আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা হতাশাজনক
Published: 15th, April 2025 GMT
সাভারে চলন্ত বাসে যাত্রীদের স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে আবার। আবারও আমাদের সামনে দেশের গণপরিবহনব্যবস্থার নিরাপত্তাঘাটতির বাস্তবতা উঠে এল। ১১ এপ্রিল দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ব্যাংক টাউন ব্রিজের ওপর সাভার পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসে এবং সোয়া ১২টার দিকে সিঅ্যান্ডবি এলাকায় রাজধানী পরিবহনের বাসে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। বাসে যাত্রীবেশে থাকা ছিনতাইকারীরা চালককে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তিন নারী যাত্রীর স্বর্ণালংকার লুট করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। এর আগে গত ২ মার্চ দুপুরে দিকে সাভারের ব্যাংক টাউন এলাকায় রাজধানী পরিবহনের একটি চলন্ত বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এরপর ৪ এপ্রিল একই এলাকায় ইতিহাস পরিবহনের আরেকটি চলন্ত বাসে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।
এই ধারাবাহিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্পষ্ট যে সাভার ও আশপাশের এলাকায় চলন্ত বাসে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাত্রীবেশে ছিনতাইকারীরা বাসে উঠে অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের জিম্মি করে মূল্যবান সামগ্রী লুট করছে। এতে যাত্রীদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে এবং গণপরিবহনে যাতায়াতের প্রতি মানুষের আস্থা কমছে। সাভারে সংঘটিত ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলোতে দেখা গেছে, ছিনতাইকারীরা বিশেষভাবে নারী যাত্রীদের লক্ষ্যবস্তু করেছে। তারা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিয়েছে, যা নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এ ধরনের ঘটনার পরপরই পুলিশ তদন্তের আশ্বাস দিলেও, বাস্তবে অপরাধীদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির খুব কমই দেখা যায়। এতে অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাসে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকা জরুরি। এ ছাড়া বাসচালক ও সহকারীদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। কারণ, অনেক সময় ছিনতাইকারীদের সঙ্গে তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
সাভার ও আশপাশের এলাকায় চলন্ত বাসে ছিনতাই ও ডাকাতি রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। বাসে নিরাপত্তা ক্যামেরা স্থাপন, নিয়মিত চেকপোস্ট পরিচালনা এবং সন্দেহভাজন যাত্রীদের তল্লাশি করা হোক। এ ছাড়া বাসচালক ও সহকারীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও মনিটরিং নিশ্চিত করা হোক। এ ধরনের ঘটনা রোধে সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বাসমালিকদের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। সাভারে আমরা আর কোনো বাস ডাকাতির ঘটনা দেখতে চাই না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ড ক ত র ঘটন চলন ত ব স পর বহন র এল ক য়
এছাড়াও পড়ুন:
‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’
স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, “জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম প্রধান অংশীদার ও পরীক্ষিত বন্ধু। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)-এর মাধ্যমে দেশটি বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে আসছে। আগামী দিনে বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে।”
বুধবার (৩০ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর অফিসকক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত Saida Shinichi-এর সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে কৃষি খাতে সহযোগিতা বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা, ২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামাতে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’তে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, কৃষি বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশ সংস্কার, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যু সহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের শুরুতে রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “জাপান বাংলাদেশের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আগামী দিনগুলোতে এ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।”
উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামা'তে ‘আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’ অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক এ এক্সপো'তে বাংলাদেশকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ।”
উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। আর জাপান কৃষি খাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারী দেশ। তাই জাপান বাংলাদেশের কৃষি খাতে বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি খাতে সহযোগিতা করতে পারে।”
তিনি বলেন, “জাপান বাংলাদেশের কৃষি পণ্য সংরক্ষণে আধুনিক হিমাগার স্থাপন ও কুলিং ভ্যান সরবরাহ করে সহযোগিতা করতে পারে। তাছাড়া জাপান আমাদেরকে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সহায়তা করতে পারে।”
তিনি এসময় রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি তৈরির জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “কৃষি বিষয়ক দু'দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সর্বশেষ সভা ২০২৪ সালের মে মাসে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দ্রুত এ সংক্রান্ত পরবর্তী সভা আয়োজন করা দরকার।”
উপদেষ্টা জানান, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পরবর্তী সভা এ বছরের অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ সভা আয়োজনের বিষয়ে বাংলাদেশ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূতের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমানে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। তবে এটির আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে এবং আমরা এ ব্যাপারে চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোনো সুযোগ নেই, বরং দিন দিন এটির উন্নতি ঘটবে বলে আমি আশা করছি।”
পুলিশের সামর্থ্য ও গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতির তুলনায় বর্তমানে পুলিশের সামর্থ্য, মনোবল ও বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বেশি বেড়েছে।”
তিনি এসময় আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জাপানের সহায়তা কামনা করেন। তাছাড়া তিনি নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডকে পেট্রোল ভেসেল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সহযোগিতা এবং অধিক সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে জাপানে উন্নত প্রশিক্ষণে প্রেরণের জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন।
রাষ্ট্রদূত জানান, আগামী ইন্টারপোল নির্বাচনে নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে জাপানের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রদান করা হবে। উপদেষ্টা এ পদে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাপানকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস প্রদান করেন।
বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাপান দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এস