ব্যবসা শুরু করতে ব্যর্থ এসকিউ ব্রোকারের বিরুদ্ধে তদন্তে কমিটি
Published: 15th, April 2025 GMT
পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনাবেচা করার জন্য অনেক দিন আগেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছ থেকে ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট (ট্রেক বা টিআরইসি) নিয়েছে এসকিউ ব্রোকারেজ হাউজ লিমিটেড (ডিএসই ট্রেক নম্বর-৩০৮)। তবে প্রতিষ্ঠানটি ট্রেক সার্টিফিকেট নিলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের ব্যবসা শুরু করতে পারেনি।
বিএসইসির আইন অনুযায়ী, ট্রেক সার্টিফিকেট পাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে ব্যবসা শুরু করার বিধান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বিএসইসির এ আইন পরিপালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই প্রতিষ্ঠানটির এ ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানে কিছু শর্ত সাপেক্ষে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। গঠিত তদন্ত কমিটিকে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিএসইসিতে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, গঠিত তদন্ত কমিটি ব্রোকারেজ হাউজটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্টক-ডিলার এবং স্টক-ব্রোকার হিসাবে কেন ব্যবসা শুরু করতে পারেনি সেসব কারণ খতিয়ে দেখবে। এছাড়া ব্রোকারেজ হাউজটির ব্যবসা শুরু করতে ব্যর্থ হওয়ার প্রকৃত কারণগুলো চিহ্নিত করা হবে।
আরো পড়ুন:
সূচকের পতন, কমেছে শেয়ারদর
ব্যাংকে পড়ে থাকবে না অলস টাকা, সংশোধন হচ্ছে লভ্যাংশ আইন
সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি আদেশ বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন থেকে জারি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বিএসইসির জারি করা আদেশ এসকিউ ব্রোকারেজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রেরণ করা হয়েছে।
গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান, সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান এবং শহীদুল ইসলাম।
তথ্য অনুযায়ী, বিগত সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি থাকা ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
বিএসইসির তদন্তের আদেশ
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মনে যে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে এসকিউ ব্রোকারেজ হাউজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে স্টক-ডিলার এবং স্টক-ব্রোকার রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট ইস্যু করার তারিখ থেকে ছয় মাসের মধ্যে ব্যবসা শুরু করতে ব্যর্থ হওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট) বিধিমালা, ২০২০ এর বিধি ৭(১) অনুসারে তদন্ত করা প্রয়োজন।
তাই সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ২১ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩-এর ধারা ১৭(ক) এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন উল্লিখিত বিষয় তদন্ত করার জন্য তিনজন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হলো। তদন্ত কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন এবং প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেবেন।
তদন্ত কমিটি যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে
এসকিউ ব্রোকারেজ হাউজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্টক-ডিলার এবং স্টক-ব্রোকার হিসাবে ব্যবসা শুরু করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য যে কারণ বা তথ্যগুলো দিয়েছে তা যাচাই করা।
ব্রোকারেজ হাউজটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্টক-ডিলার এবং স্টক-ব্রোকার হিসাবে ব্যবসা শুরু করতে ব্যর্থ হওয়ার প্রকৃত কারণগুলো চিহ্নিত করা।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অন্য কোনো প্রাসঙ্গিক সমস্যা থাকেলে সেটাও চিহ্নিত করা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, “ব্রোকারেজ হাউজগুলো কার্যক্রমে কোনো অসঙ্গতি রয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত কমিটি তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে কমিশনের কাছে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে। তদন্ত প্রতিবেদনে কোন অসঙ্গতি পাওয়া গেলে সে অনুযায়ী কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।”
ঢাকা/এনটি/এসবি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স টক ব র ক র ব এসইস র কর মকর ত তদন ত ক র ব যবস ন ত কর যবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নেবে বিএসইসি
শেয়ার সূচকের নিয়মিত পতনের মূল কারণ খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সেই সঙ্গে যেসব শেয়ারের অস্বাভাবিক বিক্রির চাপ দেখা যাচ্ছে, বাজার তদারকির মাধ্যমে সেসব শেয়ার চিহ্নিত করা হবে বলেও জানিয়েছে তারা।
দেশের পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক নিম্নমুখী প্রবণতার পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। গতকাল মঙ্গলবার এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে তাৎক্ষণিক কিছু কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। এ ছাড়া সভায় বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, বিএসইসির কমিশনার মু. মোহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর, ফারজানা লালারুখ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব দেলোয়ার হোসেন, পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের প্রতিনিধি ও বিএসইসির নির্বাহী পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন।
সভার সিদ্ধান্ত হয়, বিনিয়োগকারীদের জ্ঞান ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় টক শো ও বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি বিআইসিএম ও বিএএসএম পুঁজিবাজার-বিষয়ক শিক্ষণীয় ভিডিও তৈরি করবে। ফেসবুক ও ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে পুঁজিবাজার সম্পর্কে ইতিবাচক বার্তা প্রচার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সচেতন করা হবে।
প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন লাভজনক কোম্পানির শেয়ার অফলোড করা, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করা এবং টেক্সটাইল ও ওষুধ খাতের দেশী লাভজনক কোম্পানিগুলোর শেয়ার পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা হবে।
যেসব কোম্পানি এখনো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি, তাদের তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করার জন্য আকর্ষণীয় করছাড় দেওয়া হবে। পাশাপাশি ব্যাংকিং খাত থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের সুযোগ সীমিত করা এবং পুঁজিবাজারকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের প্রধান উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, পুঁজিবাজারের উন্নয়নের স্বার্থে দেশের আর্থিক খাতের অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো হবে। সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা হবে। এ ছাড়া আসন্ন জাতীয় বাজেটে বিনিয়োগকারীদের জন্য করছাড়ের সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হবে। এর মধ্যে লভ্যাংশ আয়ের ওপর করছাড় এবং পুঁজিবাজারের বিনিয়োগের ওপর বিশেষ করছাড়ের সুবিধা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।