বিএনপি নেতারা। তাদের উপস্থিতি, আগমন নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ দেখা দিয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ব এনপ ন র য়ণগঞ জ হ র ল ইসল ম ন র য়ণগঞ জ র ব এনপ র কর ম দ র ন ত কর ম মদনপ র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি খাল দখল করে চাঁদাবাজি!
সিদ্ধিরগঞ্জের হীরার্ঝিল আবাসিক এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) খাল দখল করে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে। এর ফলে ডিএনডি খালটি ফের সংকুচিত হতে শুরু করেছে। পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
এদিকে এই এলাকাটি শিমরাইল পাম্প স্টেশনের নিকটবর্তী এলাকা হওয়ায় দোকানগুলোর কারণে ঠিকমতোন পানি সরবরাহ হতে পারছে না। তবে প্রশাসনের ভাষ্য, খুব শিগগিরই এখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে নাসিক ১নং ওয়ার্ডের হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বালু খালপাড় দখল করে হরেক রকমের ছোট-বড় প্রায় ২৫টি দোকান বসানো হয়েছে। হাবিবুল্লাহ হবুলের মালিকানাধীন হাবিবুল্লাহ টাওয়ার থেকে শুরু করে মোক্তার হোসেন সরকারের মালিকানাধীন বিএম ভবন, সিদ্দিকুর রহমানের মালিকানাধীন মমতাজ ভিলা, নূর মোহাম্মদ টাওয়ার, নুরুল হুদা’র বাড়ির সামনে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
এর বিনিময়ে প্রতি দোকান থেকে টাকা তুলছেন স্ব স্ব বাড়ির মালিকরা। চাঁদা তোলার বিষয়টি কয়েকজন বাড়িওয়ালা অকপটে স্বীকারও করেছেন।
এদিকে, দোকানগুলোর কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নির্মিত ওয়াকওয়ে দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে পথচারীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। পাশাপাশি হীরাঝিল এলাকাবাসীকেও ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, হীরাঝিল আবাসিক এলাকা একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। যানবাহন ও মানুষের চাপ বেশি থাকায় এই এলাকায় সবসময় যানজট লেগেই থাকে। চলাচলের সুবিধার্তে এলাকাবাসী ডিএনডি খালের পাড় দিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে যেতেন। কিন্তু কয়েকজন বাড়িওয়ালা এহেন কর্মকান্ডের কারণে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।
এসব দোকানের কারণে খালের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পানি নিষ্কাশন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং চাঁদাবাজি প্রশাসন বন্ধ করতে না পারলে আগামীতে ফের বন্যা হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত প্রদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘কাবাব বাড়ি’ ভবনের মালিক মো. রফিক বলেন, আমার বাড়ির সামনে ডিএনডি খাল দখল করে আমি কোনো দোকান বসাই নি। আমি নিজেও চাই এখানে কোনো দোকান না বসুক। কিন্তু আমি যতটুকু শুনেছি টিএইচ তোফা নামের এক ব্যক্তি এই দোকানগুলো বসিয়েছেন। আমি অনেক চেষ্টা করেছে দোকানগুলো সরিয়ে দেওয়ার। আর এখানে দোকান বসিয়ে টাকা তোলার প্রশ্নই উঠে না।
একই অভিযোগ স্বীকার করে মমতাজ ভিলার মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অন্যসবাই দোকান বসিয়েছে। আমি তা দেখাদেখি ২টি দোকান বসিয়েছি। এটা আমার অপরাধ হয়েছে তা আমি নিজেও বুঝি। আমি মূলত সবার দেখাদেখি দোকান বসিয়েছি।
নুরুল হুদা নামের আরেক বাড়িওয়ালা বলেন, আমি দোকান বসিয়েছি। কিন্তু ওইখান থেকে কোনো অর্থ আদায় করি না। চাইলে এ বিষয়ে তদন্ত করা হতে পারে। আর এখানে দীর্ঘদিন ধরেই দোকান ছিল।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনূর আলম বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুভ আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। তবে অভিযোগ যেহেতু পেয়েছি তাহলে অবশ্যই ঘটনাস্থলে লোক পাঠানো হবে। ডিএনডি খালপাড় থেকে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রথমে আমরা একাধিকবার তাদের নোটিশ পাঠাবো।
যদি তারা কথা না শোনেন তাহলে আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। খাল দখলের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন খাল পরিষ্কার করা শুরু করেছি। ডিএনডি খালসহ যেকোনো খাল এভাবে দখল হয়ে থাকলে দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি শিগগিরই এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ৮ ডিসেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে ডিএনডি প্রকল্প হাতে নেয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শুরুতে প্রকল্পের বাজেট ৫৫৮ কোটি টাকা ধরা হলেও তা বাস্তবায়নে সবমোট ১৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়।
২০২৫ সালের জুন মাসে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর প্রকল্প বাস্তবায়ন করাকালে তখন খালটি দখল না হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর পরই হীরাঝিল এলাকার কয়েকজন বাড়িওয়ালা ডিএনডি খাল দখল করে দোকান বসানো শুরু করে।